Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুল বার্তা

প্রাথমিক মাধ্যমিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২২ সালের আগে অনলাইনেই ক্লাস হবে : ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৯ জুন, ২০২০, ১২:০৩ এএম

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়েছে সরকার। বন্ধের কারণে যেনো শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে না পড়ে এজন্য প্রাথমিকের ক্লাস হচ্ছে সংসদ টেলিভিশনে, মাধ্যমিক, কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে চালিয়ে যাচ্ছে পাঠদান। ভর্তি, পরীক্ষাসহ সার্বিক কার্যক্রমই অনলাইনে করতে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অথচ দেশের যেকোন সঙ্কটে যাদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা সেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে পিছিয়ে। এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করেছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। বাকী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতো দিনেও প্রস্তুতিই নিতে পারেনি। দীর্ঘ এই ছুটিতে অন্তত; এক বছরের সেশনজটের মুখোমুখি হবেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বহির্বিশ্বও দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে পাচ্ছে ভুল বার্তা।

প্রযুক্তির বিপ্লবের ফলে সবকিছুই এখন অনলাইনের প্রতি ঝুকছে। সকল কাজেই বাড়ছে প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা। ইউনিয়ন পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন ও মোবাইল ইন্টারনেটের কল্যাণে ঘরেই বসেই অনলাইন ব্যবহার করে সচল থমকে যাওয়া পৃথিবী। তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিষ্ক্রিয়তায় হতাশ শিক্ষবিদরা।
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, বিশ্ব এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই ট্রেন্ড ফলো করে নেতৃত্ব দেয়ার কথা। কিন্তু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এসব বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে। আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল, সময় পেয়েছে অনেক। যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইচ্ছা করে শতভাগ না হলেও ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অনলাইনের আওতায় আনতে পারবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন পারবে না সে প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।

জানা যায়, করোনার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত; শীর্ষ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে ২০২০ সালে তো নয়ই, ২০২১ সালেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করবে না। ২০২২ সালে সবকিছু খুলে দেয়ার চিন্তা করছে তারা। এর আগে পুরোটা সময়ই তাদের ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা, ভাইভাসহ শিক্ষার যাবতীয় কার্যক্রম চলবে অনলাইনে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই অনলাইনকেই শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশে প্রস্তুতি না থাকলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সচল রেখে শিক্ষা কার্যক্রম। পাঠদানের পাশাপাশি পরীক্ষা, ভাইভাও নিতে হবে অনলাইনে। ১ জুলাই থেকে নতুন সেমিস্টারে ভর্তির প্রস্তুতিও নিচ্ছে তারা।

এর ঠিক উল্টো দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় এই প্লাটফর্মে যুক্তই হয়নি।

গ্রীণ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক লায়লা ফেরদৌস বলেন, বিশ্বের ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, তারা সবসময়ের মতো দূর শিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আমরা স্মার্টফোনটি শুধু সামাজিক যোগাযোগ হিসেবে ব্যবহার না করে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করতে পারি। দূরদুরান্তে বসেও স্মার্টফোন ব্যবহার করে সব বিষয়ের ক্লাস করা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে চালু রেখেছে। ২০২২ সালের আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে না। কিন্তু একারণে তাদের এক দিনের জন্যও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হয়নি। আমাদের এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি এই ট্রেন্ড ফলো করতে না পারে তাহলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাবে। বহির্বিশ্ব আমাদের শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ভুল ম্যাসেজ পাবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে তারা ইন্টারনেট ব্যবহার জানে না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয় না। অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যাবে এবং জব মার্কেটে তারা মূল্যায়িত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ি, প্রায় ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন আছে। ৫৫ শতাংশের ল্যাপটপ আছে। অপরদিকে সব শিক্ষকের ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, অনলাইন ক্লাস শুরু করা যায়। এখানে সদিচ্ছাই প্রধান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পারলে সরকারি কেন পারবে না?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেন, অনলাইন ক্লাস কীভাবে নেয়া যায়, সেই নীতি তৈরির জন্য একটি কমিটি কাজ করছে। এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তবে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ কম। মহামারী কালে কে কোন অবস্থায় আছে আমরা জানি না। মহামারী প্রতিরোধ এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ভিসি প্রফেসর ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের যে আর্থসামাজিক অবস্থা এতে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। এই মুহুর্তে অনলাইনে ক্লাস শুরু করলে শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য তৈরি হবে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধনী-গরিব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। তাদের অনেকেরই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ ও সামর্থ্য নেই। যেটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা কম। এ বিষয়টাও বিবেচনায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, করোনাকালের এ পরিস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষতি পোষাতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে যার মতো অনলাইন ক্লাস শুরুর চেষ্টা করছে। এটা চলতে থাকবে। এ ছাড়া বিকল্প ভাবনা আছে। তবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।#



 

Show all comments
  • শিহাব উদ্দিন সরকার ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    অনলাইন ক্লাস খুবি ভাল কথা,একটি কার্যকর উদ্যোগ তবে অনেক শিক্ষার্থী এমন অাছে যাদের স্মার্ট ফোন থাকা সত্বেও ডাটা (MB) না থাকার কারণে তারা ক্লাস করতে পারে না। সুতরাং সকলের জন্যেে ক্লাস নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যেে তাদের একটি নির্দিষ্ট নাম্বারে সরকার উচিত বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মুল্যে (১০/১৫ টাকায় ৫ জিবি ডাটা ১৫ দিন মেয়াদে) সরবরাহ করা উচিত, যদি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সরকারের সদিচ্ছা থাকে সকলের জন্যেে ক্লাস নিশ্চিত করা তবে এটি বাস্তবায়ন ছাড়া কোন বিকল্প পথা নেই। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে সরকারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষেেের কাছে জোড় দাবি অনতিবিলম্বেে অামাদের এই দাবী বাস্তবায়ন করা হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • hasan sikder ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
    প্রতি সেমিস্টার ফি দিতে হয় হাজার হাজার টাকা। তার মূল্যায়ন হবে অনলাইনে। যারা লকডাউনে গ্রাম,মফস্বলে আটকে আছে তাদের কি হবে!
    Total Reply(0) Reply
  • Umed Raja ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    আমাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের অনলাইন শিক্ষার অবকাঠামোর কথা চিন্তা করলে বলতে হয় বর্তমানে এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এটা চালু হলে যা হবে সেটা হল নামমাত্র অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে টিউশন ফি দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখবে না। মাঝখান থেকে পরীক্ষার জন্য বসতে হবে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করলেও কিছু যায় আসে না কারণ নতুন করে আবার কোর্স রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যেটা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য চিন্তার কারণ। আর এই বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী টিউশন ফি দিতে ব্যর্থ হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Amin ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
    এখন সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু মাত্র অনলাইন ক্লাস চালু আছে, কোনো পরীক্ষা, মূল্যায়ন, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম হচ্ছে না। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সাধারণত কোনো সরকারি অনুদান বা সহায়তা পায় না। নন- প্রফিট অরগানাইজেশান হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রদেয় বেতন দিয়ে শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Al Kabir ১৮ জুন, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
    Public University ajaira na ata bolen . Online a class practical na amrder desh a . Onk student gram a asa Ora kmn class korbe .
    Total Reply(0) Reply
  • Zahid Hassan ১৮ জুন, ২০২০, ৮:২৫ এএম says : 0
    নিউজটি করায় ফারুক হোসাইন সাহেব ও দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • muhibbullah zami ১৮ জুন, ২০২০, ৯:৩৯ এএম says : 0
    Good.
    Total Reply(0) Reply
  • Amir Ahmad ১৮ জুন, ২০২০, ১০:০৫ এএম says : 0
    ননগভমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর অবস্থা কি হবে? যারা শিক্ষার্থী থেকে বেতন নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালায়?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ