Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সর্বোচ্চ সংক্রমণের পথে করোনা

৭-১০ দিন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের আভাস প্রতিরোধে জোনভিত্তিক লকডাউন ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়ন ও স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশে করোনা সংক্রমণের ক্রমবর্ধমান হার সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে। এই সময়ে চলমান মাঝারি গতির সংক্রমণ ও ধীরগতির মৃত্যুহারও লাফ দিয়ে বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে একজনের থেকে সোয়া একজনে রোগটি ছড়াচ্ছে; তখন সেটা একজনের থেকে আড়াইজনে ছড়াতে পারে। সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে ঢাকা শহর ও এর আশপাশে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ চট্টগ্রামের বেশ কিছু এলাকা। তবে তারপর থেকে আক্রান্তের হার কমে আসতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ের দিকে আছে সংক্রমণ। এটা এই সপ্তাহ চলমান থাকবে। জুনের শুরু থেকে দিনে আড়াই হাজারের বেশি করোনা শনাক্ত হচ্ছে। আর এর হার ২১ শতাংশের উপরে। এই হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণের এই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিকে বন্ধ বা প্রতিরোধ করার জন্য জোনভিত্তিক লকডাউন ব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সংক্রমণটা এখনই কমাতে হবে। রোগীদের শনাক্ত করে আইসোলেট করে চিকিৎসা দিতে হবে। নতুবা দ্রুত সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই বলেও সতর্ক করছেন অনুজীব বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের রোগত্ত্বে, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে দেশে সংক্রমণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছবে। এরপর থেকে আক্রান্তের হার কমে আসতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। একই সঙ্গে এখন একটাই করণীয় সবাইকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে উল্লেখ করেন ডা. এস এম আলমগীর। আর কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও লকডাউন ছাড়া অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম। কবে নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হবে, সেটা নির্ভর করছে আমাদের কর্মকান্রডে ওপর। সার্বিক পরিস্থিতিকে অঘোষিত হার্ড-ইমিউনিটির সঙ্গেও তুলনা করছেন তিনি। করোনার ‘সর্বোচ্চ চ‚ড়া’ বা ‘পিক’ সম্পর্কে জানতে চাইলে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, এখন যে হার, সেটাই ‘পিক’। ‘পিক’ মানে একটা উঁচুতে উঠে গেল, তারপর নামল। আমাদের এখানে ‘ফ্ল্যাট পিক’। মানে এভারেস্ট না। এটাই ‘পিক’। এখন এখান থেকেই কমাতে হবে।

সূত্র মতে, করোনা মহামারীর ৯৮তম দিনে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৩৭৯। আর মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে এক হাজার ১৩৯ জনে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। এরপর গত ১২ জুন একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬ জনের মৃত্যু এবং সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৪৭১ জন নতুন রোগী শনাক্তের তথ্য দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত এক সপ্তাহ ধরেই দেশে করোনার উদ্বেগজনক সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গত এক সপ্তাহে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার করোনা রোগী এবং মারা গেছেন ২৫০ জনের বেশি। আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগ।

করোনা সংক্রমণের আন্তর্জাতিক হিসাব হচ্ছে- একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে আড়াই থেকে তিনজন সংক্রমিত হচ্ছেন। বাংলাদেশে একজনের কাছে থেকে সোয়া একজনের মধ্যে ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ চারজনের কাছে থেকে পাঁচজনে ছড়াচ্ছে। এই হার আন্তর্জাতিকভাবে একজনের থেকে আড়াইজনে ছড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের এখানে এখনো কম আছে। কারণ সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেনি। কমিউনিটিতে ক্লাস্টারভিত্তিক ছড়াচ্ছে। আমরা এখন ভয় পাচ্ছি যে, শহরাঞ্চলে বিস্ফোরণ যদি ঘটে, তাহলে একজনের থেকে গড়ে আড়াইজনের মধ্যে ছড়াবে।

আইইডিসিআর’র সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণের হার না কমালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। মানুষ থেকে মানুষের সংক্রমণটা বন্ধ করার জন্য সামাজিক দূরত্ব বিধিনিষেধ বা লকডাউন, সেটা দ্রুত কার্যকর করা উচিত। এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। কিন্তু দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। এটা ধীরগতির হয়ে যাচ্ছে। করোনার বর্তমান এই পরিস্থিতি সামনে খুবই আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, এখন যে করোনা পরিস্থিতি, সেটা দুই সপ্তাহ আগের অর্থাৎ ৩১ মে সব খুলে দেয়া হলো, তার আগের পরিস্থিতি। ৩১ মে’র পর সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। সে ক্ষয়ক্ষতিটা ৩১ মে’র পর তিন সপ্তাহের মাথায় অর্থাৎ জুনের তৃতীয় সপ্তাহে দেখতে পাব। সেটা এখনকার চেয়ে বেশ বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাজেই এই পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান এবং আরেকটা লাফ দেয় কি না- সেই ভয় রয়েছে। এখন মাঝারি গতিতে চলছে। যেটা মে মাসের শেষ সপ্তাহে এসে লাফ দিয়ে যে বৃদ্ধি, সেটাই চলছে।

ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, আমাদের দেশে মৃত্যুর হার এখনো কম। বৈশ্বিক যে মহামারী, যে সব দেশে মহামারীর বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে হঠাৎ করেই মৃত্যুর হারটা বেড়ে গেছে। আমাদের এখানে এখনো সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটেনি। তবে যে পরিস্থিতি, সেই বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। যদি আগামী দিনে সংক্রমণের বিস্ফোরণটা হয়, তখন এক লাফে মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যাবে।

বিএসএমএমইউ’র সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, যদি সংক্রমণের হার বাড়ে, তাহলে মৃত্যুর হারও বাড়বে। আমরা অনেক রোগীকে হাসপাতালে নিতে পারছি না। হাসপাতালে জায়গা নেই। যদি সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তেই থাকে, তাহলে রোগীরা হাসপাতাল, অক্সিজেন ও আইসিইউ পাবে না। তখন মারা যাবে। তবে এখন যে মৃত্যুর হার দেখানো হচ্ছে, সেটা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক মৃত্যুর খোঁজ আমরা পাচ্ছি না। এখন যে মৃত্যু হচ্ছে, সেটার বেশিরভাগ অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি মারা যাচ্ছে চিকিৎসার অভাবে। ভবিষ্যতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে একই কারণে মৃত্যুর হার আরও বাড়বে।



 

Show all comments
  • Chowdhury Tahmid ১৪ জুন, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    কদিন থেকে একটা কথা বার বার বলছি, মন্ত্রী আমলাদের চিকিৎসা সরকারি হাসপাতালে বাধ্যতামূলক করুণ, তাদের উছিলায় ১৮কোটি জনগণ সেরা চিকিৎসা পাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জান্নাতুল নাঈম মনি ১৪ জুন, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    এখন স্বাস্থ্য খাতের সামনে চ্যালেঞ্জ আসছে বলে বোঝা যাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে কি দূরাবস্থা। এরকম প্রতিটা খাতের সামনে চ্যালেঞ্জ আসলে দেখা যাবে সব খাতেরই ভংগুর দশা!! তারপরও আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল!
    Total Reply(0) Reply
  • Jalal Uddin Anc ১৪ জুন, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    দেশের অবস্থা অনেক খারাপ করোনা বড় বড় লোকদের প্রাণহানি গটাছে আল্লাহর রহমতে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত আছি আলহামদুলিল্লাহ
    Total Reply(0) Reply
  • Md Anwar Taluckder ১৪ জুন, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    আমরা এই পযন্ত কাউকে জবাব দিহির আওতায় আনতে পারি নাই তাই আজ এই অবস্তা যার ক্ষমতার পাওয়ার আছে তার সবকিছুই আছে বাকিরা অসহায়
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rayant ১৪ জুন, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবার অবস্থা ভয়াবহ যা একমাত্র চোখে দেখা ছাডা বোঝা সম্ভব নয় করোনা উপসর্গ রোগীর অবস্থা আরো ভয়াবহ রিপোর্ট পেতে পেতে রোগী মারা যাচ্ছে যাদের শ্বাসকষ্ট তারা গাডীতে রাস্তার উপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পডছে
    Total Reply(0) Reply
  • Foyez Khan ১৪ জুন, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    খুব-ই দু:খজনক। ভারত বাংলাদেশে লাফিয়ে রোগি বৃদ্ধি পাচ্ছে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে, দ্রুত মানবজাতিকে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা করুক
    Total Reply(0) Reply
  • JA Razib ১৪ জুন, ২০২০, ১:০৪ এএম says : 0
    করোনার আঁতুড়ঘর চীন কে ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ ! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাই সত্য চীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গোপন করেছে | চীনে প্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে এরপর আবার চীনে সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা অথচ সেই চীনে মোট শনাক্ত হয় মাত্র ৮৩হাজার | প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুরে বলতে হয় এটা করোনা ভাইরাস না এটা চায়না ভাইরাস |
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hoque ১৪ জুন, ২০২০, ১:০৫ এএম says : 0
    আমরা সব কিছুতেই প্রথম থাকি দুর্নীতিতে প্রথম, আবহাওয়া দূষণে প্রথম, এই মহামারিতে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন, আমরাই প্রথম হব । আফসোস ছাড়া আর কিছুই নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ