পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা সংক্রমণ ও সামাজিক ট্রান্সমিশন ঠেকাতে গত ৩০ মে থেকে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু-কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড, পিপিই, গাউন ব্যবহার বেড়েছে। ৫ জুন পাবলিক প্লেস বা জনসমাগম হয় এমন জায়গায় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মাস্ক পরা। জীবন বাঁচাতে আপাতত এর বিকল্পও নেই। এসব সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করে একটা বড় অংশ রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের সামনে ও রাস্তা-ঘাটে উন্মুক্ত জায়গায় ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব সামগ্রীর মাধ্যমে পথচারিরাও সংক্রমিত হতে পারেন। রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকা মাস্ক ও গ্লাভস স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। কারণ করোনা ভাইরাস দুই তিন দিন বেঁচে থাকে। এতে যে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন। এছাড়া বাসায় গৃহস্থালী বর্জ্যরে সঙ্গেও এসব স্পর্শকাতর বর্জ্য ফেলে দেয়া হচ্ছে। এসব বর্জ্য থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা সুরক্ষাসামগ্রীর বর্জ্যওে যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে এবং পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ব্যবহৃত মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হেড কভার, সু-কভার, গগলস, ফেইস শিল্ড, সিরিঞ্জ, সূচ, রক্ত, পুঁজযুক্ত তুলা, টিউমার, ব্যান্ডেজ গজ, ওষুধের বোতল-শিশি, স্যালাইন ব্যাগসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য খোলা জায়গায় ফেললে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটবে। হাসপাতাল-বাসাবাড়ি থেকে এগুলো সংগ্রহ করে ডাম্পিং এর ব্যবস্থা করা উচিত।
করোনার সুরক্ষাসামগ্রী মূলত একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক পণ্য। এসব পণ্য পঁচে না এবং ভূমিতে-পানিতে সাড়ে চারশ’ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তাই মাস্ক বা প্লাস্টিকের তৈরি অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী ভূমি, নর্দমা, নদী ও সমুদ্র দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে ওঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও খুবই নাজুক। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫৭০৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা বর্জ্য উৎপাদন হার প্রতিদিন বেড প্রতি শূণ্য দশমিক ৯৪ কেজি। এছাড়া সারাদেশে রয়েছে প্রায় ১০ হাজার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত এপ্রিল মাসে মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্লাস্টিক বোতল ও পলিথিনসহ অন্তত সাড়ে ১৬ হাজার টন চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হয়েছে। আরেক হিসেবে দেখা যায় গত মে মাসে শুধু ঢাকাতেই ৩ হাজার টনেরও বেশি করোনা সম্পর্কিত বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে।
এক মাসে উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে গবেষণা করেছে পরিবেশবাদী বেসরকারি সংস্থা এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অগানাইজেশন-এসডো। তারা বলছে, ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার টন। যার মধ্যে শুধু হ্যান্ড গ্লাভসই ছিল ৫ হাজার ৮৭৭ টন। গুরুত্ব না দিলে মাটি ও পানির মাধ্যমে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে খাদ্যচক্রে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ বর্জ্যরে সঙ্গে না মিশিয়ে আলাদা ব্যাগে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, এভাবে যত্রতত্র ফেলা নিরাপত্তা সামগ্রীর মাধ্যমে মাটি ও পানিতে ছড়াচ্ছে জীবাণু। যা খাদ্যচক্রে প্রবেশ করে ঘটাতে পারে রোগের ভয়াবহ বিস্তার। তাই জনগণকে এসব আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নগর প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। এসডো মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেছেন, এসব জিনিসগুলো যদি পরিবেশে যায় তাহলে মাটি পানিতেও জীবাণু মিশে যাবে। এতে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
করোনা সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ৯ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ (স্বাস্থ্য সেবা) সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দুই সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতর মহাপরিচালককে নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়, করোনা সংক্রমণের পর থেকে দেশে পায় ১৪ হাজার ৫০০ টন বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে এক হাজার ৩১৪ টন হ্যান্ড গ্লাভস বর্জ্য ও ৪৪৭ টন সার্জিক্যাল মাস্কের বর্জ্য তৈরি হয়েছে। এ ধরনের বর্জ্যরে সঠিক ও যথাযথ ব্যবস্থাপনা না থাকার ফলে পরিবেশের ক্ষতিসাধন ও পরিচ্ছন্ন কর্মীসহ জনগণ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এ অবস্থায় কার্যকর পদপেক্ষ গ্রহণ করুন। না হলে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এ নোটিশের পরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক হাসপাতালের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৮ সালে আইন পাস করা হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন না বিভিন্ন হাসপাতালের বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০০৩ সালে চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়। এতবছর পরেও সেই আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
প্রিজম বাংলাদেশ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসপাতাল থেকে মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে। তবে বাসাবাড়ির ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য সংগ্রহে পৃথক ব্যবস্থাপনা এখনো নেই। ফলে গৃহস্থালি আবর্জনার সঙ্গে মিশে এ বর্জ্যগুলো চলে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের ভাগাড়ে।
প্রিজম বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী পরিচালক খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগরে তাদের ১০০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করছেন। ১০টি গাড়িতে করে মেডিকেল বর্জ্যগুলো সংগ্রহ করে তা মাতুয়াইলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। করোনার আগের মেডিকেল বর্জ্য আর এখনকার মেডিকেল বর্জ্যরে মধ্যে অনেক পার্থক্য। আগের মেডিকেল বর্জ্যে সংক্রামক ব্যধি ছড়ানোর তেমন ঝুঁকি ছিল না। আর এখনকার প্রতিটা মেডিকেল বর্জ্যরে মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি, দু-একটি হাসপাতাল ছাড়া কেউই নিয়ম মেনে মেডিকেল বর্জ্যগুলো অটোক্লেভ মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে রাখে না। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী গৃহস্থালী বর্জ্যের সঙ্গে ফেলে দেয়া। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়বে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। আলাদা ব্যাগে করে যদি এসব বর্জ্য সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দেয়া হয়, আর তা যদি তারা কোন নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেন, তবে আমরা তা সংগ্রহ করে নিতে পারি।
জানতে চাইলে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আইন থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। করোনা বর্জ্য এবং হাসপাতালের সব ধরনের বর্জ্যগুলোকে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ডিসপোজ করার জন্য প্রাইভেট-পাবলিকের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা গেড়ে তোলা দরকার। এই বর্জ্যগুলো থেকে বিপজ্জনক রোগের জীবাণু ছড়ায়। মেডিক্যাল বর্জ্যে ওষুধের কেমিক্যালগুলো ধীরে ধীরে মাটির সঙ্গে মিশে পানিতে প্রবাহিত হয়। ক্রমাগতভাবে এটি জৈবখাদ্য চক্রের মাধ্যমে মানুষের দেহে ফিরে আসে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি করে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।