Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লকডাউন নিয়ে বিভ্রান্তি

জোন চিহ্নিত না করেই ছুটি ঘোষণা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রার উপর ভিত্তি করে লাল (রেড), হলুদ (ইয়োলো) এবং সবুজ (গ্রীন) জোন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনা নিয়ন্ত্রণে সংক্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ রেড জোন লকডাউন করা হবে। এর মধ্যে রেড জোন চিহ্নিত করা না হলেও নির্ধারিত এই জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে। এই রেড জোন নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। অনেকেই জানতে চাইছেন, তিনি রেড জোনে পড়ছেন কিনা? তার ছুটি থাকবে কিনা? গতকাল সোমবার রাত পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে।
গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনায় রেড ও ইয়োলো জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে বলে প্রথমে জানানো হয়। অবশ্য পরে সেই নির্দেশনা সংশোধন করে শুধুমাত্র রেড জোনে ছুটি থাকবে বলে জানানো হয়। গতকাল সন্ধ্যায় তা সংশোধন করা হয়। এছাড়া ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, লাল অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ও অসামরিক সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দফতরসমূহ এবং লাল অঞ্চলে বসবাসকারী বর্ণিত দফতরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ইতোমধ্যে করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ঢাকায় ৪৫টি এলাকাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করেছে। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এলাকা রয়েছে। রয়েছে চট্টগ্রামের দশটি এলাকা। উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো: বসুন্ধরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা ও মিরপুর। দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরিবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, ল²ীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড ও সেগুনবাগিচা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই অঞ্চলগুলো নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। তবে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন কিংবা আদেশ জারি হয়নি। রামপুরা এলাকায় বাস করা একজন সরকারি কর্মচারী নাম প্রকাশ না করে বলেন, রামপুরা রেড জোন আওতায় পড়েছে শুনেছি, কিন্তু রামপুরার কোন অংশ পড়েছে তা জানি না, রামপুরা তো একটা বড় এলাকা। এরমধ্যে ছুটির কথাও শুনছি। আমি কী অফিস করব, নাকি ছুটির আওতায় পড়েছি? কিছুই তো বুঝতে পারছি না। উত্তরা এলাকার একজন বাসিন্দাও একই বিষয় জানতে চেয়ে বলেন, লক ডাউন এলাকায় পড়লে অফিস যেতে হবে না। কিন্তু আমার এলাকা লকডাউন বলা হচ্ছে। উত্তরা তো একটা বিশাল এলাকা। আমি যে সেক্টরে বাস করি সেটা সেক্টর রেড জোনে পড়েছে কিনা তা তো বুঝতে পারছি না। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, এলাকা লকডাউন করা হলে তো একটা প্রস্তুতি দরকার। সংসার চলার মতো বাজার করে রাখতে হবে। কিন্তু কিছুই তো বুঝতে পারছি না। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এ নিয়ে চরম বিভ্রান্তি চলছে। অনেকে খোঁজ খবর করতে গিয়ে অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটির কোন কোন এলাকা রেড জোনের আওতায় পড়েছে সে বিষয়ে পুলিশকে এখনও কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ওয়ারি বিভাগের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদেরকে নির্দেশনা দিলে আমরা কাজ শুরু করবো। কিন্তু আমরা এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি।
লকডাউন এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়া বন্ধ
এদিকে, রেডজোন হিসাবে চিহ্নিত কোন এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হলে, লকডাউন কার্যকরে সেনা ও পুলিশের টহল এবং মোবাইল কোর্ট নিয়মিত পরিচালিত হবে। জনগণের চলাচল অত্যন্ত সীমিত থাকবে। এলাকাবাসী বাইরে যেতে পারবেন না বা বাইরের লোকজন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা ইনফোতে এসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, গুরুতর রোগীদের জন্য অ্যাম্ব্বলেন্স চলাচল করতে পারবে এবং জরুরি সেবা (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস)’র জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা লকডাউন এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে। লকডাউন চলাকালে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী বা মেডিকেল বর্জ্য (মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি) আলাদাভাবে প্যাকেট করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাছে দিতে হবে। ওই এলাকার মেডিকেল বর্জ্য কোনোভাবেই অন্যান্য বর্জ্যের সাথে মেশানো যাবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করা যাবে, যা বাসায় পৌছে দেয়া হবে। এলাকার ভেতর জীবাণুমুক্ত শাক-সব্জি, মাছ-মাংস ও পণ্যসামগ্রী কেনার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া কর্মহীন, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের তালিকা অনুযায়ী মানবিক সেবা পৌছে দেয়া হবে। অসুস্থ রোগীদের জন্য টেলিমেডিসিন সার্ভিস চালু থাকবে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
এর আগে ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, রেডজোন চিহ্নিত এলাকা সিভিল সার্জনের তত্ত্ববধানে স্থানীয় প্রশাসন লকডাউন ঘোষণা করবে।
রাজধানীর লকডাউন সম্পর্কে জানতে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসাইন মো. মইনুল আহসান বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার লক ডাউনে তার সম্পৃক্ততা নেই। তবে ঢাকা জেলার কোন উপজেলা লকডাউন করা হলে সেটি তার তত্ত্ববধানেই হবে।

 



 

Show all comments
  • রাকিব হাচান ১৫ জুন, ২০২০, ১০:৫১ পিএম says : 0
    মিরপুর কাজিপাড়া কিশের আওতায় থাকবে লাল না সবুজ জোনে
    Total Reply(0) Reply
  • Shahin Saha ১৬ জুন, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    এত ধোঁয়াশা কেন?নিজেদের ভুল, অদক্ষতা ও মুখর্তার মাশুল কি জনগণই দিয়ে যাবে।।
    Total Reply(0) Reply
  • S M Nazraton Nayeem ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    Useless decision, useless steps. Need complete lock down not general holiday
    Total Reply(0) Reply
  • ইশরাত জাহান দোলন ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    লাল হলুদ সবুজ জোনের কনসেপ্ট ট্রাফিক লাইট থেকে নেয়া হয়েছে। ট্রাফিক সিগনাল কেহ মানেনা সুতরাং এই লাল হলুদ জোন মানা সম্ভব না
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ibrahim Ctgm ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    যারা প্রাই‌ভেট জব ক‌রে তা‌দের কি ব্যাবস্থা? তা‌দের তো কর্মস্থ‌লে উপ‌স্থিত না থাক‌লে চাক‌রি হারা‌তে হ‌বে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nazmul Hoque ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    বাংলাদেশে আরও দুই মাস নয়, যদি দুই বছর লক ডাউন দেওয়া হয় ,তাতে কোন লাভ হবেনা। এই লক ডাউনে করুনা রুগীর কি হবে জানিনা,তবে চাল চোরদের আবার ইনকাম করার লাইসেন্স করে দিবে। বাংলাদেশে কোন রোগ বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে রাজনীতি নেতাদের মনে আনন্দের জোয়ার ওঠে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ziared Rahman ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    এইসব ফালতু নির্দেশনা না দিয়ে পরিক্ষা ব্যাপক হারে করতে হবে, প্রতি দিন যে পরিমান কল আসে সেই পরিমান পরিক্ষা করতে হবে এবং রুগীদের চিকিৎসা সেবা নিরচিত করতে হবে।বাড়িতে রুগী রাখা বা বাড়িতেই চিকিৎসা করতে দেওয়া যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • Munmun Rahaman ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    Can anyone please mention the lists of these areas?
    Total Reply(0) Reply
  • Zillur Rahaman ১৬ জুন, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এলাকা বা জোনভিত্তিক লকডাউনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা যথাযথ কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরও বাড়বে। করোনা সংক্রমণের ব্যাপকতার ভিত্তিতে সারা দেশের বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করার কথা। কিন্তু এই লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। সেক্ষেত্রে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার সংখ্যা আরও অনেক বাড়ানো জরুরি। কারণ শনাক্তকরণ পরীক্ষা বাড়ানোর মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যাবে কোন এলাকায় করোনা সংক্রমণের ব্যাপকতা কেমন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এদিক থেকে আমরা মোটেই ভালো অবস্থায় নেই। করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার গতি অত্যন্ত মন্থর। এ দুর্বলতা যত দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়, ততই মঙ্গল। জোনভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সমন্বয়হীনতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে, এটাই কাম্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ