Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

চট্টগ্রামে নমুনাজট বাড়ছেই

করোনা আক্রান্ত ৬ হাজার ছাড়ালো

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২১ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

ফিলিপাইনের নাগরিক রুয়েল ইসত্রেলা কাতান (৫০) করোনা পরীক্ষার জন্য নিজের নমুনা দিয়ে ১৬ দিন পরে মারা গেছেন। তবে তার নমুনার রিপোর্ট এখনো আসেনি। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর তার মতো অনেকে নমুনা জমা দিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তাদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানা যায়নি। মৃত্যুর পর স্বজনদের হাতে যাচ্ছে করোনা পজেটিভ ফলাফল। ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ঈসার মৃত্যুর চারদিন পর জানা যায় তিনি করোনা পজেটিভ ছিলেন।

চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ বিপজ্জনক হয়ে উঠলেও নমুনা পরীক্ষায় গতি আসেনি। আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার পার হয়ে গেছে। অথচ তিনমাসেও পর্যাপ্ত নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেনি স্বাস্থ্যবিভাগ। ল্যাবগুলোতে নমুনাজটে হাঁসফাঁস অবস্থা। রিপোর্ট পেতে এখন তিন সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে। এতো দিন পরে আসা রিপোর্টের ফলাফল নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রামে এমনিতেই চিকিৎসায় নাজুক অবস্থা চলছে তার ওপর টেস্ট নিয়ে এমন বিশৃঙ্খলায় জনমনে উদ্বেগ-শঙ্কা বেড়েই চলছে। উপসর্গ নিয়ে টেস্টের আশায় মানুষ অসহায়ের মতো ঘুরছে। নমুনা দেওয়ার পরও তারা ফলাফল পাচ্ছে না। কোভিড-১৯ এর সব উপসর্গ থাকলেও পজেটিভ রিপোর্ট না থাকায় করোনা হাসপাতালে তাদের ঠাঁই হচ্ছে না। আবার অন্য হাসপাতালেও তাদের ভর্তি নিচ্ছে না।

গত ২৪ ঘণ্টায় এক বিদেশিসহ অন্তত পাঁচজন মারা গেছেন উপসর্গ নিয়ে। এক সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিভাগে ৩১০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের একটি প্রকল্প বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ছড়িয়ে পড়া ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে বেশি বেশি টেস্ট জরুরি। অথচ এখন চলছে তার উল্টো। টেস্টের রিপোর্ট পেতেই রোগী মারা যাচ্ছে। আর করোনা নেগেটিভ না পজেটিভ জানা না যাওয়ায় তাদের সংস্পর্শে আসা চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রামে ল্যাবগুলোত কয়েক হাজার মানুষের নমুনা জমে আছে। এক সপ্তাহ জমে থাকার পর তিন হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয় গত ১০ জুন। ১০ দিন পর গতকাল শনিবার সেখান থেকে ১৩০৬টি নমুনার ফলাফল পাওয়া গেছে। গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে প্রথম করোনা টেস্ট শুরু হয় ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে। ল্যাবের প্রধান প্রফেসর ডা. শাকিল আহমেদ খান ইনকিলাবকে বলেন, ল্যাবে প্রতিদিন ৩শ’ নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। আর জমা হচ্ছে তার কয়েকগুণ। জমা আছে দুই হাজারের বেশি নমুনা। গতকাল সেখানে ১৬ জুনে আসা নমুনা টেস্ট করা হচ্ছিল। ডিপ ফ্রিজে রাখলে নমুনা দুই সপ্তাহ অক্ষত থাকে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শামীম হাসান বলেন, ল্যাবের ক্ষমতা সর্বোচ্চ ২৬০টি হলেও দিনে ৪শ’র বেশি নমুনা জমা পড়ছে। এতে জট বেড়েই যাচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহে বেশ কয়েকটি বুথ চালু হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ বেড়ে গেছে। তবে সে অনুপাতে ল্যাবগুলোর সক্ষমতা বাড়েনি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, এখন চট্টগ্রামে ৬টি ল্যাবে গড়ে ৮শ’ নমুনা টেস্ট হচ্ছে। এরপরও জট আছে। কিট সরবরাহ বাড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে দিনে ৫শ’ নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। আর তখন জট কমে আসবে বলেও জানান তিনি। এদিকে চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ৩২১ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল নতুন করে ১৮৭ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। ঢাকায় পাঠানো তিন হাজার নমুনার মধ্যে ১৩০৬টি পরীক্ষা করে আরও ২২২ জনের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৩৯ জন। হাসপাতাল ও বাসায় থেকে সুস্থ হয়েছেন ২৮৪১ জন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ