পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। অর্থমন্ত্রী বলেন, আশা করি, এ বাজেট আমরা যেভাবে সাজিয়েছি, সেভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবো। আমাদের প্রত্যাশা করোনাকাল বেশি লম্বা হবে না। তার পরেও যদি করোনাকাল লম্বা হয়, তাহলে সবাই মিলে একসঙ্গে এই ভারইরাসকে মোকাবিলা করতে পারলে, আমরা আলোর পথের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো। বাজেট বাস্তবায়নে সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানান। তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, এবারের বাজেট আমরা স্বাভাবিক নিয়মে করতে পারিনি। এটি গতানুগতিক বাজেট নয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এবারের বাজেট দেয়া হয়েছে মানুষকে রক্ষার জন্য। মানুষকে খাবার দিতে হবে। চাকরি হারাদের চাকরি দিতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে। এবারের বাজেটে আমরা এসব গুরুত্ব দিয়েছি। করোনা মোকাবিলায় সরকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। অন্য সময় আমরা আগে আয় করতাম, পরে খরচ করতাম। করোনা আমাদের সেই পুরানো সিস্টেম উল্টে দিয়েছে। করোনা মোকাবিলায় এখন আমরা আগে খরচ করবো, পরে আয় করবো। আমি আশা করি, করোনার এই দুর্দিন বেশি সময় থাকবে না। তার পরেও যদি করোনাকাল দীর্ঘ হয় সেক্ষেত্রেও আমাদের কাছে পথ খোলা রয়েছে। যেহেতু আইএমএফ বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করব। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নতি হয়েছে। নতুন বাজেটে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তারমধ্যে ১৭টি ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। এ জন্য বাজেটটি আমরা দিয়েছি বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
গতকাল বাজেটোত্তর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, এনবিআর চেয়ারম্যান রহমাতুল মুনিম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. সামসুল আলম এবং অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংযুক্ত ছিলেন।
বাজেটটি স্বাভাবিক নয় উল্লেখ করলেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সারাদেশের মানুষ আমাদের নিয়ে কী ভাবে, কী স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের মানুষ, এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের যে প্রত্যয়-সবকিছু আমরা মূল্যায়ন করেছি। আইএমএফ কী বলেছে, বিশ্বব্যাংক কী বলেছে এবং আমাদের আরও দাতাগোষ্ঠী যারা আছে, ইকোনমিক থিংক ট্যাংক যারা আছেন এবং দেশি-বিদেশি সব থিংক ট্যাংকের মতামত নিয়ে আমরা এ বাজেট দাঁড় করাবার চেষ্টা করেছি। ‘ইকোনমিস্ট গত ২ মে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে নবম স্থানে রেখেছে। তাদের হিসাবে অন্যদের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছি।
বিশাল বাজেটের ব্যাখ্যা দিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমি জানি, এ বাজেটটি ভিন্ন, আগেই বলেছি। যেহেতু স্বাভাবিক পথ আমাদের জন্য ছিল রুদ্ধ, ভিন্ন পথেই আমাদের কাজটি করতে হয়েছে। সেজন্য হয়তো অনেকের কাছে অনেক অসঙ্গতি মনে হবে। কিন্তু উপায় ছিল না আমাদের। বাজেট না থাকলে কোনো অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নেয়া যায় না। এখন দেশের মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকে না খেয়ে কষ্ট পাবে, যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা কষ্ট পাবে, যারা রিকশা শ্রমিক তারা কষ্ট পাবেন। এসব মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কোনো সময় নষ্ট না করে দ্রুত ছুটে আসলেন। নির্দেশনা দিলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেই নির্দেশনা মেনে যেন সবাইকে সহযোগিতা করি। সেই কাজটি করে যাচ্ছি।
এবারে বাজেটে দুটি জিনিসকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটটি তৈরি করেছি। আবারও বলি, স্বাভাবিক নিয়মে আমরা বাজেটটি করতে পারিনি। স্বাভাবিক নিয়মে না করলেও চেষ্টা করেছি দুটো জিনিস গুরুত্ব দিতে। একটা হচ্ছে অতীত অর্জন। অতীতে আমরা যা অর্জন করেছি, তা অস্বাভাবিক। গত ১০ বছরে আমরা সারাবিশ্বের সবার উপরে আমাদের জিডিপির গ্রোথ। গত ৫ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় সারাবিশ্বে সেরা। আমাদের সমান ছিল শুধু ভারত ও চীন। এই অর্জনগুলোকে আমরা বিবেচনায় নিয়েছি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে আমাদের নিয়ে সারাবিশ্ব নতুন করে কী ভাবছে, সেটা বিবেচনায় নিয়েছি। সবার মতামত নিয়ে এ বাজেট সাজিয়েছি।
ব্যাংকের কাছে অনেক টাকা থাকতে হবে, তা নট নেসেসারি (প্রয়োজনীয় নয়) বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার আগে ব্যাংকিং খাত দেখেছি। আগে ব্যাংকের নন-পারফরমিং লোনের পরিমাণ বেশি ছিল। সে কারণে ব্যাংকগুলো মাঝে মধ্যে লক্ষ্য করতাম, তাদের লিকুইডিটির অবস্থা একটু খারাপ হয়ে যেত। ইদানিং কোনো ব্যাংকের লিকুইডিটি খারাপ, এ কথা শুনিনি। এখন কেউ বলতে পারবে না, ব্যাংকে গিয়ে টাকা পাইনি, ফিরে আসছে। কোনোরকম খারাপ ব্যবহার করেছে গ্রাহকের সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এটা আমার সময় পাইনি।
বাজেটে কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, কৃষির কারণে সভ্যতা এগিয়েছে। আমরাও কৃষি সভ্যতার ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে চাই। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সেবার পরই গুরুত্ব পাবে কৃষি। সেটি আমাদের শেকড়। কৃষিকে এমনভাবে সাজাবো যেন কৃষির ওপর নির্ভর করে অর্থনীতিকে আলোকিত করতে পারি। অর্জন আরও গভীর করতে পারি। তিনি বলেন, সত্তরের দশকে চাল উৎপাদন হতো ১০ লাখ মেট্রিক টন। এখন ৫ গুণ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শেকড়ের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ো। ৫ হাজার বছর আগে থেকে আমাদের সভ্যতা, এগিয়ে যাওয়া, যার মাধমে এগিয়েছি, সেটা হলো কৃষি।’ কৃষির হাত ধরেই টাইগ্রিস নদীর এপার-ওপার ধরে, নীল নদীর এপার ওপার ধরে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। সভ্যতা এগিয়েছে। কারণ হলো কৃষি। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবার পরই গুরুত্ব পাবে কৃষি। সেটা আমাদের শেকড়। কৃষিকে এমনভাবে সাজাব, যেন কৃষির ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতিকে আলোকিত করতে পারি, আরও অর্জন গভীর করতে পারি।
বিনিয়োগ বাড়ানোর আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ শতাংশ, সেখানে নতুন বছরের বাজেটে এই বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা দ্বিগুণ ধরা হয়েছে। হঠাৎ এত বিনিয়োগ বাড়বে কীভাবে- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিনিযোগ বাড়বে এ কারণে যে, বিদেশি অনেক উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তুত। আর আমরা ১০০টির বেশি অর্থনৈতিক জোন করছি। করোনার কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ স্থানান্তরিত হবে।
‘বিদেশিরা কেন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করবে? কারণ তাদের বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের ইনসেনটিভ (প্রণোদনা) দেয়া হচ্ছে। আমরা এবারের বাজেটে লোকাল ইন্ডাস্ট্রিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। লোকাল ইন্ডাস্ট্রি মানে শুধু বাংলাদেশিদের ইন্ডাস্ট্রি না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিদেশিদের ইন্ডাস্ট্রিকেও স্থানীয় হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়া হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের দরকার হচ্ছে এই মুহূর্তে দেশের মানুষকে বাঁচানো, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া। বিদেশে হোক বা এ দেশেই হোক, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করি আগামীতে ১০০টি ইকোনমিক জোনের মাধ্যমে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এখানে অটোম্যাটিকলি বিনিয়োগ আসবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন পথে বিনিয়োগ আসবে সেগুলো এতদিন জানতাম না, এখন জানি। এ জন্য আইনগুলো সহজ করে দিচ্ছি। স্থানীয় ও বিদেশি সবাই একই পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। দুইক্ষেত্রে একই ধরনের বেনিফিট দেয়া হবে। এছাড়া ব্যাংক ঋণে সুদহার কমিয়ে ৯ শতাংশ করে দেয়া হয়েছে। ৯ শতাংশ এর বেশি সুদহার হলে খেলাপি ঋণ বাড়ে। মানুষ দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে বিনিয়োগ করে। কিন্তু এখন আর সেটা হবে না। কারণ আমরা সুদহারকে ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে রাজস্ব জিডিপির অনুপাত ১০ থেকে ১১ ভাগ। বিদেশে ১৬-১৬ ভাগের নিচে নেই ১৭-১৮ ভাগ পর্যন্ত আছে। রজস্ব জিডিপির অনুপাতটা যদি আমরা ১৫ ভাগেও উন্নীত করতে পারি, তাহলে আমাদের হাতে অনেক টাকা আসবে। এটাই হচ্ছে আমাদের বিনিয়োগের একটা অবলম্বন।
শেয়ারবাজারের জন্য বাজেটে নতুন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশের সরকারই পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে হস্তক্ষেপ করে না। দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী হবে, তার প্রভাব দেশের পুঁজিবাজারে পড়বে। আমরা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চাই। এটা করতে পারলেই পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সবকিছু মিলিয়ে আমরা প্রত্যাশা করছি, করোনা থেকে আমরা দ্রুত মুক্ত হব। আমাদের অর্থনীতি আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। আর সেটা যদি হয়, আমরা বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ধরেছি, সেটা অর্জিত হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করার কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ কথা ঠিক যে আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। ১০/১১ শতাংশ। এটাকে আমরা নতুন বাজেটের মাধ্যমে ১৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই। এজন্য এনবিআরকে পুরোপুরি অটোমেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই অটোমেশনের কাজটি মহামারীর কারণে বিলম্বিত হলেও এখন যন্ত্রপাতি আনার ব্যবস্থা হয়েছে এবং অটোমেশন হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যও পূরণ করা সম্ভব। মোট কথা আমরা বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, বাজেটে ঘাটতি পূরণে সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে কোনো সমস্যা হবে না।
গভর্নর বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ হিসাবে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এটি তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ চলতি অর্থবছরের ইতোমধ্যে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৭৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি। চলতি অর্থবছরে ৮২ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এতেও সমস্যা হবে না।
ব্যাংক খাতে বর্তমানে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে দাবি করে ফজলে কবির বলেন, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি নগদ তারল্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ রয়েছে আরো ৬২ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক খাতের তারল্য সমস্যা নেই ঋণ নিলে এ খাতের কোনো সমস্যা হবে না।
বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ১০ লাখ টাকার উপরে ও এর চেয়ে বেশি যাদের আমানত আছে তাদের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তবে ১০ লাখ টাকার নিচে যাদের আমানত তাদের শুল্ক বাড়ানো হয়নি। আর এতে করে আমানতের কোনো সমস্যা হবে না। আগে সঞ্চয়পত্রের কারণে ব্যাংকে আমানতের চাপ কম ছিল তাও এখন আর নেই। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সঙ্কটকালে লভ্যাংশ নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা না জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক লভ্যাংশ নেয়ার বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করে না। যদি বিক্রি করে নিয়ে যায় তখন দেখে।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, রাজস্ব বোর্ডের জন্য টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা কঠিন হবে- যদি করোনাকাল লম্বা হয়। তবে করোনাকাল লম্বা না হলে এই টার্গেট অর্জন করা অসম্ভব নয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে কলরেট অনেক কম তাই অপ্রয়োজনীয় কথা বলার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তবে কথা বলার প্রবণতা কমানোর জন্য কলরেটে আরও ৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়নি। বরং কলরেট কম তাই মাত্র ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা ব্যয়ের সক্ষমতা মানুষের আছে। তিনি বলেন, আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে কত শতাংশ বাড়ানো হলে সেটা বিবেচনা না করেই এর বিরোধিতা করা হয়। এক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এটাতে মানুষের তেমন ক্ষতি হবে না।
আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, বর্তমানে মোবাইল কলরেটের হার এত কম যে অপ্রয়োজনীয় কথা বলার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এতে করে কথা বলতে বলতে ট্রেনের সাথে অ্যাকসিডেন্ট করার ঘটনাও আছে। তবে আমরা কথা বেশি বলাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ শুল্ক বাড়াইনি। বরং কলরেট খুব কম। তাই এক্ষেত্রে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দুর্যোগের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা সামনে রেখে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বেশি। শতাংশ হিসাবে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। প্রতিবার বাজেটে ঘাটতি সাধারণত ৫ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়। তবে এবার করোনার প্রভাবে প্রথমবারের মতো তা ৬ শতাংশ স্পর্শ করেছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করবহিভর্‚ত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে করবহিভর্‚ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা। আয় ও ব্যয়ের এ বিশাল ফারাকের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এ বিশাল ঘাটতি পূরণে সরকার বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করবে, অংকে যা ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা আছে ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার এক লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। অভ্যন্তরীণ উৎস অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আসন্ন অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যাংকবহিভর্‚ত খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকাসহ মোট ২৫ হাজার কোটি টাকা নিতে চায় সরকার। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। পরে চাহিদা বাড়লে এটি বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।