পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে এলেও বাংলাদেশে প্রতিদিন আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। ‘সামাজিক দূরত্ব রক্ষা’ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সামাজিক ট্রান্সমিশনও বেড়ে গেছে। চিকিৎসা ব্যবস্থাও উন্নতি তেমন করা যায়নি। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর টহল বাড়িয়ে লকডাউন কার্যকর করেছে।
এখন এলাকাভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে সামজিক ট্রান্সমিশন ঠেকিয়ে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে গত ৯ জুন সারা দেশ লাল, হলুদ, সবুজ তিনটি জোনে ভাগ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড করোনা কন্টিমিনেট ইমপ্লেমেন্টশন স্ট্রাটেজি/গাইড’ চ‚ড়ান্ত করে। সংক্রমণ ঠেকাতে প্রথমে কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ফেনীসহ কয়েকটি জেলার কিছু এলাকা লকডাউন করা হয়। পরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হয়। এতে সফলতা আসায় এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথম দফায় রাজধানী ঢাকার ৪৫ এবং চট্টগ্রামের ১০টি এলাকা লকডাউন করা হবে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, রুটি-রুজির কারণে সারাদেশে একসঙ্গে লকডাউন করবো না। জোনভিত্তিক/এলাকাভিত্তিক লকডাউন হবে। রেড জোনে লকডাউন করা হবে। সেখানে থাকবে সরকারি ছুটি। জরুরি সার্ভিস ছাড়া কিছুই চলবে না। লকডাউন কার্যকর করে সংক্রমণ কমিয়ে আনবো। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টভাবে চলবে। লকডাউন কার্যকর করার প্রয়োজনে সেনা টহল বাড়ানো হতে পারে বলেও জানান তিনি। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানা যায়, যেসব এলাকা লকডাউন করা হবে সেই রেড জোনে মসজিদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে সর্বোচ্চ ৫ জন এবং জুমার নামাজে সর্বোচ্চ ১০ জন মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন। বাকিদের নামাজ পড়তে হবে ঘরেই। মানুষকে নিজেদের ঘরে নামাজ আদায় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে।
জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাঁচতে হলে লকডাউন মানতে হবে। মানুষ সতর্ক হলে করোনা মহামারীর সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমে আসবে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বেপরোয়া চলাফেরা, আড্ডাবাজির কারণে অধিক হারে আক্রান্ত বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিক দায়িত্ব।
এর আগে পহেলা জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যানুপাতে সারাদেশকে রেড, ইয়েলো, সবুজ জোনে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। করোনা সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করেই এই ভাগ করা হয়েছে। যে সব এলাকায় এক লাখ নাগরিকের মধ্যে ৩০ জনের বেশি সংক্রমিত সে এলাকাকে ‘রেড জোন’ (ঝুঁকিপূর্ণ) চিহ্নিত করা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড, অপেক্ষাকৃত কম আক্রান্ত এলাকাকে ইয়েলো ও একেবারে কম আক্রান্ত বা মুক্ত এলাকাকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রেড জোনকে লকডাউন, ইয়েলো জোনে যেন আর সংক্রমণ না বাড়ে সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে। গ্রিন জোনেও সতর্কতা থাকবে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে তিনটি জোনেই প্রত্যেক নাগরিকের মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, লকডাউন করা এলাকাগুলোতে কঠোরভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের যেসসব এলাকা লকডাউন করা হবে তার প্রতিটি এলাকায় এক লাখে ৬০ জনের বেশি করোনা রোগী রয়েছে। উত্তর সিটির ১৭ এলাকা হলো- মিরপুর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, উত্তরা, রায়েরবাজার ও বসুন্ধরা। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটির রেড জোন চিহ্নিত ২৮টি এলাকা হলো- যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, বাসাবো, শান্তিনগর, পরীবাগ, পল্টন, আজিমপুর, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতয়ালী, টিকাটুলী, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, ল²ীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটির ১০টি এলাকা রেড জোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- কোতয়ালীর ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শক্রমে লকডাউনের গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কোনো এলাকায় গত ১৪ দিনের মধ্যে প্রতি লাখে ৬০ জন বা তার বেশি লোক সংক্রমণের শিকার হন তবে ওই এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে। তবে বিভাগীয় শহর-জেলা-উপজেলার ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১০ জন নিশ্চিত ভাবে শনাক্ত হলেই ‘রেড জোন’ বিবেচিত হবে।
ঢাকা সিটির ক্ষেত্রে বিগত ১৪ দিনে কোনো এলাকায় ৩ থেকে ৫৯ জন নিশ্চিত করোনা রোগী থাকলে সেটি হবে ইয়েলো জোন। তবে ঢাকার বাইরের জন্য প্রতি লাখে ৩ থেকে ৯ জন রোগী থাকলেই হবে ‘ইয়েলো জোন’ একইভাবে কোনো এলাকায় ১৪ দিনের মধ্যে নিশ্চিত রোগী যদি ৩ জনের কম অথবা কোনো রোগী না থাকলে সেটি হবে গ্রিন জোন। রেড জোন ঘোষণা করা হলে সেখান থেকে কেউ বাইরে যেতে পারবেন না। সব কাজ (ফ্যাক্টরি, অফিস) ঘরে বসেই করতে হবে। তবে গ্রাম এলাকায় কৃষি কাজ করতে বাধা নেই। অসুস্থ হলেই শুধু হাসপাতালে যেতে পারবে। জরুরি প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনার ব্যবস্থা থাকলেও সাইকেলসহ কোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার নিষিদ্ধ। এমনকি নৌ, রেল বা সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকবে। শহরাঞ্চলে মুদি-ওষুধের হোম ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। গ্রামে নির্দিষ্ট সময় ধরে দোকান খোলা থাকবে। গ্রামে কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও শহরে সেটি থাকবে না। ইয়েলো জোনের ক্ষেত্রে ৫০ ভাগ লোকবল নিয়ে অফিস বা ফ্যাক্টরি চালানো যাবে। তবে জনাকীর্ণ ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হবে। জরুরি চলাচলের ক্ষেত্রে একজন যাত্রী নিয়ে রিকশা, ভ্যান বা সিএনজি, ট্যাক্সি চলবে। নিজে অথবা আবাসিক ড্রাইভার থাকলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালানো যাবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনের মধ্যেই আগামী ১৬ জুন থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস চলবে। রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে গণপরিবহনও। সরকার মূলত জোনভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে করোনা মোকাবিলা পদ্ধতি গ্রহণ করায় সাধারণ ছুটি থাকবে লকডাউন এলাকায়।
গতকাল সচিবালয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগের মতো সীমিত পরিসরে সবকিছু চলবে। অধিক সংক্রমিত এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে এসব স্থানে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণার প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। রেড জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে। যাতে মানুষ বাইরে না যায়, ভেতরে না আসে। সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে নির্দেশনা দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে বেসরকারি অফিসের ছুটির বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারি করা হবে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের পরও প্রথমে গুরুত্ব না দেয়া, স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পরও দফায় দফায় সিদ্ধান্ত বদল দেশে পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে। একদিকে সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি সামাজিক ট্রান্সমিশন বেড়ে যায়; অন্যদিকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই কঠোর লকডাউনের পরামর্শ দিলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। তবে দেরিতে হলেও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশকে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে কঠোর লকডাউনে যাচ্ছে।
এদিকে পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন সফল হয়েছে বলে মনে করছে প্রাশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। ‘রেড জোন’ ঘোষণা দিয়েই লকডাউনের কয়েক ঘণ্টা আগেই সেখানে সেনাবাহিনীর টহল বাড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে প্রথমে কেউ কেউ নানান অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও সেনাবাহিনীর টহলের ভয়ে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বাসিন্দাদের সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দা, স্বেচ্ছাসেবী ও দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, লকডাউনে এলাকার বাইরে যাওয়া এবং প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।