Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানবিক বিপর্যয়ে শিক্ষিত তরুণরা

করোনায় টিউশনি বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সের ছাত্র মো. মামুন যাত্রাবাড়িতে থাকেন। কুতুবখালি, শনিরআখড়া, ওয়ারিতে তিনটি টিউশনি পড়িয়ে লেখাপাড়া ও থাকা খাওয়ার খরচ যোগাতেন। মাঝে মাঝে গরীব পিতা-মাতাকেও কিছু সহায়তা করতেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সেই টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে। অয়োন নামের এক ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি কোটিং সেন্টারের শিক্ষকতা এবং একটি টিউশনি করেন। এ টাকায় তার লেখাপড়া ও থাকা খাওয়ার খরচ চলতো। কিন্তু করোনার জন্য কোচিং এবং টিউশনি দুটিই বন্ধ।
নিজের দুরাবস্থার চিত্র তুলে ধরে অয়োন বলছেন, তিনমাস পড়ানো বন্ধ ছিল। সাধারণ ছুটিতে তো সবকিছুই বন্ধ ছিল, যাতায়াত করাও সম্ভব ছিল না। বাড়ি গিয়েছিলাম। এখন ফিরে এসে মেস বাড়িতে উঠেছি। কি খাব এবং কি করবো বুঝতে পারছি না। গরীব পিতামাতা সামান্য সহায়তাও করতে পারছে না। এ অবস্থায় নিদারুণ কষ্টে রয়েছি।
লেখাপড়া শেষ করে জহির রাজধানী ঢাকায় এসে মেসে উঠেছেন চাকরির খোঁজে। টিউশনি করেন এবং চাকরির পরীক্ষা দেন। করোনার কারণে চাকরির পরীক্ষা বন্ধ। টিউশনিও নেই। সরকারি চাকরির বয়স শেষ হওয়ার পথে। এ অবস্থান নিজের জীবন অতি অপ্রয়োজনীয় মনে করে মাঝে মাঝে আত্মহত্যার চিন্তা করেন। জহির জানালেন, আমি তিনটা টিউশনি করতাম। কিন্তু করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকেই সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আগে টিউশনি করেই ঢাকায় থাকার খরচ চলতো। এখন সেজন্য বাড়ি থেকে টাকা আনতে হয়। বাবা-মা জমি বন্ধক রেখে ভবিষ্যতে ছেলে চাকরি করবে সে আশায় টাকা পাঠান। অথচ চাকরির পরীক্ষা বন্ধ। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টিউশনি করাতে পারবো বলে মনে হয় না। সব মিলিয়ে একটা মানসিক চাপের মধ্যে আছি।
মো. মামুন, অয়োন, জহিরের মতো হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ও সদ্য পাস করা যুবক-যুবতি চাকরির পরীক্ষা দেয়ার জন্য রাজধানীর মেসে বসবাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানোই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। টিউশনির টাকায় তারা চলেন। এর মাধ্যমে থাকা-খাওয়ার খরচের পাশাপাশি পড়াশোনার খরচও উঠে আসে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর তাদের এই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। তারা জানান, করোনার মধ্যে আয় রোজগার না থাকায় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যদিয়ে জীবন যাপন করছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। এর মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। প্রায় ২৭ লাখ কর্মক্ষম নারী পুরুষ বেকার। চাহিদা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র তৈরি না হওয়ায় প্রতিবছর এই বেকারের তালিকা বাড়ছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এই বেকারদেরও বড় একটি অংশ আয়-রোজগার টিউশনির ওপর নির্ভরশীল। তবে কতো শিক্ষিত যুবক-যুবতি এবং ছাত্রছাত্রী টিউশনি করেন এবং কতজন এই আয়ের ওপর নির্ভরশীল তার কোন তথ্য-উপাত্ত নেই।
অনেকে যেমন পড়াশোনার পাশাপাশি খরচ চালাতে টিউশনি করেন, অনেকে আবার প্রত্যাশিত চাকরি না পেয়ে টিউশনিকে পুরোপুরি পেশা হিসাবে নিয়েছেন। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় শিক্ষিত এই তরুণ-তরুণীরা ‘স্যার’ ও ‘ম্যাম’ নামে পরিচিত।
বাংলাদেশের সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস নিতে শুরু করেছে। কিন্তু স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গৃহশিক্ষককে আসতে বলতে পারছেন না অভিভাবকরা।
মালিবাগে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. রনজন বলেন, টিউশনিই ছিল আমার আয়ের উৎস। মেসে থাকতাম। করোনায় সবকিছু বন্ধ হওয়ার পর অন্যান্যদের সহায়তা করা হলেও আমাদের কেউ কিছু সহায়তা করেনি। অথচ টিউশনি বন্ধ। এ অবস্থার নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছি। খোঁজ নিয়ে দেখেন এই ঢাকা শহরে আমার মতো হাজার হাজার মানুষ টিউশনি বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ