Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উদ্বিগ্ন চাকরিপ্রার্থীরা

শেষ হচ্ছে বয়স

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি। দেশে দেশে দেখা দিচ্ছে অর্থনৈতিক মন্দা। করোনা সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে কর্মসংস্থানে। বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী। কিন্তু গত কয়েকমাসে তৈরি হওয়া মন্দাতেই কর্মসংস্থান হারিয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। বেতন ও কর্মী ছাটাই চলছে বহুজাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হোটেল-রেস্তোরাতেও। বন্ধ রয়েছে নতুন চাকরিতে প্রবেশের বিজ্ঞপ্তি। এতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী। বিশেষ করে যেসব চাকরিপ্রার্থীর চাকরির বয়সসীমা এবছরই শেষ হতে যাচ্ছে তারা ভুগছেন হতাশায়।

করোনাকালীন সময়ের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন চাকরি প্রত্যাশীরা। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদের কিছুই করার নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাহী ক্ষমতাবলে কোন নির্দেশ দেন তাহলে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। ব্যাংকগুলো বলছে, আগে থেকেই খেলাপি ঋণের চাপ, তারল্য সঙ্কট, তার ওপর ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতির কারণে করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাবে তাদের ব্যবসা খাদের কিনারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, করোনাভাইরাসের ক্ষতি তো সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপরেই পড়েছে। আগের তুলনায় ব্যবসা অনেক কমে গেছে।

করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া মন্দায় ব্যাংকিং, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন কাটছাটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে। আর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই নতুন কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে। নতুন নিয়োগ নেই সরকারি চাকরিতেও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি থেকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কমতে শুরু করে। বর্তমানে ৬০-৭০ ভাগ বিজ্ঞপ্তি কমে গেছে। যেগুলো হচ্ছে তা অভিজ্ঞদের জন্য। ফলে হতাশ ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তারা বলছেন, করোনার প্রভাবে কর্মসংস্থানের যে অবস্থা তাতে আমাদের জন্য হয়তো খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন কর্মী নিয়োগ দেয়া তো বন্ধ করেছেই সাথে চলছে বেতন কমিয়ে দেয়া ও ছাঁটাই। এই অবস্থায় যাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষের দিকে তারা কেথায় যাবে? বিদ্যমান পরিস্থিতিকে তারা করোনার চেয়েও ভয়াবহ বলে মনে করছেন।

চাকরিপ্রার্থী সত্য প্রিয় সরকার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের লাখ লাখ চাকরি প্রত্যাশী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা হারাচ্ছে, যেটা তাদের কাছে করোনার চেয়ে ভয়াবহ। অন্যদিকে ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন ছাঁটাই ও নিয়োগ প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ। এমতাবস্থায় বয়সসীমা না বাড়ালে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের উচিত ভুক্তভোগীদের কথা ভেবে যৌক্তিকতারভিত্তিতে বয়সসীমা দ্রুত বাড়ানো। ফিরোজ খান বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবস্থা তো খুব খারাপ, কি যে হবে বুঝতে পারছি না।
শহীদুল ইসলাম বলেন, সরকার নির্বাচনের আগে বলেছিল নির্বাচিত হলে বয়সসীমা যৌক্তিকভাবে বাড়াবে। এখন বলছে বাড়ানো সম্ভব নয়। বুঝলাম বয়স বাড়ানো সম্ভন নয়, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে যাদের ক্ষতি হচ্ছে তাদের কি হবে? অনেকে আছে যাদের এই বছরই চাকরির বয়স শেষ হবে। তাদের নিয়ে সরকার কিছু বলছে না! কায়সার বলেন, দেশের এই দুঃসময়ে দেশের চাকরিজীবীদের ছাঁটাই না করে, যেসব ভারতীয় ও বিদেশি এই দেশে চাকরি করে তাদেরকে আগে ছাঁটাই করা উচিত।

এসএম ইসমাঈল মুসা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে চাকরিপ্রার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার কারণে তারা চরম হতাশ। সরকারের উচিত মহামারীর ভয়াবহতা বিবেচনা করে চাকরিপ্রার্থীদের বয়স বৃদ্ধি করা। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, মহামারির কারণে আর্থিক মন্দা বহাল থাকবে আরো কিছুদিন। যার প্রভাব ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পড়বে চাকরির বাজারেও।

এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার গোটা বিশ্বে আগামী তিন মাসের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে। বর্তমানে মোট কর্মশক্তির ৮০ ভাগের পেশা কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই ক্ষতির শিকার বড় একটি অংশ তরুণ-তরুণীরা। আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেছেন, জরুরি ভিত্তিতে তরুণদের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু করা না গেলে এই ক্ষতির জের টানতে হতে পারে পরবর্তী কয়েক দশক ধরে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ (২০১৭) জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। যুব বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে জুন নাগাদ সেটি কয়েকগুণে বেড়ে গেছে।
মানবসম্পদ কর্মকর্তাদের একটি অ্যাসোসিয়েশন, গ্রিন এইচআর প্রফেশনাল বাংলাদেশের সভাপতি রওশন আলী বুলবুল বলছেন, নতুন যারা পড়াশোনা শেষ করে বের হলো, তারা একটা বিপদে পড়বেই। কারণ বাংলাদেশের সব ধরণের কোম্পানিই এখন সঙ্কটে আছে। যারা বর্তমানে চাকরিতে আছে, তাদের অনেকে চাকরিহীন হয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে এসে চাকরির লড়াই করতে হবে নতুন আসা ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, চাকরিতে প্রবেশের যে বয়সসীমা আছে ৩০ বছর সে অনুযায়ী নিয়োগ হবে। করোনার কারণে এটি বৃদ্ধি করার এখতিয়ার আমাদের নেই। এটা করতে গেলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্বাহী ক্ষমতা আছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে যাদের সরকারি চাকরির বয়স পার হয়েছে, তাদের বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সপ্তাহে না হলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ প্রস্তাব পাঠানো হবে। করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে যারা চাকরির বয়স হারিয়েছেন তাদেরকে জন্য কী করা যায়, আমরা সেই চিন্তা করছি।
গতকাল প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা ২৬ মার্চের আগে আবেদন করেছেন তাদের পরীক্ষা যত দেরিতেই হোক না কেন সমস্যা নেই। দুই বছর পরে পরীক্ষা হলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই। একটা শ্রেণি আছে যারা এরমধ্যে চাকরির বয়স হারিয়ে ফেলেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করব। এই সঙ্কটের মধ্যে সবাইকেই তো কিছু কিছু প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যারা চাকরির বয়স হারিয়ে ফেলেছেন তাদের জন্য একটা কিছু করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করছি। কারোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গেলে আগামী নভেম্বরে বিসিএসের পরীক্ষাগুলো নেয়া সম্ভব হবে। স্থগিত হওয়া সরকারি চাকরির অন্য পরীক্ষাগুলো কবে নেয়া হবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।



 

Show all comments
  • Sultan Mahmud ২৫ জুন, ২০২০, ১:৫৭ পিএম says : 0
    চাকরিতে বয়সসীমা বাড়ানো দরকার নেই।৩০ বছরই বহাল থাকুক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ