Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিট সঙ্কট নেই

সরকারের হাতে এক লাখের বেশি কিট আছে : স্বাস্থ্য মহাপরিচালক ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

হঠাৎই দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার কিটের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে কিটের অভাবে নারায়ণগঞ্জ ও নোয়াখালীর দুটি ল্যাবে কাজ বন্ধ রাখা হয়। অনেক জেলায় নমুনা পরীক্ষা চলছে ধীর গতিতে। এতে বাড়ছিলো জনদুর্ভোগ। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, গত দু’দিন কিটের স্বল্পতা থাকলেও এখন তা নেই। ইতোমধ্যে সরকারের হাতে এক লাখের বেশি কিট পৌঁছেছে।

এখন থেকে সরবরাহে কোন ঘটতি হবে না। তারা বলেন, পিসিআর কিটের সহজলভ্যতা ও দামের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। একটি পিসিআর কিটের সব ধরনের রিএজেন্টসহ আমদানি মূল্য প্রায় ২৮ থেকে ৩০ ডলার। অর্থাৎ পর্যাপ্ত কিট আমাদনি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। অর্থবছরের শেষ হওয়ায় এই খাতে যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সরবরাহকারী দেশগুলোতে সারাবিশ্বের চাহিদা থাকায় সেখানে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে আমাদের পরিকল্পনার দূর্বলতা। তাদের মতে, দেশে কোভিড সংক্রমণ দেরিতে শুরু হয়েছে। তাছাড়া খুব কম সংখ্যক ল্যাবে পিসিআর মেশিনে নিয়মিত কাজ হতো। ফলে অনেকেরই এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা ছিল না। আবার শুরুর দিকে রোগী অনেক কম থাকলেও হঠাৎ করেই রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এত সব ধরনের প্রস্তুতিতেই ঘাটতি দেখা দেয়। যার প্রভাব পড়ে নমুনা পরীক্ষার কিটে। তবে সিন্ডিকেটের কারণেই কিটের সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে দাবি খোদ সরকারদলীয় এমপি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর। দেশের স্বাস্থ্যবিভাগ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি বলেও জানান তিনি।

সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিনিয়ত করোনা টেস্টের সক্ষমতা বাড়িয়ে চলছে সরকার। ইতোমধ্যে সারাদেশে চালু করা হয়েছে ৬২টি পরীক্ষাগার। তবে কিটের অভাবে কয়েকদিন ধরে বন্ধ কয়েকটি পিসিআর ল্যাবের করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম। চাহিদা অনুযায়ী কিট না পাওয়ায় চট্টগ্রাম, ফেনী, ল²ীপুর, বরিশাল, রংপুর, কুষ্টিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলার পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রমেও ধীরগতি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দিলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিট দিয়ে দেশে শুরু হয় করোনার নমুনা পরীক্ষা। সংস্থাটি বিভিন্ন সময় বেশকিছু কিট উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। কিট উপহার পাওয়া গেছে চীনসহ বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা থেকেও। এর বাইরে একটি প্রতিষ্ঠান অধিদফতরকে কিট সরবরাহ করে আসছিল। এর মধ্যে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় অধিদফতর। নতুন কিছু প্রতিষ্ঠানকে কিট আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সময়মতো কিট আনতে না পারায় অনেকের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। আবার অনেকের কিট আসলেও যথাসময়ে বিমানবন্দর থেকে খালাশ করতে না পারায় সঙ্কট ঘনীভূত হয়।

জানা গেছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুইটি প্রতিষ্ঠান যে কিট এনেছে, সেগুলো এতদিন ধরে দেশে ব্যবহৃত কিটের চেয়ে কিছুটা আলাদা। সেগুলোতে এক্সট্রাকশনের সময় লাগে আগের কিটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের কিট দিয়ে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি ও শিশু হাসপাতালসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ল্যাব এই কিটে নমুনা পরীক্ষা করাতে অনীহা প্রকাশ করে।

জানা গেছে, যে সব ল্যাবে কিট একটু বেশি আছে, তাদের কাছ থেকে নিয়ে দেয়া হচ্ছে কিট শূন্য হয়ে পড়া ল্যাবগুলোতে! এর মধ্যে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবেও গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি। কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ বেড হাসপাতালের ল্যাবেও করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে কিট জটিলতায়।

অধিদফতরের সূত্র বলছে, জুনের শুরুতে কিট সঙ্কট চরমে ওঠে। শুরু থেকে কিট সরবরাহ করে আসা প্রতিষ্ঠানটি ৬ জুন কিছু কিট সরবরাহ করে। পরে দুই কিস্তিতে আরও ৭০ হাজার কিট সরবরাহ করে। তবে রফতানিকারক দেশগুলো থেকেও সরবরাহে জটিলতা দেখা দেয়। সারা বিশ্বেই কিটের চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠনগুলো চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের কাছে এই মুহূর্তে এক লাখ দুই হাজার কিট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৫০ হাজার কিট আইইডিসিআর’র মাধ্যমে বিভিন্ন ল্যাবে বিতরণ করা হচ্ছে। একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে ৪২ হাজার কিট প্রদান করেছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানিকৃত প্রায় ৫০ হাজার কিটের ১০ হাজার ইতোমধ্যে বিমানবন্দর থেকে খালাশ হয়েছে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, দু’একদিনের মধ্যে ৬৮ হাজার কিট দেবে। সেটি দু’এক দিনে এসে পৌঁছাবে। এত দিন যারা কিট সরবরাহ করছিল, তারাও সরবরাহ করবে। ফ্লাইট নিয়ে তাদের কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে তাদের কিটও চলে আসবে। এর সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিট চলে এলে সমস্যা হবে না আশা করি। তিনি বলেন, আরও এক ধরনের কিট এসেছে বিমানবন্দরে। এই কিট আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, শিশু হাসপাতাল ও আই দেশি ব্যবহার করতে পারবে। কাজেই আশা করছি কিট নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা এই সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রফেসর আজাদ বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত আমরা এভাবেই চালাব। এরপরে লম্বা সময়ের জন্য প্রকিউরমেন্ট করা হবে সরকারের পদ্ধতি অনুযায়ী। এ ক্ষেত্রে কিট সরবরাহের জন্য আরও একাধিক কোম্পানি আসবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কিট সঙ্কটের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। কারণ আমরা অনেক সময় পেয়েছি আমদানি ও পরিকল্পনার। তারপরও এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও কেন্দ্রীয় ওষুধাগারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।



 

Show all comments
  • Sahin Sahin ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
    এই জদি আমাদের দেশের অবস্থা হয়।তাহলে পরিস্থিতি কি আল্লাহ পাক ই ভালো জানে।আল্লাহ তুমি আমদের পতি তোমার রহমত নাজিল কর।
    Total Reply(0) Reply
  • Mirza Tohura Jalil ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    করোনা পজিটিভ মানে মৃত্যু নয়, নেগেটিভ মানে জীবন নয়! জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। সুতরাং হতাশা নয়, ভরসা রাখুন আল্লাহর উপর।
    Total Reply(0) Reply
  • Zahedul Islam Zahed ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    এই দেশে কিট দিয়েও দুর্নীতি। মাফচাই,আর লাগবে না ভাই,কিট।আল্লাহর উয়াস্তে তো ভালো হয় যা ।মিডিয়া যদি এক হয়,দেশ টা পালটানো সম্ভব
    Total Reply(0) Reply
  • Aslam Kc ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    আল্লাহ্ আপনি সারা দেশ সহ নারায়ণগঞ্জবাসীদের রক্ষা করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shehab Uddin Shohel ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    ডা.জাফর উল্লাহ সাহেবের কিটের অনুমতি চাই
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ জানে আলম ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশের সাস্থ বিভাগের অাবস্তা দেখলে বুঝা যায় বাংলাদেশ কত উপরে ছলেগেছে। ইউরুপ আমেরিকার দরকার বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়া
    Total Reply(0) Reply
  • Ataul Karim ২৫ জুন, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
    পরীক্ষা কীট সরবরাহ না থাকলে পরীক্ষা হবে না ও সংক্রমণের শনাক্ত সংখা কমে যাবে! লাভ হবে মৃত‍্যু হার কমবে ও ইমেজ বাড়বে!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৫ জুন, ২০২০, ৯:২০ পিএম says : 0
    স্বাস্থ মন্ত্রীর অপসারণ চেয়ে দাবী উঠেছে এটা যুক্তিগত দাবী বলে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনেকরি। বহুদিন ধরে পত্রিকায় পড়ছি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কিটের অভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা স্থগিত। এখন সরকার বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এখানে বক্তব্য রেখেছে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সহযোগিতা থাকলে কেন সরবরাহকারিরা সঠিক কিট এবং সঠিক সময়ে আনতে পারছেনা এটা মানা যায়না। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার যে স্বাস্থা দপ্তরের অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেট ভরার জন্যই সরবরাহকারিরা এধরনের কাজ করেছে। আর এইসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্যে দেশের কোটে কোটি লোক আজ করোনায় আক্রান্ত। এখন এর দায় দায়িত্ব কে নিবে এটাই এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট জনগণের প্রশ্ন......... আল্লাহ্‌ সরকারি আমলা কামলাদেরকে (বাঙালী) উচিৎ শিক্ষা দিয়ে এসব কুকর্ম করা থেকে বিরত থাকার ব্যাবস্থা করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ