Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে স্ত্রী-শাশুড়িকে

সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০২ এএম

অগ্নিদগ্ধ হয়ে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর দৈনিক যুগান্তরের অপরাধ বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে পুলিশ। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে গুলশান বিভাগ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ইতিমধ্যে সাংবাদিক নান্নুর বাড়ির ভিডিও ফুটেজ জব্দসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটনের পর সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানিয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। কারণ ঘটনার রাতে ওই বাসায় সাংবাদিক নান্নু ছাড়াও ছিলেন স্ত্রী পল্লবী ও শাশুড়ি। পুলিশ সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।

তদন্ত কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আফতাব নগরে নিজ ফ্ল্যাটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নান্নুর মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের তিনটি সংস্থা ১৭ জুন ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ ও আলামত (ক্রাইম সিন) সংগ্রহ করে। একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ। আগুনের সূত্রপাতে গ্যাসের লাইনের কোনো দায় ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। তাদেরও পৃথক টিম ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। অন্যদিকে সাংবাদিক নান্নুর অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে অগ্নিকান্ড পরবর্তী মুহূর্তের অনেক ঘটনা দেখা গেছে। যার নিয়ে তদন্ত কমিটি কাজ করছে।

বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, সাংবাদিক নান্নুর মৃত্যু নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। সেটা উদঘাটনই কমিটির প্রধান লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ফ্ল্যাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে পুলিশ। নান্নুর স্ত্রীর কাছ থেকে ফ্ল্যাটের চাবি নিয়ে মঙ্গলবার সরকারের তিন সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেছেন। এদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিআইডির ক্রাইম সিন বিভাগ সেখান থেকে বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, গত ১২ জুন রাতে অগ্নিকান্ডের সময়ের ওই অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, অগ্নিকান্ডে সাংবাদিক নান্নু দগ্ধ হওয়ার পর তিনি নিজেই শরীরের আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ওই অবস্থায় তাকে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে ছাদে গিয়ে পানির পাইপ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এরপর নান্নুকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামতে দেখা গেছে। ১০ তলা বাড়ির নিচ তলায় অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে তিনি চেয়ারে ১০ মিনিটের মত বসে ছিলেন। ওই সময় ১০ তলার ১০/বি ফ্ল্যাটের মালিক তার গাড়ি বের করে নান্নুকে নিয়ে যান হাসপাতালে।

পুলিশের তদন্ত কমিটির প্রধান ও ডিএমপির গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ফ্ল্যাটটি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। তদন্তের স্বার্থে ফায়ার সার্ভিস, তিতাস ও সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট পরিদর্শন করছেন।

পুলিশের তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাংবাদিক নান্নু দগ্ধ অবস্থায় ভবনের ছাদে যান, পাইপ নিয়ে আবার বাসায় আসেন। এরপর নিচে নামেন। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী ফ্ল্যাট মালিকের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। এসব ঘটনার মধ্যে সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী কিংবা শাশুড়িকে দেখা যায়নি। নান্নুকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়ার কমপক্ষে ২৫ মিনিট পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নান্নুর স্ত্রীকে দেখা যায়। স্বামী অগ্নিদগ্ধ হবার ঘটনায় স্ত্রীর ভূমিকা কী ছিল, ওই রাতে আসলে আর কী কী ঘটেছিল তা জানতে সাংবাদিক নান্নুর স্ত্রী ও শাশুড়িকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

উল্লেখ্য, আফতাবনগরের জহিরুল ইসলাম সিটির ৩ নম্বর সড়কের বি ব্লকের৪৪/৪৬ নম্বর বাসার ১০ তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন সাংবাদিক নান্নু। গত ১২ জুন ভোর পৌনে ৪টার দিকে সেখানে রহস্যজনক আগুনে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন। পরে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ১৩ জুন সকাল ৮টা ২০ মিনিটে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। এর আগে মাত্র ছয় মাস আগে গত ২ জানুয়ারি ওই একই বাসায় বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে তাদের একমাত্র সন্তান মিউজিক ডাইরেক্টর স্বপ্নীল আহমেদ পিয়াস (২৪) প্রাণ হারান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্ত্রী-শাশুড়ি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ