Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১, ০৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোগীরা এখন ঢাকামুখী

করোনা আক্রান্তে চীনকে ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ ৪৭ জেলায় আইসিইউ নেই : ঢাকায় সরকারি হাসপাতালের ১৩৭ আইসিইউ-এর ৬৭টি বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

আমেরিকার নিউইয়র্কে যখন করোনার মহামারী, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মরছে; তখনো বাংলাদেশে করোনা দাঁত বসাতে পারেনি। সারা বিশ্বের যোগাযোগ বন্ধের মধ্যেই সে সময় ‘নিরাপদ ঢাকা’ ছেড়ে বিশেষ বিমানে শত শত মার্কিন নাগরিক মৃত্যুপুরী আমেরিকা ফিরে যান। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরাও বিশেষ বিমানে নিজ দেশে ফিরে যান। ‘নিরাপদ’ ঢাকা ছেড়ে ‘মৃত্যুপুরী’ আমেরিকা কি পাগল ছাড়া যায়? কিন্তু বিদেশীরা বলেছিলেন, আমেরিকা মৃুত্যুপুরী হলেও সেখানে আক্রান্ত হলে সুচিকিৎসা পাওয়া যাবে; কিন্তু বাংলাদেশে তো চিকিৎসা নেই। বর্তমানে একই অবস্থা জেলা পর্যায়ে বসবাসরত মানুষের। করোনায় আক্রান্তদের বিশ্বাস, জেলা শহরে বিনা চিকিৎসায় মরতে হবে; রাজধানীতে গেলে অন্তত চিকিৎসা পাওয়া যাবে।

করোনাসহ সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা পেতে হাহাকার চলছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলা সর্বত্রই একই চিত্র। জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে রোগীরা ভর্তি হয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আর ঢাকার রোগীরা চিকিৎসা পেতে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন। চিকিৎসা নিতে এসে হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যাচ্ছেন। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বেশ কয়েকজন চিকিৎসকও এ হাসপাতাল থেকে সে হাসপাতালে দৌড়ঝাঁপ করে ভর্তি হতে না পেরে মারা গেছেন।

দেশের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা তেমন নেই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা এমন চিত্রই তুলে ধরছেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা দূরের কথা সাধারণ রোগীদের ‘করোনা নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি করাচ্ছে না। আবার রোগী ভর্তির পর দ্বিগুণ থেকে ৫ গুণ বেশি অর্থ নেয়া হচ্ছে। এরপরও জেলা-উপজেলা থেকে মানুষ রোগী নিয়ে ছুটছে ঢাকামুখে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে করোনা রোগীদের তেমন চিকিৎসা নেই। দেশের ৪৭ জেলায় কোনো আইসিইউ ইউনিট নেই। করোনা চিকিৎসার হাসপাতালে অতি প্রয়োজনীয় টেস্টের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। বিশেষ করে সিবিসি, এসজিপিটি, কিটিনিন, ইলেকট্রোলাইট, সিআরপি, সিকেপি, ট্রপিনিন আই, চেস্ট এক্স-রে, ইসিজি ইত্যাদি পরীক্ষা প্রয়োজন। সে সুবিধা নেই।

গুরুতর করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকা ছাড়া ১৭ জেলায় রয়েছে মাত্র ১৭৩টি আইসিইউ (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) বেড। কিন্তু চালু রয়েছে মাত্র ৭০টি। লোকবলের অভাব ও নষ্টের কারণে ৬৭টি আইসিইউ চালু করা যাচ্ছে না। গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অক্সিজেন ও আইসিইউ প্রয়োজন হয়। কিন্তু জেলা পর্যায়ে এ সুবিধা খুবই সীমিত। ফলে করোনায় আক্রান্ত হলেই রোগীরা আসছেন ঢাকায়। তাদের বিশ্বাস, ঢাকায় অন্তত চিকিৎসা পাওয়া যাবে।

দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। ইতোমধ্যেই করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে বাংলাদেশ চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত চীনে আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ২২৮ জন। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা গতকাল নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে মোট ৮৪ হাজার ৩৭৯ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। আইসিইউ কম হওয়ায় অপেক্ষারত খারাপ রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইসিইউ বেড দেয়া হয়। প্রতি আইসিইউ বেডের জন্য ৫ থেকে ১০ জন রোগী অপেক্ষা করেন বলে তিনি জানান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী করোনা চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে ৬ হাজার বেড প্রস্তুত করা হয়। তবে ৪৭ জেলায় করোনা রোগীর জন্য আইসিইউ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে রাজধানীতে সরকারি পর্যায়ের ৯টি হাসপাতালে রয়েছে ১৪৭টি আইসিইউ বেড। তার মধ্যে ৬৭টি নষ্ট। ঢাকায় বেসরকারি ৬টি হাসপাতালে ২১টি আইসিইউ বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সারাদেশের করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থার খোঁজ নিয়ে দেখা যায় ভয়াবহ চিত্র। অনেকগুলো জেলা শহরে করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন ও আইসিইউ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলায় (ঢাকা সিটি ব্যতীত) সরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল বেড সংখ্যা আছে ১০৯৬টি এবং আইসিইউ বেড ৪৭টি। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, রাজবাড়ী এবং ঢাকার জিনজিরা উপজেলায় নির্ধারিত করোনা হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড নেই। বিভিন্ন বিভাগের যেসব জেলায় আইসিইউ বেড নেই সেগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, ফেনী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, বান্দরবান, ল²ীপুর ও নোয়াখালী জেলা, রংপুরের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও গাইবান্ধা, রাজশাহীর নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহের নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর, বরিশালের ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর, সিলেটের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এবং খুলনার বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোর, নড়াইল ও মাগুরা।

রাজধানীর বেশ কয়েকটি করোনা হাসপাতালে দেখা যায়, বাইরে থেকে রোগী বেশি আসছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণ কমানো না গেলে আক্রান্ত ও মৃত ক্রমেই বাড়বে। এমন খবর দেখে মানুষ জেলা পর্যায়ের চিকিৎসায় ভরসা রাখতে পারছে না।



 

Show all comments
  • Umme Habiba Sauda ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    করোনাভাইরাস মোটামুটি সব দেশেই ভয় দেখাতে সক্ষম হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশকে ভয় দেখাতে পারেনি
    Total Reply(0) Reply
  • MD Shahrier Sajib ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
    চিনের সংখ্যা তো দেখছি করোনা মাপার আন্তজাতিক একক হয়ে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Farid Farid ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    করোনা তোমাকে ধন্যবাদ অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে এই পৃথিবীর কেউ কারো না করুণা প্রমাণ করে গেছে আসেন আমরা সবাই নামাজ পড়ি আল্লাহর রাস্তায় চলে সত্য কথা বলি
    Total Reply(0) Reply
  • Mrinmoy Sarkar ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    চিনের কাছে করোনার ওষুধ অবশ্যই আছে।সেই জন্য চিনের এখনও সবকিছু ঠিক আছে আর আমরা ধুকছি হারাছি সবকিছু।
    Total Reply(0) Reply
  • Lake Stanley ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
    চীন অসাধারণ মিথ্যা বলেছে এবং তারা সাকসেসফুল ভাবে তা লুকিয়ে দেখিয়েছে। কোটি কোটি মানুষের মোবাইল ফোন বন্ধ।
    Total Reply(0) Reply
  • Maruf Hossain ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    দেখে শুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দিক থেকে অন্যতম একটি দেশ। সরকার এবং সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগকে বিষয়টি কে প্রথম প্রায়োরিটি হিসেবে দেখতে হবে। অচিরেই সমস্ত হাসপাতালগুলো ধারণক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। লোকাল হাসপাতালগুলোতে কোভিড নাইনটিন রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এখনই প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ওমর ফারুক ১৪ জুন, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
    মৃত্যুর সংখ্যাটা আরে বেশি গ্রামে মারা যাবার ৪/৫ দিন পরে রিপোর্ট আসছে করোনা পজিটিভ কিন্তু মৃত্যুর গণায় তারা পড়েন না। কিছুদিন আগে আমার পরিচিত একজনের গঠনা বললাম। এমন অবস্থা সারাদেশব্যপী শুধু সরকারি আয়তনে থাকাদের হিসেব করা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১৪ জুন, ২০২০, ১০:০০ পিএম says : 0
    Crona virus loves corrupt government??????????????????
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ