পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এই সরকারের আমলে দুর্নীতি সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, এই মহামারীর সময়েও অবিশ্বাস্য গতিতে চলছে দুর্নীতির এক্সপ্রেস ট্রেন! এই দ্রুত গতির ট্রেন থামানোর বদলে নানাভাবে প্রশ্রয় দিয়ে আসা হচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে রক্ষার চেষ্টায় অনিয়ম বাড়ছে। দুর্নীতিবাজরা যেন দুর্নীতির উল্লাসের নৃত্য করছে এবং এই করোনাকালে বাধাহীন দুর্নীতির উৎসব চলছে বিভিন্ন সেক্টরে। সরকারি প্রকল্পে অনিয়মের খবর প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছে কোন কোন কর্তৃপক্ষ, গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তবে তা খুব কমই আলোর মুখ দেখে। শাস্তির বদলে অদৃশ্য কারণে রেহাই পায় দুর্নীতিবাজরা। তারপর বীরদর্পে তারা অব্যাহত রাখে দুর্নীতি।
শনিবার (২০ জুন) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গত পরশু বলেছেন, “প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সহসাই নির্মূল হচ্ছে না, করোনা পরিস্থিতি তিন বছর বা তার চেয়েও বেশি স্থায়ী হবে।”সরকারী হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে সিএমএইচে দুই-তিন সপ্তাহ করোনা চিকিৎসা শেষে ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল দেশে আতংক ছড়ানোর এই তত্ব কোথায় পেলেন ? একজন চিকিৎসক এবং সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে জনগণের মধ্যে ভীতি ছড়ানোর অধিকার তার নেই। করোনা চিকিৎসায় সুচিকিৎসা, মানুষকে সচেতন করা ও প্রকৃত সত্য তুলে ধরার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের। কিন্তু মহামারীর সময় দুনিয়া জুড়ে সবাই যেখানে আজকের পরিস্থিতি আজকেই সামাল দেয়া নিয়ে ব্যস্ত সেখানে ডিজি আছেন দুই তিন বছরের চিন্তায়! এমনকি সবচাইতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ডাক্তার, সাংবাদিক, পুলিশসহ যারা করোনা মোকাবেলার সাথে যুক্ত আছেন তাদের জন্যও স্বাস্থ্য অধিদফতর বিশেষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
রিজভী বলেন, অসুস্থ মানুষের এখন করোনা টেস্টের জন্যে রাত কাটে রাস্তায়! সরকারের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রধান আমলা হচ্ছেন ডিজি, দেশের সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কথা নাই বা বললাম, বর্তমানে করোনার যে ঝড় বইছে তাতে বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার রুগ্নদশাটাই এখন সবার চোখের ওপর ভাসছে।
তিনি বলেন, কেবল যে নিয়োগ ও পদায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে তাই নয়, কেনাকাটা থেকে শুরু করে বদলি পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর-মন্ত্রণালয়ের সব ক্ষেত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সুরক্ষায় কেনা আসল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ না করে নকল সরবরাহ করা, এমনকি সরবরাহকারী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া থেকে বোঝা যায় জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকার সমর্থক কত কালোবিড়াল বসে আছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কাদের জন্য এ জিজ্ঞাসা এখন সকলের। দুদক মূলতঃ বর্তমান একচক্ষু সরকারের প্রতিহিংসার পূরণের যন্ত্র।দেশের স্বাস্থ্য খাত কতটা নড়বড়ে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পর তা উন্মোচিত হয়েছে। স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাবে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এমন বাস্তবতায় বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে পিপিই, ভেন্টিলেটর, মাস্ক, গগলসসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এসব স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় ভয়াবহ দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে একটি জাতীয় দৈনিক। সেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় যে খরচ ধরা হয়েছে, তা বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে দুই থেকে চার গুণ বেশি। চিকিৎসা সরঞ্জামে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তার চেয়ে তুলনামূলক বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জরুরি সহায়তা’ শিরোনামের প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস কেনা হবে। প্রতিটি সেফটি গগলসের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতিটি সেফটি গগলস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়। এই প্রকল্পের আওতায় মোট এক লাখ সাত হাজার ৬০০ পিপিই কেনা হবে। যার প্রতিটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৭০০ টাকা। পিপিই কেনায় মোট খরচ হবে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মেনে ওষুধ অধিদপ্তরের সব শর্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন কম্পানির তৈরি ভালো মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকায়। এই প্রকল্পের আওতায় ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট জুতা কেনা হবে। প্রতিটি জুতার খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এই খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। দেশে বর্তমান বাজারে বুট জুতা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় মিলছে। চলমান করোনা সংকটের মধ্যে যেখানে সব কিছু স্থবির, সেখানে এই প্রকল্পে ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। মাত্র ৩০টা অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরির খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা-যা অস্বাভাবিক। ৮০টা সেমিনার ও কনফারেন্স করে খরচ করা হবে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা-এই সংকটকালে যা বিকৃত বিলাসিতার নামান্তর। সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে ওয়েবসাইট উন্নয়ন খাতে। মাত্র চারটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খরচ হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি ডাটাবেইস তৈরিতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৩০টি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জন্য খরচ হবে আরো ৪৫ কোটি টাকা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই লুটের খবর শীর্ষ ব্যক্তিরা জানলেও এখনও পর্যন্ত কোন কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার মূল চেতনাই হচ্ছে বহুমাত্রিক দুর্নীতি ও লুটপাট। এতে প্রমান হয় করোনার চেয়ে দুর্নীতি এখন পরাক্রমশালী। দুর্নীতিবাজরা নিজদেরকে রাস্ট্রের চেয়েও প্রভাবশালী মনে করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।