Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

ভালো নেই উপকূলীয় খামারিরা

অলস আর বেকার হয়ে পড়ছে, গুটিয়ে নিচ্ছেন খামার

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ জুন, ২০২০, ৩:৪৩ পিএম

"কপালে মোর সুখ নাই, সুখের লইগ্গা ঋন আর ধার করে ৪ লক্ষ টাকা খরচ কইররা ( করে) মুরগীর ফার্ম করছি। সব শেষ, লচ আর লচ। সুখের দেখা পাইলামনা মুই" এভাবেই কথা বলছিল কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা গ্রামের সিকদার বাড়ির মো. তাইয়্যেব সিকদার। করোনার প্রভাবে কলাপাড়া উপজেলার অধিকাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় তিন শতাধিক খামার গড়ে ওঠলেও অধিকাংশ খামার এখন বন্ধ হওয়ার পথে। কিছু খামার বন্ধ করে দিয়েছেন খামার মালিকরা। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ছে খামারিরা ও কর্মচারীরা। সরেজমিনে লক্ষ করা গেছে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় গ্রামঞ্জে শিক্ষিত বেকার যুবকরা ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের আশায় গড়ে তুলেছিল কোয়েল, কবুতর, পোল্ট্রিফার্মসহ দেশি মুরগির ফার্ম। করোনার প্রভাবে সব হারিয়ে নিঃস্ব এখন তারা। বেশিরভাগ খামারিরা ঋনের জালে আটকা পড়েছে। মানবেতর জিবন যাপন করছে। শেড গুলো খালি পড়ে আছে। নেই কিচিরমিচির শব্দ। শুনসান নিরবতা। পটুয়াখালী জেলার একমাত্র হ্যাচারি, কোয়েল ও দেশি মুরগির খামারি মাহবুবুল আলম নাঈম জানান, কলাপাড়া উপজেলার সকল স্থানে কোয়েল পাখির ডিম সরবরাহ করতেন, তার প্রতিদিন খামারে উৎপাদন হতো ১০০০ থেকে ১২০০ ডিম। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সরকারি স্কুল কলেজ ছুটি ঘোষণা করার দিন থেকে হঠাৎ করে ডিমের বাজার চাহিদা একদম শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, পনেরশো পাখির প্রতিদিনের খাবার খরচ প্রায় 2000 টাকা। প্রতিদিনের ডিম বিক্রি করতে না পেরে ধার-দেনা করে পাখির খাবার কিনতে কিনতে আর কুলিয়ে উঠতে না পেরে অর্ধেকেরও কম মূল্যে ডিম পাড়া পাখিগুলি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। এখন মুলধন হারিয়ে বেকার হয়ে পরেছেন। এখন তার ভাবনা ব্যাংক ও এনজিওর কিস্তি দিবেন কিভাবে?
তরুণ উদ্যোক্তা নাঈম আরো জানান স্বপ্ন ভেঙে শেষ হ্যাসারী, কোয়েল খামার, মুরগির খামার মিলিয়ে লোকশানের পরিমান ৩লক্ষ টাকার উপরে। সরকারের বিশেষ প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ না পেলে ঘুরে দাঁড়ানোর আর কোন উপায় নেই।
টিয়াখালির খামারি আহসান হাবিব জানান,দেশি মুরগির বাচ্চা তুলেছিলাম করোনার ১৫ দিন আগে। খাবারের দাম বৃদ্ধির কারনে ঠিক ভাবে খাবার খাওয়াতে পারিনি, ডিমের জন্য মুরগি করার চিন্তা থাকলেও দুই মাস বয়সেই বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। বাজারে ক্রেতা কম থাকায় পানির দারে বিক্রি করে লোকসানের পরিমান প্রায় এক লক্ষ টাকা, তা ছাড়া হাসের ডিমের বাজার খারাপ থাকায় দিন দিন খামারের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে বেশি দিন আর টিকে থাকতে পারব না।
"তামান্না মুরগি খামার" -এর স্বত্বাধিকারী উম্মেহানি তামান্না জানান,যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে লোন তুলে মুরগির খামার শুরু করে করোনার কারনে আজ সর্বশান্ত। ব্যংকের একটি কিস্তিও পরিশোধ না করার আগেই করোনা গ্রাস করে আমার কঠিন কস্টে গড়ে তোলা খামার।
নারী খামারী আরো বলেন, মাংসের জন্য করা মুরগি বাজারের চাহিদা না থাকায় খুব আল্প দামে পাইকারি দোকানে বিক্রি করে দিয়েছি সকল মুরগি।
খান এগ্রো এ্যান্ড ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. ইকবাল খান বলেন, ৪০০০ হাজর মুরগি ছিল আমার খামারে। অনেক স্বপ্ন ছিল এই খামার নিয়ে কিন্তু করোনার কারনে সব শেষ। এখন সব থেকে বড় চিন্তা ব্যাংক খুললে কি ভাবে কিস্তি চালামু।
দিন যত যাচ্চে অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে, খাবারের দাম বেড়ে যাচ্চে আর ডিমের দাম কমে যাচ্চে।
তাই আমাদের দাবি সরকার তো অনেক খাতেই বরাদ্ধ দেয় তার ধারাবাহিতায় খামার খাতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে কিছু বাচ্চা ও খাবার প্রদান করলে আমরা আবার খামার চালিয়ে যেতে পারতাম। কলাপাড়া উপজেলার ফিড ব্যবসায়ী ও বাচ্চা সরবরাহকারী মো. মনির আকন বলেন, করোনার কাররে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে ব্যবসা নেই। বাকি টাকা ওঠেনা। সব মিলিয়ে মন্দ যাচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ