Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গতানুগতিক, সৃজনশীলতা নেই

রাজস্ব আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতির কিছু সূচকের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

আগামী অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটকে গতানুগতিক বলেছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তৈরি হওয়া নজিরবিহীন বাজেটে নতুন উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা দেখা যায়নি। অন্যদিকে সরকার রাজস্ব আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনীতির কিছু সূচকের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তা বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। বাজেট ঘোষণার পরদিন গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির মূল্যায়নে এমন মতামত এসেছে।

সিপিডির পর্যালোচনায় স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষিসহ সরকারের অগ্রাধিকার দেয়াকে বাজেটের ইতিবাচক দিক বলা হয়েছে। ব্যক্তি করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রশংসা করা হয়েছে। তবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়িয়ে সৎ করদাতাদের আরও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলে সংস্থাটি মনে করছে।

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। উপস্থাপনা শেষে তার সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন সংস্থার ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং ঊর্ধ্বতন গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক সঙ্কটের এই সময়ে বাজেটে আরও সৃজনশীলতা দরকার ছিল। সরকারের লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবতার মধ্যে থাকা উচিত ছিল। বাংলাদেশ ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে যাচ্ছে, ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগে বড় উল্লম্ফন হতে যাচ্ছে- এ ধরনের অনুমান আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও ভুল বার্তা দেবে। এটি করোনা মোকাবিলায় তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা সব সময়ই বলে আসছি বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক যে কোনো নীতি গ্রহণে প্রবৃদ্ধি কী হবে তা ভাবা উচিত হবে না। বরং দেশের মানুষের জীবন রক্ষা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। অথচ এ বাজেটেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীক মনোভাব থেকে বের হতে পারেনি সরকার।

ড. ফাহমিদা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে, শিক্ষা কৃষি ও কর্মসংস্থান খাত প্রথম দিকে আসেনি। তালিকার দিকে যেটি বরাদ্দ দেয়ার কথা সেটি দেখছি না। তিনি বলেন, করমুক্ত আয়সীমায় পরিবর্তন করা হয়েছে। করোনার প্রেক্ষিতে এটি ভালো উদ্যোগ। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশই বাড়ানো হয়েছে অনুন্নয়ন খাতে। মাত্র ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে উন্নয়ন খাতে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনও স্বাস্থ্যখাতের মোট বরাদ্দ দেশের জিডিপির ১ শতাংশের নিচে। অথচ ৩০টিরও বেশি স্বল্পোন্নত দেশের স্বাস্থ্যখাতের ব্যয় তাদের জিডিপির ১ শতাংশের চেয়ে বেশি। তিনি বলেন, আশ্চর্যজনকভাবে করোনাভাইরাসও সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে স্বাস্থ্যখাতকে বিবেচনা করাতে পারেনি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেড়েছে তবে অন্য বছরের চেয়ে কম। কর্মসংস্থানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যখাত, কর্মসংস্থান ও কৃষিখাতকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বললেও বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সঙ্কটের সময় সুশাসনের অভাব দেখা গেছে। বাজেটে যত সূচক দিয়েছে সেটি বাস্তবের আলোকে দরকার ছিল। অর্থনীতি চিত্র সঠিকভাবে না দেয়ায় আন্তর্জাতিক মহলও প্রশ্ন তুলবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বিশ্বে কমেছে সেটি বিবেচনা করে রেমিট্যান্স প্রবাহের দিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি দায় দেনার ক্ষেত্রে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতির যে পর্যবেক্ষণ সেখানে দেখা গেছে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে সামস্টিক অর্থনীতির যে কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কারণ বাজেটের রিকভারির যে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকার মনে করছে কোভিড আক্রান্তের সময়কাল থেকে আমাদের রিকভারিটা আগামী একবছরের মধ্যে করতে পারবে। কিন্তু পৃথিবীর বহু দেশে এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই অনুমতিটা কতোটা বাস্তবোচিত হয়েছে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে।
রাজস্ব আহরণের বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগের অর্থবছরের বাজেটের মতোই রাজস্ব আহরনের বিরাট একটি লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। ড. ফাহমিদা বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ঊল্লম্ফন। এটি বাস্তবায়ন প্রশ্নবিদ্ধ। ৫০ শতাংশ রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হলে এনবিআরের রাজস্ব বহিভর্‚তখাতগুলো থেকে আরও রাজস্ব বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব বিভাগের যে ধরনের জনশক্তি, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, নীতিমালাসহ অন্য পদক্ষেপ দরকার সেগুলো এখন পর্যন্ত নয়।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতিবছর কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয় এবং একটা ডিসকাউন্ট রেটে। ১০ শতাংশ কর দিয়েই কালো টাকা সাদা করা যায়। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে।

সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে দায়বদ্ধতার আন্তরিকতা আছে, কিন্তু উদ্ভাবনের দিকটা নেই। গতানুগতিকতার আশ্রয় নিয়ে হিসাব মেলানো হয়েছে। করোনা দুর্যোগ দ্রুত কেটে যাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। দেশ বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে আছে এবং যেসব দুর্বলতা এখন দেখা যাচ্ছে সেই জায়গায় আরও প্রাধিকার দেয়া উচিত ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশে সমানে শ্রমিক ছাঁটাই চলছে। তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চাপের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে মানুষ ভোগ ও ব্যয় কমাচ্ছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে এই রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, দেশের অভ্যন্তরে যে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে সেটিও বর্তমানের পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্ভব নয়। অথচ উচ্চধনীদের আয়কর কমানোর মাধ্যমে সরকার একদিকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Cruel politics! ১৩ জুন, ২০২০, ৪:৪৯ এএম says : 0
    Bangladesh is finished by such as organizations.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ