পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বছরের প্রথম দিন বই বিতরণ, নির্দিষ্ট দিনে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা, ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল, জেএসসি, জেডিসি, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাসহ শিক্ষার সার্বিক কার্যক্রম চলছিল রুটিন মেনেই। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমও চলতো একইভাবে। উচ্চশিক্ষায় কমে এসেছিল সেশনজট। রীতিতে পরিণত হওয়া সেই রুটিনকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে প্রাণঘাতি নোভেল করোনাভাইরাস। নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলেও বন্ধ রয়েছে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি, পিছিয়ে গেছে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা। স্কুল-কলেজের প্রথম সাময়িক, অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফাইনালসহ সব ধরণের পরীক্ষা রয়েছে স্থগিত। ইতোমধ্যে ঘোষিত ছুটি অনুযায়ি প্রায় পৌনে ৫ মাসের ছুটির কারণে। এতে শিক্ষা কার্যক্রমে সৃষ্টি হতে যাচ্ছে বড় ধরণের জট। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার কোন সুযোগ নেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত ১৮ মার্চ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। দফায় দফায় সেটি বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনো ক্রমোবর্ধমান। ফলে এই সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
প্রাথমিক-মাধ্যমিকের সিলেবাসে কাটছাট: প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাস সংসদ টেলিভিশন ও অনলাইনে হচ্ছে কিন্তু সেটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ এখনো ইন্টারনেট সেবার বাইরে থাকায় এ থেকে বঞ্চিত। এসব শিক্ষার্থীকে বঞ্চিত রেখে পরীক্ষা গ্রহণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে সেটিও ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। যদিও ইতোমধ্যে করোনার কারণে প্রাথমিক স্তরের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার সম্ভাবনাও খুব কম। একই কারণে মাধ্যমিকের অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা নিতে পারেনি স্কুলগুলো। এছাড়া সেপ্টেম্বর নাগাদ ক্লাস-পরীক্ষা শুরু না পারে সেক্ষেত্রে সিলেবাসের বিরাট অংশই রয়ে যাবে অপঠিত। ফলে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার জন্য কাটছাট করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণ করার চিন্তা করছে দায়িত্বশীল দপ্তরগুলো।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ভিত্তিতেই মূল্যায়নের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, মাধ্যমিকে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এখন সেপ্টেম্বরেও যদি স্কুল খুলে তখন হয়তো বাকি ৫০ শতাংশ সিলেবাসের ভিত্তিতে বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে মূল্যায়ন করা হতে পারে। এগুলো নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত টেলিভিশনে চলা ক্লাসের ওপরই তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন। ৯০ শতাংশের ওপর শিক্ষার্থী টিভির ক্লাসের ওপর যুক্ত আছে। মূল্যায়নের বিষয়ে তাঁরা কয়েকটি বিকল্প চিন্তা করে রেখেছেন। তবে সেটি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির স্বাভাবিক হওয়ার ওপর।
অনিশ্চিত একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ও এইচএসসি পরীক্ষা: করোনাপরিস্থিতির মধ্যে এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রায় এক মাস পর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি, ক্লাস শুরু নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কোনভাবেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ও এইচএসসি, আলিম এবং সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হবে না। ফল প্রকাশের পর প্রথম দিকে অনলাইনে একাদশ শ্রেণির ভর্তি সম্পন্ন করার চিন্তা করা হলেও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানান, একজন শিক্ষার্থী অনলাইনে ভর্তি সম্পন্ন করতে চাইলেও তাকে কমপক্ষে ৪বার দোকানে যেতে হবে। যেখানে একাধিক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা করোনার ঝুঁকির মধ্যে পরতে পারে। অন্যদিকে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষাও একই কারণে নেয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিপুল পরিমান শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, এর সাথে থাকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকরা। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর হারুন-আর-রশিদ বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা যাচ্ছে না। সেপ্টেম্বরের দিকে যেহেতু (একাদশ শ্রেণির) ক্লাস শুরুর চিন্তা, তাই এখনই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করাটা রিস্ক হয়ে যায়। কারণ অনলাইনে কলেজে ভর্তির আবেদন করা গেলেও শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের দোকানে যায়, কলেজে যায়। আমাদের যে অভিজ্ঞতা, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার অভিভাবক বোর্ডেই আসেন। হয়ত আবেদন করতে পারেননি বা আবেদন করার সময় ভুল হয়েছে, সেটা ঠিক করতে দৌড়ে আমাদের কাছে আসেন। এসব বিচার-বিশ্লেষণ করে বলছি সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হবে না। তবে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি এই করোনাপরিস্থিতির মধ্যে ভর্তির জন্য ঘর থেকে বের হয় তাহলে তারা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এজন্য আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি যে, পরিস্থিতি আরও কিছুটা উন্নতি হলে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন খোলার সময় হবে তখন আমরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম শুরু করবো। তিনি বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়া এমনভাবে শুরু করা হবে যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সাথে সাথে অন্যান্য শ্রেণির মতো একাদশ শ্রেণির ক্লাসও আমরা শুরু করতে পারি।
এদিকে গত এপ্রিল মাসে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও স্থগিত রয়েছে এই পাবলিক পরীক্ষা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই পরীক্ষাও গ্রহণ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, একটা পাবলিক পরীক্ষায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেবে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন পরিবার, শিক্ষকরা। এসব মিলে আরও কয়েক লাখ। আর করোনার এই সংকটে এতো লক্ষ মানুষকে নিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করে এতো স্বাস্থ্য ঝুঁকি আমরা নিতে পারি না। আবার অধিকাংশদের গণপরিবহন ব্যবহার করে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে হবে, তাহলে তাদের বিপদ আরও বেড়ে যাবে। এই মুহূর্তে পরীক্ষাটি নেয়ার ব্যাপারে আমরা কিছু করতে পারছি না। যখন পরিবেশ আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন অবশ্যই পরীক্ষা নেব।
এগিয়ে বেসরকারি, সেশনজটে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: করোনার বন্ধে বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। পরীক্ষা ও ভাইভা গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। ১ জুলাই থেকে অনলাইনেই নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মাত্র ৩টিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে। বাকী সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে নিশ্চিতভাবেই সেশনজটে পড়তে যাচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।