পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কথায় কথায় মামলা। পান থেকে চুন খসলেই চলছে মামলা দায়ের। যেন সকল সঙ্কটের সমাধান (?) নিহিত এই মামলায়। যখন যার তার বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে ঠুকে দেয়া হচ্ছে মামলা। আসামিও করা যাচ্ছে ইচ্ছেমতো। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই মামলার তদন্তে নেমে নাস্তানাবুদ।
মামলাগুলো বিচারে গিয়ে আদালতকে করছে ভারাক্রান্ত। বাড়াচ্ছে হয়রানি ও জট। সরকারও মাত্রাতিরিক্ত মামলার বিচার-ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে। আদালতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বছর বছর নিয়োগ দিচ্ছে বিচারক এবং সহায়ক জনবল। তবুও থামছে মামলার স্রোত। উদ্বিগ্ন বিশ্লেষকদের তাই প্রশ্ন, সৃষ্ট জটের নিরসন কোথায়?
সমাধান অন্বেষণের ভুল পথ : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য একজন বিচারক রয়েছেন। তার দেয়া হিসেব মতে, আপিল বিভাগে বিচারপতি রয়েছেন ৭ জন। মামলা রয়েছে ২২ হাজার ৫৯৬টি। হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি রয়েছেন ৯৭ জন। মামলা রয়েছে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৮শ’। বিচারিক আদালতে বিচারক রয়েছেন ১ হাজার ৯৬৭ জন। বিপরীতে বিচার্য মামলা রয়েছে ৩১ লাখ ২৭ হাজার ২৪৩টি।
জটের জন্য বিচারক স্বল্পতাকে দায়ী করা হয়। সমাধানও খোঁজা হয় আদালত সংখ্যা বৃদ্ধি, বিচারক এবং জনবল নিয়োগের মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আদালতের সংখ্যা যতই বাড়ছে; সমানভাবে বাড়ছে মামলার সংখ্যাও। এভাবে জট নিরসন সম্ভব নয় বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. মাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, মামলার উৎসমূলে হাত দিতে হবে। মানুষ কেন মামলা করে তা আগে দেখতে হবে। মামলা জটের গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানুষের অসহিষ্ণুতা। মামলা দায়েরের সহজলভ্যতা।
মামলা বাড়ে-বাড়ে না রাজস্ব : সংবিধান প্রদত্ত অধিকার বলে মানুষ আইনের আশ্রয় নেয়। ফৌজদারি আইনের ১৫৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন দেশের নাগরিক। আর এ মামলার বিচারিক প্রতিকার দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নাগরিকের এ অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের রয়েছে বিশাল স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনা। সরকারকে বহন করতে হয় বিশাল ব্যয়। পক্ষান্তরে সরকার রাজস্ব লাভ করছে নামমাত্র।
ঢাকা বার সূত্র জানায়, একটি ফৌজদারি মামলা বাবদ সরকার কোর্ট ফি’ সূত্রে রাজস্ব পায় মাত্র ১০ টাকা। মামলার আবেদনটি যদি কার্টিজ পেপারে করা হয় তাহলে পৃষ্ঠাপ্রতি বাবদ পায় ৫ টাকা। সাদা কাগজে আর্জি লেখা হলে প্রতি পৃষ্ঠায় যুক্ত করতে হয় ৩ টাকার কোর্ট ফি। যদি ৭ পৃষ্ঠার একটি আর্জি দাখিল করা হয় সরকার ৩০ টাকার মতো রাজস্ব লাভ করে। জাস্টিস অডিট রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, আর্থিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১৭ ধরনের মামলায় বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে সরকার রাজস্ব পায়। ‘কোর্ট ফি অ্যাক্ট, ১৮৭০ (সংশোধনী ২০১০) এবং ২০১০-এর এসআরও (নং-৩২৬) নম্বর আইন/২০১০ অনুসারে রাজস্ব পায় সরকার। মামলায় দুই ধরনের কোর্ট ফি’র প্রচলন রয়েছে। মূল্যমান অনুসারে কোর্ট ফি এবং নির্ধারিত কোর্ট ফি।
স্ট্যাম্পের মাধ্যমে কিংবা স্ট্যাম্প না থাকলে নগদ বা রশিদের মাধ্যমেও কোর্ট ফি নেয়ার বিধান রয়েছে। মানহানি মামলার মূল্যমানের ওপর বা দাবির মূল্যমানের ওপর কোর্ট ফি আদায় করা হয়। তায়দাদের ওপর ২ শতাংশ এবং উক্ত ২ শতাংশের ওপর ১৫% ভ্যাট। অর্থাৎ মোট ৪ শতাংশের ওপর ১৫ শতাংশ কোর্ট ফি পরিশোধ করতে হয় মানহানির মামলাকারীকে। অর্থঋণ মোকদ্দমার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন কোর্ট ফি ৩শ’ টাকায় এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা হারে রাজস্ব পাওয়া যায় । দেওয়ানি মোকদ্দমার সর্বনিম্ন কোর্ট ফি ৩শ’ টাকা। সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠার মামলায় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত পায় সরকার। পরবর্তী ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ১ শতাংশ এবং পরবর্তী ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ হারে কোর্ট ফি পায় সরকার। কিন্তু মামলাকারী ৯৫ ভাগ অর্থই ব্যয় করে পরিচালনার পেছনে।
কমতে পারে মামলা জট : ‘জাস্টিস অডিট রিপোর্ট-২০১৯’র তথ্যমতে, ৬৮ শতাংশ মানুষ আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার পাবেন বলে বিশ্বাস করেন। বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল হওয়া সত্তে¡ও তাদের মধ্যে ৮৭ ভাগ বিচারপ্রার্থী স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী মাত্র ১৩ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থায় দ্বারস্থ হয়। তাতেই মামলা জট।
অডিট রিপোর্ট মতে, এভাবে জট বাড়তে থাকলে ২০২২ সালে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত, দায়রা আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগে মামলার হার দাঁড়াবে যথাক্রমে ৭২, ৮০ এবং ৯০ শতাংশে। বিচারক নিয়োগ, আদালত বৃদ্ধি পাশাপাশি ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি-(এডিআর)’র প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তাতেও লাগাম পড়ছে না মামলার সংখ্যায়।
তবে কমছে মানহানি মামলার সংখ্যা। ঢাকা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান জানান, যখনই মানহানির ক্ষতিপূরণ দাবির অঙ্কের সঙ্গে ২ শতাংশ কোর্ট ফি পরিশোধ বাধ্যতামূলক করা হলো তখন থেকে কমছে মানহানি মামলা। বিপরীতে সরকারের রাজস্বও বেড়েছে। তিনি আরো বলেন, এভাবে ফৌজদারি মামলার সঙ্গে যদি অর্থনৈতিক শর্ত জুড়ে দেয়া যায় তাতে কমবে মামলার জট। বাড়বে রাজস্ব।
প্রয়োজন সদিচ্ছা ও আইন সংশোধন : ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, মামলা রুজুর সময় প্রাথমিক বাছাই হওয়া প্রয়োজন। সত্যতা যাচাই করতে পারে পুলিশই। এ বিষয়ে হাইকোর্টের অবজারভেশন রয়েছে। আমলযোগ্য ধারায় মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন তথা প্রাথমিক অনুসন্ধান করতে হবে। যেটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ক্ষেত্রে রয়েছে।
কিন্তু পুলিশ এটি প্রতিপালন করে না। যেমন- একটি অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২শ’ জনকে আসামি করা হলো। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে মামলা গ্রহণকারী বাদীকে এ প্রশ্ন করবেন যে, ঘটনাস্থলে ওই ২শ’ ব্যক্তিই উপস্থিত ছিলেন কি না। এ প্রশ্নের উত্তর পেতে পুলিশকে ঘটনাস্থলে যেতে হবে। এতে করে কথায় কথায় গায়েবি মামলা দায়েরের সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দরকার আইনের সংশোধন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।