প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিবদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুল্লাহ আল মোহসীন এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা সচিব সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জ্বর নিয়ে এখনো ভর্তি আছেন। তাকে দুইবার প্লাজমা দেয়া হয়েছে। আর বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব।

প্রশাসন ক্যাডারে এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে দুইশ’ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। বেশির ভাগই মাঠ প্রশাসনের। শনাক্তের অর্ধেকের মতো সুস্থ হওয়ার পথে আছেন। সাবেক ও কর্মরত মিলিয়ে মারা গেছেন ১০ কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন আট থেকে ১০জন। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭০ জন কর্মকর্তা। সুস্থ হওয়া ২৪ সরকারি কর্মকর্তা প্লাজমা দিতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর বলেন, ৭ জুন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছি। বড় কোনো জটিলতা নেই। চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি অনলাইনে বিভিন্ন কাজও করতে পারছেন।

হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেয়াদের মধ্যে রয়েছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন্নাহার বেগম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক যুগ্ম সচিব জোবায়ের রহমান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান, যুগ্ম সচিব কেয়া খান, টাঙ্গাইলের সহকারী কমিশনার তারিন মাসরুর, সুনামগঞ্জের সহকারী কমিশনার হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সরকারি যানবাহন অধিদফতরের ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান প্রমুখ। তাদের মধ্যে মাহমুদ হাসানের নিউমনিয়ার সমস্যা আছে। বিএএসএর সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসনে কর্মরতরা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। এ সময়ে সারা দেশে বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে যারা কাজ করছেন তাদের ঝুঁকি বেশি। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে। জনপ্রশাসন থেকে তাদের তালিকা করা হচ্ছে এবং সব ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিএএসএর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিটিভির মহাপরিচালক এস এম হারুন অর রশীদ পরিবারের তিনজন সদস্যসহ করোনামুক্ত হয়েছেন। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বিশ্বব্যাংকের কনসালট্যান্ট যুগ্ম সচিব শরীফ মো. মাসুদ, আইসিটি অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুনিমা হাফিজ, হবিগঞ্জের ডিসি কামরুল হাসান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব আবু রায়হান মিঞা, চাঁদপুরের সহকারী কমিশনার মারুফা সুলতানা খান হীরামনি, হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের সহকারী কমিশনার মতিউর রহমান, চুয়াডাঙ্গার সহকারী কমিশনার খাইরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের ঘিওরের ইউএনও আইরিন আক্তার।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে ইশরাত, ঢাকার সাভারের ইউএনও পারভেজুর রহমান, নরসিংদীর সহকারী কমিশনার শাখাওয়া জামিল সৈকত ও কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার কামরুল হাসান সোহেল। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জের সহকারী কমিশনার তানিয়া তাবাসুম, চুয়াডাঙ্গার সহকারী কমিশনার শিবানী সরকার, মুন্সীগঞ্জের সহকারী কমিশনার মেজবাউল সাবেরিন। চাঁদপুরের হবিগঞ্জের ইউএনও বৈশাখী বড়–য়া, ঢাকার কেরানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার সানজিদা পারভীন ও ল²ীপুরের সহকারী কমিশনার মকবুল হোসেন, সহকারী কমিশনার রাজিব হোসেন। হোম আইসোলেশনে থাকাদের মধ্যে সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মুনিম হাসান, জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব তাহমিনা বেগম, গাজীপুর সদরের সহকারী কমিশনার সামশুল আরিফিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জিনাত জাহান; সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম, সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত টাঙ্গাইলের নাগপুরের সহকারী কমিশনার তারিন মাসরুর। করোনা থেকে সুস্থ হওয়া কর্মকর্তারা সবাই প্লাজমা দিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন।

গত ৬ এপ্রিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক উপসচিব জালাল সাইফুর রহমান। সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে সচিব বজলুল করিম চৌধুরী, ইপিসিএস কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, ইসহাক ভ‚ঁইয়া, অতিরিক্ত সচিব তৌফিকুল আলম, যুগ্ম সচিব শামসুল কিবরিয়া চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, সরওয়ারী আলম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক যুগ্ম সচিব ফখরুল কবীর এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গৌতম আইচ সরকার।