Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অতি আশাবাদের বাজেট

পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ, অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠবে দেশ : অর্থমন্ত্রী

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় প্রণীত এ বাজেটের মাধ্যমেই বাংলাদেশ করোনা দুর্যোগের অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে দেশ চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ফিরবে বলে আশাবাদের কথা শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংসদের দেয়া বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত খরচ দেখা দিয়েছে তা মেটাতে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’ প্রত্যাশাকে সামনে রেখে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদের সামনে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী তার এই দ্বিতীয় প্রস্তাবিত বাজেটে খরচের যে হিসাব ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৯ শতাংশের সমান। বাজেটে মানুষের জীবন বাঁচানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এজন্য করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের সবদিক তুলে ধরা হয় বাজেট বক্তৃতায়। এতে চারটি কৌশলের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এরমধ্যে-সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য, বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিতকরণ, অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রবর্তন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি। আগামী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে; যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৮১ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য ১০০টি দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলায় সকল দরিদ্র্য প্রবীন ব্যক্তিদের বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে। এতে ৩ লাখ নতুন করে উপকারভোগি এই সুবিধার আওতায় আসবে।

সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে মুদ্রাবাজারে তারল্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখার স্বার্থে রেপোর সুদহার ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ দশমকি ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মৃতপ্রায় শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে কর সুবিধা দিয়েছে। এরমধ্যে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। দ্বৈত কর পরিহার করা হয়েছে। মুনাফার কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মরণঘাতি করোনাকে মাথায় রেখেই রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা সাজিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। করমুক্ত আয়েরসীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করেছেন। অনলাইনে কর দিলে প্রথমবারের মতো ২ হাজার টাকা কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যাবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার আগের মতোই ২৫ শতাংশ বহাল রেখে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির কর হার ৩৫ শতাংশ থেকে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে গ্রীন ফ্যাক্টরির সার্টিফিকেট আছে এমন প্রতিষ্ঠানের কর হার ১০ শতাংশ এবং গ্রীন ফ্যাক্টরীর সার্টিফিকেট নেই এমন প্রতিষ্ঠানের কর হার ১২ শতাংশ বিদ্যমান। যা ২০২০ সালের জুনে শেষ হবে। বিনিয়োগ ধরে রাখতে তা আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। করোনার প্রভাবে টিকে থাকতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের জন্য উৎসে কর সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ, যা ভিত্তিমূল্যে ২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। স্থানীয়ভাবে সংগ্রহীত এম এস স্ক্র্যাপ সরবরাহের উপর আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা বিবেচনায় নিয়ে এম এস স্ক্র্যাপ সরবরাহের উৎসে কর দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। রসুন ও চিনি আমদানীতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে তা কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। তৈরি পোষাক খাতে পণ্য রপ্তানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করতে আগাম উৎসে কর রহিত করা হয়েছে।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিনা প্রশ্নে শেয়ারবাজার, বন্ড, জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট, সঞ্চয়পত্র, অ্যাপার্টমেন্ট কালো টাকা সাদা করা যাবে। তবে টাকা পাচার বন্ধে আন্ডার ইন ভয়েসিং ও ভুয়া বিল প্রমাণিত হলে ৫০ শতাংশ জরিমানার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

করোনার কারণে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেরায় ভ্যাট আইনের বেশ কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে স্থানীয় শিল্পের অগ্রাধিকার দিয়ে শিল্পের কাঁচামাল আমদানীতে আগাম কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। রেয়াত সুবিধা ২ করবর্ষ থেকে বাড়িয়ে ৪ করবর্ষ করা হয়েছে। রেয়াত গ্রহণের আওতা বাড়িয়ে ৮০ শতাংশ করা হয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া ও ফার্স্টট্রাক প্রকল্পের মূসক অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে ভারী প্রকৌশল, অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেটর. ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনারসহ কতিপয় শিল্পকে বিদ্যমান মূসক ও সম্পূরক শুল্কের অব্যাহতির প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। স্থানীয় পর্যায়ে সরিষার তেলের উপর মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। করোনা টেস্টের কিট আমদানী, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পিপিই, সার্জিক্যাল মাস্ক উৎপাদন ও স্থানীয় পর্যায়ের মূসক অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মেডিটেশনের ওপর মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তামাকজাত পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

করোনাভাইরাসের কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক কর যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পেঁয়াজ আমদানীতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। লবন আমদানীতে মুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মৎস্য ও পোল্ট্রি শিল্পের রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ২টি উপকরণ যুক্ত করা হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের জন্য শিল্পখাতে শুল্ক আরোপ ও রহিত করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। মধু আমদানীতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্পে কতিপয় পণ্যে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বন্ড সুবিধা যথাযথ ব্যবহার এবং লাইসেন্সিং বিধিমালা যৌক্তিকীকরণ করার প্রস্তাব করেছেন। পাদুকা শিল্পের তিনটি কাচামাল আমদানীতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ডিটারজেন্ট তৈরির কাঁচামালে শুল্ক কমানো হয়েছে। স্বর্ণ আমদানীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সরকারের মোট ব্যয় : আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকার মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। চলতি বাজেটে যা ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আবার সংশোধিত বাজেটে সেটি কমিয়ে করা হয় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ফলে সংশোধিত বাজেটের চেয়ে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী বাজেটে সরকার পরিচালন ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। যা চলতি বছরের চেয়ে ৩৭ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বেশি।

অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। সম্পদ সংগ্রহ, ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ ইত্যাদি পরিচালন বাবদ মূলধন ব্যয় হিসেবে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৬ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। খাদ্য হিসাব বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহে ঋণ ও অগ্রিম (নীট) বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া উন্নয়ন ব্যয় বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নয় এবং নিজস্ব উৎসের রাজস্ব থেকে অর্থায়নকৃত উন্নয়নমূলক কর্মসূচি তথা স্কিম বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা। এছাড়া এডিপি বহির্ভূত কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।
সরকারের আয় :
আগামী অর্থবছরে সরকারের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া আগামী অর্থবছরে সরকার বৈদেশিক অনুদান পাবে ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের আয় হবে ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করসমূহ থেকে রাজস্বে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ :
আগামী অর্থবছরের অনুদান ব্যতীত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকার ৮৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ নেবে। তবে আগামী অর্থবছরে ১২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করতে চায় সরকার। তাই এক্ষেত্রে আগামী বাজেটে নীট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) যা আছে ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়ে ঘাটতির বড় একটি অংশ পূরণ করতে চায় সরকার। ব্যাংক খাত থেকে ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে চায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নিতে চায় ৫ হাজার কোটি টাকা।

৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য :
আগামী অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। তবে টাকার অংকে সংশোধিত জিডিপির তুলনায় নতুন জিডিপি ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা বেশি। চলতি বাজেটে (সংশোধিত) জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ লাখ ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যদিও বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে; আর আগামী বছরে তা হতে পারে ১ শতাংশ।

৫ দশমিক ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি :
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও এক ধরনের সুফল পাওয়া যাবে বলে সরকার আশা করছে। সেজন্য নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রণোদনা :
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে রাখা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। এছাড়া শিল্প খাতের জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি এবং কৃষি খাতের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা রাখা হয়েছে।

এবার গতানুগতিক ধারার বাজেট থেকে বেরিয়ে এসে বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আর অর্থনীতি যাতে আগের ধারায় ফিরতে পারে সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন। বাজেট বক্তৃতায় সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভুত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয় তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। এবারের বাজেটে সঙ্গত কারনেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে নানা ধরনের কৃষি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা স¤প্রসারণ, ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যকে পুনরুদ্ধার করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাবনা করেছে। এছাড়াও দেশের সাধারণ মানুষের জীবন টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের বিস্তুর তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

সবশেষে তিনি আশার কথা দিয়ে শেষ করেছেন তার বাজেট বক্তব্য। শেষ লাইনে বলেছেন, মহামারী করোনাভাইরাস থেকে আমরা আবারও ফিরে যাবো স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়, উন্মোচিত হবে এক আলোকিত ভোর।

রোববার পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি
জাতীয় সংসদের নতুন অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেট অধিবেশন আগামী ১৪ মে পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা ৫২ মিনিটে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশন আগামী রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। এর আগে বেলা তিনটায় জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের কলেবর রাখা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এটি গতানুগতিক বাজেট নয়। সরকার এটিকে অর্থনৈতিক উত্তরণের বাজেট বলছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করোনাভাইরাস পরবর্তী অর্থনীতি মোকাবিলায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে নতুন বাজেটে। সংসদ মূলতবি ঘোষণার আগে অর্থমন্ত্রী অর্থবিলটি সংসদে পেশ করেন।

এর আগে দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ ভবনে বিশেষ বৈঠকে মন্ত্রিসভা নতুন অর্থবছরের প্রস্তবিত বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এটি দেশের ৪৯তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাজেট।



 

Show all comments
  • Arfan Chowdhury Araf ১২ জুন, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    করোনা পরবর্তী শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই ।প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক ২০১৮ প্যানেলে নিয়োগ চাই ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shekh Farid Shekh Farid ১২ জুন, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে বলছি এই বাজেটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু না হয়
    Total Reply(0) Reply
  • Khondaker Sharif ১২ জুন, ২০২০, ১:০৯ এএম says : 0
    কাজগুলো যেন ঠিকঠাক মত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Shariar Ahmed Olid ১২ জুন, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তথ্যখাতে ১৪১৫ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • M.Muquit Ahmed /London ১২ জুন, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এবারকার বাজেট এক সেরা বাজেট বলে মনে করি । স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি , বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি ,নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমা ,প্রবাসীদের রেমিটেন্সে ২% প্রনোদনা অব্যাহত , স্বর্ণ বার আমদানীতে ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহার সবই হচ্ছে বাজেটের ভালো দিক । বাজেটের একমাত্র খারাফ দিক হচ্ছে ঢালাওভাবে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়া ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jabair Ahammad ১২ জুন, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    ইন্টারনেটের দাম কমানো উচিত। ভবিষ্যতে বাসায় বসে কাজ করার সুযোগ তৈরি করা উচিত ছিলো। দাম বৃদ্ধিতে অর্থনীতির গতিরুদ্ধ হয়ে যাবে। এই বিষয়গুলি কি পলিসি মেকারদের মাথায় ঢোকে না??!! এটা তো রকেট সায়েন্স না!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Ali Refai ১২ জুন, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
    মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর কর বাড়ানোর অর্থ হলো মোবাইল অপারেটরদের আয় বাড়িয়ে দেয়ার পাক্কা বন্দোবস্ত!..এরা এখন পাবলিকের পকেটে চিরুনি চালাবে!! এতে করে অতীতের কর ফাঁকির ফলে প্রদানকৃত মোটা অঙ্কের জরিমানার অর্থ ও গ্রাহকের পকেট থেকে আদায় হবে সাথে কম সেবায় অধিক মুনাফা অর্জন তো থাকছেই! এটা কি গ্রাহক বান্ধব নাকি অপারেটর বান্ধব কর হলো!!??
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১২ জুন, ২০২০, ৮:২৫ পিএম says : 0
    বাজেট সম্পর্কে এককথায় বলতে গেলে বলতে হয় বাজেট সঠিক ভাবেই প্রণয়ন করা হয়েছে। এখানে অর্থমন্ত্রী যেসব কথা বলেছেন সেটা অবশ্যই জনগণের কল্যাণকর কথা। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে এই বাজেট বাস্তবায়িত করা নিয়ে...... আমরা সর্বক্ষেত্রেই দেখতে পেয়েছি বর্তমান সরকারের সবচেয়ে দুর্বল যায়গা হচ্ছে বাস্তবায়নে ব্যার্থতা। এই সরকার তাদের প্রতিটি কল্যাণকর আইন সঠিকভাবে বাস্তবায়নের অভাবে দুর্নাম কুড়াচ্ছে এটাই দেখে আসছি। আওয়ামী লীগ সরকার খুবই সুন্দর ভাবে কথা বলেন কিন্তু সেভাবে বাস্তবায়িত করতে পারেননা। আবার জনগণের কল্যাণকর আইন প্রণয়ন করেন কিন্তু সেটাও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে পারেননা। ফলে সর্বক্ষেত্রে এনাদের লেজে গোবরে অবস্থা হয়ে যায়। এবারের বাজেটে পয়সার জন্যে সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে এটা বুঝা যায়। সেখানে কিছু শক্ত শর্ত আরোপ করার প্রয়োজন ছিল এটাই সবার অভিমত। এখন দেখার বিষয় বর্তমান সরকার তাদের দেয়া বাজেটের কত ভাগ সঠিকভাবে বাস্তবায়িত করতে পারে। আল্লাহ্‌ আমাদের দেশের সরকারি আমলা ও কামলাদেরকে সত্য কথা বলা ও সততার সাথে চলার ক্ষমতা প্রদান করুন। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Zaber khan ১২ জুন, ২০২০, ১১:২০ পিএম says : 0
    He also said AL is more powerful than Corona!!! Why can't he stop doing these things? Is it good for him to be wrong in everything he said? He is the Secretary General of the biggest party in Bangladesh. He must be careful about what he says.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ