পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। বাংলাদেশেও কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়েছে। প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাওয়া স্বাস্থ্যখাতে এখনও আশার আলো দেখাচ্ছেন দেশের পরিবার কল্যাণ কর্মীরা। অন্যান্য হাসপাতালে সেবা না পেলেও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারা দেশের পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মাঠ পর্যায় থেকে সেবা নিচ্ছেন মা ও নবজাতক।
পরিবার কল্যাণ কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা সেবা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং কিশোর-কিশোরী পরামর্শ সেবা, স্যাটেলাইট ক্লিনিক আয়োজন, ইপিআই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাদান, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবাদান, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সেবাদান ইত্যাদি কার্যক্রম করোনার সময়েও চলমান রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে মেডিকেল অফিসার, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, নার্স, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, পরিবার কল্যাণ সহকারী এবং পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকরা সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সময়েও গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলমান রাখতে সামাজিক দূরত্ব মেনে স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনা করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রত্যেকটা সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম তদারকি করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ‘অপারেশনাল কমিটি’। এছাড়া সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতায় কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়। যারা করোনায় আক্রান্ত পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, করোনা দুর্যোগের মধ্যেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের কাজ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতেও নিয়োজিত তারা। দেশের মানুষের সেবায় নিবেদিত কর্মীরা প্রতিদিন সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন।
একাধিক পরিবার কল্যাণ কর্মী জানান, সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ-উকন্ঠার মধ্যেও বাচ্চাদেরকে টিকা দিচ্ছি। দেশের স্বার্থে দায়বদ্ধতা থেকেই দুর্যোগের সময়ে সেবা কার্যক্রম পালন করে যাচ্ছি। গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সেবা কার্যক্রমের পাশাপাশি করোনায় আক্রান্তদের আইসোলেশনে যেতে সাহায্য করা, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করাসহ সাধারণ মানুষকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেয়া, এককথায় মহামারির থেকে বাঁচতে মানুষকে সচেতনতার কাজটিও করে যাচ্ছেন তারা।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সেলিমা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, সকল ধরণের পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, স্বাভাবিক ডেলিভারি, এমআর সেবা চালু রয়েছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে সেবাগ্রহীতাদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় মোবাইলে কল করে কেউ সেবা নিচ্ছেন, সেবা গ্রহীতাদের নাম্বারে কল করে সেবা প্রদান করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। কাজ করতে গিয়ে সুরক্ষাসামগ্রী বা অন্য কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সেলিমা বেগম। বরিশালের উজিরপুর থানার শোলক ইউনিয়নের রুমা বেগম জানান, করোনার সময়ে ঝুঁকি এড়াতে মোবাইলে পরিবার কল্যাণ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেই সেবা নিচ্ছি।
অধিদফতরের কুইক রেসপন্স টিম সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন সেবা চালু রাখতে গিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মো. শরিফ উদ্দিন নামে একজন পরিবার কল্যাণ কর্মী এবং জামালপুরে একজন স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিদর্শক-পরিদর্শিকা প্রায় একশ’ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ঢাকা বিভাগের পরিবার পরিকল্পনা পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে করোনার মধ্যেও স্বাভাবিক সেবা বিদ্যমান আছে। যারা জন্মনিয়ন্ত্রণে স্থায়ী পদ্ধতি আইইউডি, ইমপ্ল্যান্ট ও টিউবেকটমি সেবা গ্রহণ করে তাদের সংস্পর্শে যেতে হয় কর্মীদের। এক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হলেও পরামর্শ নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এই সময়ে ঝুঁকি এড়াতে অনেক সেবা গ্রহীতা পরিদর্শিকাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবা ও পরামর্শ নিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে সকল কর্মীকে প্রয়োজন অনুযায়ী সুরক্ষাসামগ্রী পিপিই, মাস্ক ও স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আইইএম ইউনিটের পরিচালক আশরাফুন্নেছা বলেন, করোনায় গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সেবা কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। তবে কর্মীরা সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা করছে এটা ওভারকাম করতে। যাতে কেউ ন্যূনতম সেবা থেকে বঞ্চিত না হন সেদিকে নজড় রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে অধিদফতরের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে। প্রয়োজনে মোবাইলেও অনেকে সেবা নিচ্ছেন বলেন আশরাফুন্নেছা।
উল্লেখ্য, মাঠ পর্যায়ের এসব পরিবার কল্যাণ কর্মীদের মাধ্যমেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের সাফল্যে বিশ্বের রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের তথ্যমতে, ১৯৭৫ সালে সক্ষম দম্পতি মাত্র ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। প্রতি দশকে এর ব্যবহার বেড়েছে। ৪৪ বছরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের এই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়ে ২০১৮ সালে হিসেব অনুযায়ী, ৬৩ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে পদ্ধতি ব্যবহারের হার আরও বেড়েছে। প্রজননের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
কাল পড়–ন : কায়রো থেকে নাইরোবি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।