Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেছারাবাদে আটঘরের শাখা খালে বসেছে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২০, ৫:৩৫ পিএম

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজলার আটঘরে জলে ডাঙায় বসেছে নয়ানাভিরাম ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। উপজেলার আটঘরের খালে বাংলা জৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু করে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে এ হাট।

হাটের নৌকা বেপারিদের সাথে কথা বলে জানাগেছে। প্রতি হাটে ৬০০ থেকে থেকে ৭০০ খানা নৌকা বিক্রি হয়। তাতে প্রতিটি নৌকা গড় প্রতি তিন হাজার টাকা দামে হলেও প্রতি হাটে বিশ লক্ষ টাকার নৌকা বিক্রি হয়। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের প্রকোপে হাটে তেমন মানুষ আসছেনা। তাই এ বছর বেচা বিক্রিও ভাল নয়। জানাগেছে, হাটে আসা অনেকই বংশ পরম্পরায় নৌকা বিক্রেতা। তারা বছরের ৮ মাসই বিভিন্ন জায়গায় গুরে গুরে হাট করে নৌকা বিক্রিতে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। আর এদের অধিকাংই নিম্ন মধ্যভিত্ত শ্রেণীর। বছরের সর্বদাই তারা ধারদেনা করে নৌকা ব্যবসা করে থাকেন। তাই বরাবরের ন্যায় এবছরও তারা স্ব স্ব এলাকার স্থানীয় এনজিও সহ বিভিন্ন ব্যক্তি জনের কাছ থেকে ধার দেনা করে টাকা এনে হাটে নৌকা এনেছেন। বেচা বিক্রি মন্দায় টাকার চিন্তায় ক্রমেই এখন তাদের দু'চোখ চোখ ধূসর হয়ে উঠছে।

পেয়ারা তোলা, গোখাদ্য সংগ্রহ,মাছ মারা, উপজেলার প্রসিদ্ধ নার্সারি ব্যবসা সহ বর্ষা মৌসুমে নানান কাজে এখানকার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের প্রয়োজন হয়ে পড়ে নৌকার। তাইতো কয়েক যুগ ধরে বর্ষা মৌসুমের এ সময়ে আটঘরের এ খালে বসে আসছে নৌকার হাট। আর কয়েক যুগ ধরে এ হাট বসে আসায় নৌকার হাটটি এখানকার মানুষের কাছে পরিনত হয়েছে একটা ঐতিহ্যে।

চাম্বল,মেহেগিনি ও রেইন্ট্রি কাঠ দিয়ে বানানো বাহারি সৌন্দর্যের তিন থেকে চার শতাধিক নৌকা আসে প্রতি হাটে। ৮ হাত থেকে শুরু করে চৌদ্দ হাত সাইজের নৌকা আসে এখানে। সাইজ ও কাঠ অনুযায়ি প্রতিটি নৌকা বিক্রি হয় ২ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৬ হাজার টাকায়। চাম্বল কাঠ দিয়ে তৈরী দশ হাত সাইজের একটি পেনিস নৌকা বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫ শত টাকায়। বেপারির সব খরচাধি বাদ দিয়ে নৌকা প্রতি লাভ থাকে ৪০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। তবে নৌকা বেপারিরা জানান, প্রতি হাজারে একশ টাকা খাজনা নেয়ায় তাদের ব্যায় কিছুটা বেশি হচ্ছে। একারনে আগের মত নৌকা বিক্রিতে লাভ হচ্ছেনা। অনেক সময় হাটে ক্রেতার অভাবে পানির দামে(সস্তায়) নৌকা বিক্রি করতে হয়।

উপজেলার ডুবি এলাকা থেকে আসা নৌকা বেপারি মো: ওবাইদুল মিয়া(৪০) বলেন, তিনি ছোট থেকেই আটঘরের এই হাটে বাবার সাথে নৌকা বিক্রি করতে আসতেন। এখন তার বাবা বৃদ্ধ হওয়ায় পনের বছর যাবত তিনি একাই হাটে নৌকা বিক্রি করতে আসেন। ১২ জুন (শুক্রবার) হাটে বসে তিনি বলেন আজকের হাটে তিনি একাই ৩৬ খানা নৌকা নিয়ে এসেছেন। নেছারাবাদ উপজেলা সহ প্বার্শবর্তী জালকাঠি,কাউখালি এলাকার ভিবিন্ন লোক জন এখানে আসেন নৌকা কেনার জন্য। হাটে বেচা বিক্রি ভালনা। তিনি বলেন, বছরের আট মাস সময়ই ভিবিন্ন উপজেলার হাট ঘুরে তিনি নৌকা বিক্রি করেন। নিজ এলাকার গ্রামের নৌকা কারিগরদের কাছে ঘুরে হাটের চাহিদা অনুযায়ি অর্ডার করে নৌকা বানিয়ে বিক্রি করতে আসেন। তবে এ বছর হাটের বেচা-বিক্রি খুবই খারাপ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ