পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নানা ধরনের সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে দেশে সুরক্ষা পণ্য পিপিই, মাস্ক, অক্সিমিটার, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, স্যানিটাইজার, ফেসশিল্ড, হ্যান্ড গ্লাভসের চাহিদা বেড়েছে। প্রাণঘাতি ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে মানুষ প্রতিদিনই বাসা-অফিস ও নিজের ব্যবহারের জন্য এসব সুরক্ষা পণ্য কিনছেন। তবে করোনা থেকে রক্ষা পেতে উদগ্রীব ক্রেতারা এসব পণ্যের কোনটা আসল কোনটা নকল যাচাই করতে পারছেন না। নকলটাই আসল ভেবে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই। কারণ নকল ও ভেজালসামগ্রী প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতারা ইতোমধ্যে পেশা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রির কৌশল রপ্ত করে ফেলেছে। রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে যত্রতত্র এসব নকল সামগ্রী বিক্রি করছে। কেউ কেউ রাস্তার পাশে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ ঝুড়িতে সার্জিক্যাল মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, ফেস-শিল্ড, সার্জিক্যাল ক্যাপ, পিপিই, সাধারণ মাস্ক বিক্রি করছেন। বিভিন্ন স্থানে রীতিমতো বাজার বসছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। মানহীন সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবহার করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনার শুরুর দিকে নকল পণ্যের রমরমা ব্যবসার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিøএইচও)। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, মুনাফালোভীদের এই অমানবিক তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে করোনা নিয়ে বিপদ আরও বাড়বে।
তবে শুধু রাজধানীই নয়; সারাদেশেই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে নকল ও মানহীন করোনা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে দেদার। করোনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশ চড়া। নকল ও ভেজাল সুরক্ষাসামগ্রীর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হলেও জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এসব পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইন্সট্রুম্যান্টস অ্যান্ড হসপিটাল ইকুইপম্যান্ট ডিলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা শাখার সভাপতি জাভেদ আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ওষুধ ও সার্জিক্যাল পণ্যের পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার মিটফোর্ড। সারাদেশে পণ্য সরবরাহ করা হয় এই বাজার থেকে। কিন্তু করোনা আসার পর থেকে মিটফোর্ড এলাকার ফুটপাত হয়ে গেছে মূল বাজার। অন্য পেশার লোকজন মানহীন পণ্য এনে মিটফোর্ড ও আশপাশে বাবুবাজার, নাজিরাবাজার এলাকার সড়কে বিক্রি করছে। অথচ রাজধানীর উত্তরার একজন গ্রাহক মিটফোর্ড এলাকায় এসে মানহীন নকল পণ্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নাম হচ্ছে মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীদের। অনেকবারই এ বিষয়ে প্রশসানকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ভেজাল ও নকল বিরোধী অভিযান চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
সূত্রমতে, করোনভাইরাসের মতো জীবাণু থেকে রক্ষার অন্যতম হাতিয়ার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, যা ব্যবহারে হাত জীবাণুমুক্ত রাখা যায়। প্রতিদিনই বাড়ছে এর চাহিদা। এই সুযোগে স্যানিটাইজার নকল করে বাজারজাত করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির নাম ব্যবহার করে এসব নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতসহ বিভিন্ন দোকানে। এসব পণ্য ব্যবহারের কারণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ তো দূরের কথা, উল্টো সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনার শুরু থেকে যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে কাজী ম্যানুফ্যাকচারের মালিক কাজী মুন্না নকল স্যানিটাইজারের ব্যবসা করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রায়েরবাগ এলাকার একটি ফ্ল্যাটের বেজমেন্টে এই কারখানার সন্ধান পায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে কাজী মুন্নাকে আটক করে র্যাব।
মো. ইসমাইল হোসেন ছিলেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার মাছ ব্যবসায়ী। ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় এখন তিনি মাস্কের ব্যবসা করেন। একটি অভিজাত শপিংমলের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাকিলেরও একই অবস্থা। তিনিও চীন থেকে এন-৯৫ মাস্ক এনে বিক্রি করছেন।
ইসমাইল পুরান ঢাকা থেকে এন-৯৫ মাস্ক পাইকারি কিনলেও শাকিল চীন থেকেই পণ্য আনেন। কথা বলে জানা গেলো, তাদের কারোরই এসব পণ্যের ব্যবসার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। অনুমোদন নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগেরও।
ব্যবসায়ী বনে যাওয়া শাকিল বলেন, আসল নকল আমি চিনি না। কিছু করে সংসার চলছে। ইসমাইল, শাকিলদের মত ব্যবসায়ীরা নকল (কপি) কেএন-৯৫, এন-৯৫ মাস্ক বিক্রি করায় চরম হুমকির মুখে পড়ছে জন-জীবন।
রাজধানীর মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়েই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, ফেসশিল্ডসহ নানা ধরণের সুরক্ষা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। তাৎক্ষণিকভাবে আসল ও নকলের পার্থক্য বোঝার কোনও উপায় নেই। প্রতিষ্ঠানের নাম, ব্যবহৃত উপাদান সবই উল্লেখ রয়েছে এসব মাস্ক ও স্যানিটাইজারের মোড়কে। পুরান ঢাকার অলিগলিতে তৈরি হচ্ছে নকল এসব পণ্য। আবার কেউ কেউ বিদেশ থেকে মানহীন পণ্য এনে অভিজাত ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত করছে।
নকল মাস্ক ও সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রির অপরাধে গত ২২ জুন ঢাকার মোস্তফা কামাল নামের এক খুচরা ব্যবসায়ীকে এক বছর কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত নিউমার্কেটের ৪টি দোকানকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে। রাজধানীর পান্থপথে এএসএম ট্রেডিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ নকল গ্লাভস ও গাউন জব্দ করেছে র্যাব। এ সময় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় মালিক এ এস এম মুসাকে আটক এবং গোডাউন সিলগালা করে।
বাংলামটরের জহুরা টাওয়ার থেকে অ্যাডভান্স বায়ো কেমিক্যাল (এবিসি) নামে একটি প্রতিষ্ঠান এন-৯৫ বলে নকল মাস্ক কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছিল। এছাড়া সেখানে এন-৯৫ ছাপ দেয়া অনেক মাস্কের খালি প্যাকেটও পাওয়া যায়। নকল মাস্কগুলো এসব ব্যাগে ভরে বিক্রি করতো। তারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চীন থেকে নিম্নমানের মাস্ক এনে এন-৯৫ বলে বিক্রি করে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছে। প্রত্যেকটি পণ্য ১০-১৫ গুণ দামে তারা বিক্রি করত। পণ্য আমদানির কোন বৈধ কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি।
এদিকে নকল মাস্ক ও সুরক্ষাসামগ্রী বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত আমদানিকারকরা। তারা বলেন, কোন মেডিকেল পণ্য আমদানি করতে হলে প্রথমেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সিই সার্টিফিকেট, এফডিএ সার্টিফিকেট, আইএসও সনদ, আমদানিকারক যার কাছ থেকে পণ্য কিনেছেন সেই রফতানিকারককে বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে কিনা সেই অথরাইজেশনসহ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে আমদানির অনুমতি পত্রের জন্য আবেদন করতে হয়। এসব কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে অনুমোদন পেলে এলসি করে চীন থেকে পণ্য দেশে আসতে প্রায় একমাস লাগে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সূত্র মতে, এ পর্যন্ত ৫টি প্রতিষ্ঠানকে কেএন-৯৫ মাস্কের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাকি সব নকল।
শাকিল ও ইসমাইলের মত কারও নেই আমদানির সার্টিফিকেট, এমনকি তারা জানেন না কিভাবে এলসি করতে হয় কিংবা এই জরুরি সামগ্রীগুলো আমদানি করতে সরকারের কোন দফতরের অনুমোদন নিতে হয়। তারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কমদামের পণ্য কিনে এয়ারপোর্টের অসাধু সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের ওয়্যারহাউজে দিয়ে দেন। এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর ঢাকায় নিজেদের গোডাউনে রেখে অধিক দামে বিক্রি করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মধ্যে অনেকেই সার্জিক্যাল মাস্ক আমদানির অনুমোদন নিলেও এনেছেন নকল এন-৯৫ মাস্ক। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিক্রি করছেন এসব নকল মাস্ক। রুমঝুম ইন্টারন্যাশনালের মালিক সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, দেশে ৫০-৬০ টাকায় নকল এমসিকন কেএন-৯৫ মাস্ক বিক্রি হচ্ছে। কোনভাবেই বৈধ চ্যানেলে মাল এনে এত কাম দামে মাস্ক বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই আর মাস্ক আমদানি করবো না।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, অনেকেই বিদেশ থেকে মানহীন পণ্য এনে অভিজাত ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজারজাত করছে। এভাবে যারা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে আমাদের সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের কিছু জায়গা থেকে উৎপাদক ও বিক্রেতাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ফুটপাতে ময়লা-আবর্জনা পরিবেশে সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি করা মানেই হচ্ছে সেসব পণ্যে আর সুরক্ষা রইল না। এসব সামগ্রী যারা ব্যবহার করছেন, তারা ধরে নিচ্ছেন সুরক্ষায় আছেন। অর্থাৎ অজান্তেই তারা নিজের ক্ষতি করছেন। জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ও করোনা চিকিৎসার সমন্বয়ক ডা. মোক্তাদির ভুঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, দেখতে পাচ্ছি অনেকে আক্রান্ত হয়ে আমাদের কাছে আসছেন। আবার অনেকে উপসর্গ নিয়ে আসছেন। এসব রোগী মাস্কসহ সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করেছেন। তারপরও তারা আক্রান্ত হয়েছেন। এখানেই উদ্বেগের বিষয়। নিম্নমানের নকল মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করার কারণেই তারা বিপদে পড়ছেন। তিনি বলেন, যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সুরক্ষাসামগ্রী যদি নকল আর ভেজাল হয়, তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।