পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলার খরচ মেটাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন বিচারপ্রার্থী। সঞ্চয় শেষ করে বিক্রি করছেন জমি-জিরাত। বিক্রি করে দিতে হচ্ছে গবাদিপশু এমনকি ভিটি-ঘটি-বাটি। তবুও মিলছে না ন্যায় বিচার। তবে বিচারপ্রার্থী নিঃস্ব হলেও অর্থ-বিত্তে ফুলে- ফেঁপে ওঠছে আদালতকেন্দ্রিক পেশাজীবী শ্রেণি। জনসংখ্যা বৃদ্ধিই মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির মূলকারণ। কিন্তু সৃষ্ট মামলার বিনাশ না হওয়া গোষ্ঠি স্বার্থেরই নির্দেশক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মামলার বিষ্ময়কর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও লাগাম টেনে ধরার নেই কেউ। ফলে মামলায় জর্জরিত হচ্ছে মানুষ। মামলা জটে ভারাক্রান্ত হচ্ছে আদালত। বিভিন্ন আদালতে এখন দেওয়ানি-ফৌজদারি মিলিয়ে ৩৭ লাখের মতো। আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, দীর্ঘসূত্রিতায় মামলা পরিচালনার ব্যয় বেড়েছে। এই ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হচ্ছেন লাখো বিচারপ্রার্থী। শুধু বিচারপ্রার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। ব্যাহত হচ্ছে ন্যায়বিচার। চাপ বাড়ছে আদালতের ওপর। বাড়ছে মামলা জট। দীর্ঘসূত্রিতা এবং মামলা জটের কারণ শুধুমাত্র বিচারক কিংবা সহায়ক কর্মচারী স্বল্পতাই নয়। দায়ী গোষ্ঠিগত স্বার্থ চিন্তা, নানা মাত্রিক স্বার্থ সংরক্ষণ, দুর্নীতি এবং দুর্বল বিচার ব্যবস্থাপনা। দীর্ঘদিন ধরে পূঞ্জীভুত এ সঙ্কট থেকে সহসাই বেরিয়ে আসা সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারের সদিচ্ছা, সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের আন্তরিকতা এবং বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়েই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
মামলার ক্ষয়-ক্ষতি ও অপচয় : আদালত ও সার্বিক বিচার ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা খুব একটা নেই। এ নিয়ে গ্রহণযোগ্য জরিপও কখনও হয়নি। বিচারাঙ্গনের অংশ বিশেষ নিয়ে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ কেউ নিবন্ধ-প্রবন্ধ গ্রন্থ লিখেছেন। এসব প্রয়াসের একটি ‘বাংলাদেশের ভ‚মি মামলার রাজনৈতিক অর্থনীতি: বিশাল এক জাতীয় অপচয়ের কতকথা’। গ্রন্থটি অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতের। তিনি নিজে এবং ওবায়দুর রহমান ও সেলিম রেজা সেলিম এটি অনুবাদও করেছেন। গ্রন্থের ভূমিকায় দেওয়ানি কিংবা ‘ভূমি মামলার’ ক্ষয়-ক্ষতির কিছুটা ধারণা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রায় ১২ কোটি মানুষ ভূমি মামলা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত। মামলাধীন জমির পরিমাণ ২৩.৫ লাখ একর। যা মোট জমির এক-চতুর্থাংশ। ভোগান্তি বছর প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ বছরের সমতুল্য। মামলা মোকাবেলার জন্য ব্যয়িত অর্থের মোট পরিমাণ দেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের ব্যয়ের চেয়ে বেশি। মামলায় জর্জরিত পরিবারগুলোর সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির মোট পরিমাণ বছরে ১১দশমিক ৫১৯ কোটি টাকা। মামলা জনিত আকস্মিক খরচের বার্ষিক পরিমাণ ২৪ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০ ভাগই বিভিন্ন ধরণের ঘুষ। প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
ভূমিকায় আরও বলা হয়, ভূমি মামলা মামলা-কবলিত পরিবারগুলোর নিঃস্বকরণ ও বঞ্চনা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। উভয়পক্ষের জন্যই এক ক্ষতিকর যুদ্ধ। যে যুদ্ধে কোনোপক্ষই জেতে না। এটা বিচার বিভাগ, পুলিশ, ভূমি শাসন ও ব্যবস্থাপনা, উকিল, স্থানীয় প্রভাবশালী, টাউট এবং এদের মতো আরও অনেকসহ কেবল দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার কর্মকর্তাদের জন্য জয়-জয়কার পরিস্থিতি। এ বিশাল অপচয় প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন এ বিষ্ময়কর বিপুল সংখ্যক অপ্রয়োজনীয় ভূমি মামলা হ্রাস করা এবং ভূমি সংশ্লিষ্ট বিবাদ, সংঘাত এবং মামলায় সম্পৃক্ত পরিবার সমুহের অতিশয় বঞ্চনা ও নিঃস্বকরণের ব্যপ্তি কমিয়ে আনা। এ প্রেক্ষিতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বিচার ব্যবস্থা এবং ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে সংস্কার আনা, তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম আদালত সমুহ ও সালিশের মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসাকে উৎসাহিত করা, খাস জমি ও জলায় দরিদ্র জনসাধারণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করা এবং সুশীল সমাজকে এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার জন্য কার্যকর কৌশল উদ্ভাবন জরুরি।
মামলায় ভারাক্রান্ত বিচারাঙ্গন : মামলা দায়ের, তদন্ত এবং বিচার ব্যবস্থার বিদ্যমান বাস্তবতায় এমন হাজারও দৃষ্টান্ত টানা সম্ভব। শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয়-একটি মামলার সৃষ্টি, আসামির জামিন, মামলা ঝুলিয়ে রাখা এবং এটিকে হাতিয়ার বানিয়ে অর্থ হাতানোর সাধারণ একটি নমুনাও বটে। সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনের আশ্রয় গ্রহণ এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির অধিকার বিধৃত। কিন্তু নানা বাস্তবতায় বিচারপ্রার্থীর এ অধিকার যেন ভুলণ্ঠিত, ব্যাঘাতগ্রস্ত। আদালতগুলোতে বিচারপ্রার্থী মানুষের দীর্ঘ লাইন। বৈরি পরিস্থিতিতেও যেন এ লাইন কমছে না। জুডিশিয়াল রিফর্ম কমিটি ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থার (জিআইজেড)র তথ্য অনুযায়ী, মামলা জটে বিপর্যস্ত বিচারাঙ্গন। আপিল এবং হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলা ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪টি। নিম্ন আদালতে বিচারাধীন মামলা ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৬টি। গেলো বছর নতুন মামলা দায়ের হয় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৪টি। বিপরীতে মামলা নিষ্পত্তি হয় ২ লাখ ৮৪ হাজার ১৩১টি। প্রতিদিন এ সংখ্যা বাড়ছেই।
সংস্থাটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ লোকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১০ জন বিচারক। যুক্তরাষ্ট্রে এই সংখ্যা ১০৭জন। কানাডায় ৭৫জন। ব্রিটেনে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১, ভারতে ১৮ জন বিচারক। মামলা এবং বিচারকের এ অনুপাত দিন দিন বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়িয়েই চলেছে। বাড়ছে হয়রানি, অপরিমেয় অর্থ ব্যয়। শিকার হচ্ছেন প্রতারণা, জাল-জালিয়াতিসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনার। এসব বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত হারে। মামলা জটের মধ্যে প্রায়ই জামিন জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আইনজীবীরা ধরিয়ে দিচ্ছেন জামিনের জাল আদেশ। গত দশ বছরে জামিন জালিয়াতির দেড় হাজারের বেশি ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ১০ জুন হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ আবু হেনা মোস্তফা কামাল নামক একজন আইনজীবীকে জালিয়াতির দায়ে কারণদর্শায়। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয় তার পাঁচ মক্কেলের জামিন। খুলনার টিপু শেখ হত্যা মামলায় গত ১৮ মে তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের জামিন করান। হাইকোর্ট কথিত জামিন প্রাপ্ত পাঁচ ব্যক্তি লুৎফর শেখ, সোহাগ শেখ, জুয়েল শেখ, সেলিম শেখ ও আব্দুল্লাহ মোল্লাকে ফের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এসব জামিন জালিয়াতির সঙ্গে আইনজীবীদের পাশাপাশি আদালত কর্মচারীরাও জড়িত। ২০১৫ সালে বিচারকের জাল স্বাক্ষরে ভুয়া জামিননামা তৈরি করে শতাধিক দাগী আসামিকে আদালত থেকে জামিনে ছাড় করিয়ে নেয়া হয়।
ঘটনার তদন্তে নেমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেখতে পায় এর সঙ্গে আদালতের পেশকার, উমেদার ও পিয়ন জড়িত। বিচারাঙ্গনে ঘাটে ঘাটে গুণতে হয় বাড়তি পয়সা। মামলার নথি দেখা, হাজিরা দেয়া, ওকালতনামায় সই করা, জামিননামা দেয়া, জামিনের শুনানি করা, মামলার নকল তোলাসহ মামলা সংক্রান্ত যেকোনো কাজে ‘বকশিশ’ বা ‘খরচাপাতি’র নামে বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয় বাড়তি পয়সা। এ ক্ষেত্রে কম এগিয়ে নন এক শ্রেণির আইনজীবী এবং তাদের সহায়কগণ। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ আইনজীবীই সাধারণ একটি ‘যুক্তি’ দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন। সেটি হচ্ছে-আইনজীবীরা চাকরি করেন না। মক্কেলরা টাকা না দিলে তারা চলবেন কি করে? আদালত পাড়ায় রয়েছে টাউট, প্রতারকদের উৎপাতও। মাঝে মধ্যে ভুয়া আইনজীবী পাকড়াওয়ের ঘটনা ঘটলেও আদালত অঙ্গন টাউটমুক্ত হয়নি। আইনজীবী, কখনোবা মানবাধিকার কর্মী, কখনো বা জজ সাহেবের ঘনিষ্ট লোক পরিচয়ে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে তারা হাতিয়ে নেয় অর্থকড়ি। অথচ এ বিষয়ে বিচারিক ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী কোনো সার্ভিলেন্স সিস্টেম নেই। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।