Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমন্বয়হীনতায় করোনা প্রকট

সুশাসন নিশ্চিতে ১৫ দফা সুপারিশ টিআইবির

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তারের পূর্বে প্রস্তুতি নেয়ার মত পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার পরও ভাইরাসটি মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশকে ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের ঘাটতি এবং বিভ্রান্তিকর ও পরস্পরবিরোধী নানা কর্মকান্ডের কারণে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। 

এছাড়া এই সঙ্কটকালে দীর্ঘসময়ের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা, সুশাসনের ঘাটতি ও অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কারণে স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতা আরো গভীরভাবে ফুটে উঠেছে। করোনা সংক্রমণের ১০০তম দিনে ‘করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ সঙ্কট মোকাবিলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে ১৫ দফা সুপারিশ প্রদান করে সংস্থাটি।
গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রাক-সংক্রমণ প্রস্ততিমূলক পর্যায়ে ও সংক্রমণকালে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে চলতি বছরের গত ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত সংগৃহিত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে করোনাভাইরাস এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে পরিকল্পনা ও কৌশল প্রণয়ন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিতকরণ, করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যবস্থা, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ, কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ বিস্তার রোধ, করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় প্রণোদনা কর্মসূচি, ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি- এই সাতটি বিষয়ে গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব নির্দেশক হচ্ছে আইনের শাসন, দ্রুত সাড়াদান, সক্ষমতা ও কার্যকরতা, অংশগ্রহণ ও সমন্বয়, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, এবং অনিয়ম ও দুর্নীতি।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্রুত সাড়াদানে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিলম্ব দেখা গেছে। যেমন, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কমিটি গঠনে বিলম্ব, সংক্রমণ বিস্তার রোধে বিদেশ হতে আগমন নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ চলাচল ও জন-সমাগম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, পরীক্ষাগার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিতে বিলম্ব, ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে ঘাটতি দেখা গেছে। আর এসব ক্ষেত্রে বিলম্ব ও ব্যর্থতা সার্বিকভাবে ভাইরাসটির বিস্তাররোধে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণার তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা অনুপাতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন (মাত্র ০.২৯%) পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার এ হারের দিক থেকে সারা বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম। পরীক্ষার সুযোগ এখন পর্যন্ত রাজধানীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত তথ্য থেকে দেখা যায় যে মাত্র ৪১.৩ শতাংশ হাসপাতাল নিজ জেলা থেকেই পরীক্ষা করাতে পারে, বাকি ৪৮.৭ শতাংশ হাসপাতালে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভাগীয় শহরে বা ঢাকায় পাঠাতে হয়। এছাড়া টেকনোলজিস্ট সঙ্কট, মেশিন নষ্ট থাকা, জনবল ও মেশিন সংক্রমিত হওয়া ও সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যেমন, বেসরকারি সংস্থা আইসিডিডিআর’বি এর সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয় নাই।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালগুলোর প্রায় ২৫ শতাংশের সকল চিকিৎসক এবং ৩৪ শতাংশের সকল নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী পিপিই পান নি বলে জানিয়েছেন। এছাড়া অধিকাংশ হাসপাতালের (৬৪.৪%) স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত মান অনুযায়ী সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ না করার অভিযোগও এসেছে।
বাণিজ্যিকভাবে পরীক্ষার অনুমোদন পাওয়া অধিকাংশ বেসরকারি পরীক্ষাগার করোনা পরীক্ষায় সরকার-নির্ধারিত ফি অপেক্ষা অতিরিক্ত এক হাজার থেকে ১,৫০০ টাকা আদায় করার অভিযোগ আছে। প্রয়োজনের চেয়ে পরীক্ষাগারের সংখ্যা কম থাকায় অনেকক্ষেত্রে দালালরা ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় সিরিয়াল বিক্রি করছে। এমনকি বিভিন্ন প্রয়োজনে ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত নয়’ এমন সার্টিফিকেট বিক্রি করা হচ্ছে।
গবেষণায় চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়ে ইতোমধ্যে প্রকাশিত দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে জানানো হয়, ত্রাণ ও সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি দেখা গেছে।



 

Show all comments
  • prince mahmud ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    আমি সম্পুর্ন একমত ,তবে আমার একমতে কি কিছূ আসে যায় কারন আমরা সাধারন মানুষের বলার কোন প্লাটফর্ম তো নাইই ,বরঞ্চ কিছূ বল্লে তা গুজব নামক সাপ হয়ে আমাদের গিলে খাবে ,সরকার কিংকর্তব্যবিমুর না হলে আমাদের এই দশা হয় না ,,,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ