Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিপিএ ৫ পেয়েও রাজমিস্ত্রির কাজ করছে তপন দাস

স্বপ্ন থাকলেও, পূরণের সামর্থ্য নেই

আশিকুর রহমান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ), উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০২০, ৪:৫৪ পিএম

তপন দাস এক উজ্জল প্রতিভার নাম। তপন দাসের ভূমিহীন বাবা হরেন দাস এক সময়ে ছিলেন মটর গাড়ি চালক। কিন্ত বয়সের ভার আর রোগাক্রান্ত হয়ে হারাতে বসেছেন দৃষ্টি শক্তি। ফলে এখন আর গাড়ি চালাতে পারেন না। মা সুমিত্রা দাস পরের বাসায় কাজ করেন। সাংসারিক এমন অভাবের মধ্যদিয়ে সারা বছর রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে চালিয়ে গেছে নিজের লেখাপড়া। চলতি বছরে সে কালীগঞ্জ সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুল থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধিন জিপিএ ৫ পেয়েছে। কিন্ত এখন কিভাবে আসবে কলেজের লেখাপড়ার খরচ সে চিন্তায় পড়েছে তপনের পরিবার। তারা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ফয়লা মাষ্টারপাড়ার মনো মোল্যার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করেন।
সরেজমিনে শনিবার দুপুরে তপন দাসের ভাড়া বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মাটির মেঝের ওপর টিনের ছাউনি ও বেড়ার দুটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়ায় বসবাস তাদের।
হতদরিদ্র মেধাবী তপন দাস জানায়, এতোদিন বাড়িতে থেকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছি কিছুদিনের মধ্যে হয়তো ভর্তি শুরু হবে। কাজ করে অল্প কিছু টাকা জোগাড় করেছি। বাকিটা কোথায় পাবো আর কিভাবেই বা দুরের কোন কলেজে ভর্তি হয়ে খরচ চালাবো এটা ভেবে কোন পথ পাচ্ছিনা।
মা সুমিত্রা দাস জানান, আমাদের নিজেদের কোন জায়গা জমি নেই। পরের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি। আমার অন্য ছেলেরাও দিনমজুর। তারাও পৃথক সংসার করছে। অভাবের সংসারে স্বামী কোন কাজ করতে পারেন না। আমিও অসুস্থ তবে বেঁচে থাকার তাগিদে এলাকার শ্যামল বিশ্বাসের বাসায় কাজ করি। ছোট ছেলে তপন দাস লেখাপড়া করে। সংসারের অভাবের তাগিদে এবং নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে তাকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করতে হয়। স্কুল বাড়ির কাছে হওয়ায় এতোদিন লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছে। এখন কারিগরি কলেজে ভর্তি হতে হলে শুনছি যশোর অথবা ঝিনাইদহে যেতে হবে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তিনি আরও বলেন, চেয়ে ছিলাম নিজেরা না খেয়ে থাকলেও ছোট ছেলেটাকে একটু লেখাপড়া শেখাবো। কিন্ত অভাবের সংসারে আমাদের কাছে এটা দুঃসাধ্য এক ব্যাপার হয়ে গেছে।

প্রতিবেশি রাজু আহম্মেদ জানান,তপন দাসের সাংসারিক অবস্থা বিবেচনা করলে কথাটা দাড়ায় এমন সাধ আছে কিন্ত সাধ্য নেই। শুধু লেখাপড়ার কথাই না তারা ঠিকমত খেতেও পায়না। তারপরও লেখাপড়ার প্রতি তপনের আগ্রহ ও ফলাফল সন্তোষজনক।
কালীগঞ্জ ফয়লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম মিঠু জানান, তপন দাসের পরিবার ভূমিহীন ও অভাবী। তপন দাস নিজে রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজ করেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ