দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য দুটি অলৌকিক শক্তি সৃষ্টি করেছেন। প্রথমত: নবুয়্যত, এ নবুয়্যতপ্রাপ্তরা হলেন নবী-রাসুলগণ। দ্বিতীয়ত: বেলায়ত, এ বেলায়তের অধিকারি হলেন আউলিয়ায়ে কেরাম। যারা নবীগণের সাহায্যকারী ও প্রতিনিধি। সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকে এ দুই শ্রেণীর মাধ্যমে হেদায়তের কার্যক্রম চলে আসছে। সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (দ.) এর ইন্তেকালের পর এ দায়িত্ব এককভাবে পালন করে আসছেন হক্কানী-রব্বানী আলেম, আউলিয়ায়ে কেরাম। যে সব মহামনীষির পদধূলির বদৌলতে এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার-প্রসার হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সুলতানুল আরেফিন হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (র.) অন্যতম। তিনি পশ্চিম এশিযার ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ইরানের রাজধানী তেহরানের পার্শ্ববর্তী কুমিস প্রদেশের অন্তর্গত খোরাসানের প্রসিদ্ধ শহর বোস্তাম বা বিস্তামের মোবদান নামক এলাকার সম্ভ্রান্ত ১২৮ হি/৭৪৫ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান বোস্তাম বা বিস্তামের দিকে সম্পর্ক করে তাঁকে বোস্তামি/ বিস্তামি বলা হয়। তাঁর সম্মানিত পিতার নাম ঈসা, তিনি তাবেয়িনদের সাক্ষাতপ্রাপ্ত তবেতাবেয়িন। পিতামহের নাম সরূশান,যিনি প্রথম জীবনে অগ্নিপূজক ছিলেন। পরে কোন একজন মুসলিম ধর্ম প্রচারকের নিকট ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর মাতা সতী সাধ্বী লজ্জ্বাবতী এবং অতি পর্দাশীন চরিত্রবান মহিলা ছিলেন। তাঁর পিতামাতা নিজেরা সৎভাবে জীবনযাপনের পাশাপাশি যোগ্য সন্তানের আশায় তাঁদের দাম্পত্য জীবনের কোন বিষয়ে শরীয়তের বিন্দু পরিমাণও যেন লঙ্ঘন না হয় সেদিকে খুব সতর্ক থাকতেন। তারই ফলশ্রুতিতে তাঁদের তিন সন্তান আদম, বায়েজিদ ও আলী সুফি সাধক এবং বুজুর্গ ছিলেন। তাঁর বংশধারা হল -আবু ইয়াজিদ তাইফুর বিন ঈসা বিন সরূশান/ আদম বিন ঈসা বিন আলী আল বোস্তামী।
মাতৃভক্তি : হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (র.) এর মহীয়সী জননীর প্রতি তাঁর ভক্তির বিষয়টি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। পিতা তাঁর বাল্যকালেই ইন্তেকাল করেন বিধায় পিতার সেবা করার সুযোগ না হলেও মায়ের যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তা খুবই আশ্চর্যজনক। একদিন বায়েজিদ বোস্তামী(র.) ’র মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসিতে পানি নেই। তিনি রাত দুপুরে ছুটলেন বহু দুরের ঝর্ণা হতে পানি আনতে। কিন্ত পানি এনে দেখলেন মা জননী আবারো ঘুমিয়ে পড়েছেন। ঘুম থেকে মাকে জাগানো ঠিক হবে না ভেবে তিনি সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষায় রইলেন মায়ের ঘুম ভাঙ্গার? সেই রাতটি ছিল শীতের রাত, চারদিকে যেন কনকনে ঠান্ডা । রাত শেষে পূর্ব আকাশে ফুটে উঠল ঊষার আলো । সকাল হল। মা জেগে দেখলেন পুত্র বায়েজিদ তখনো দাঁড়িয়ে আছে গ্লাসে পানি নিয়ে । মায়ের প্রতি এই ভক্তি দেখে মা আবেগ তাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন । আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন- আমার ছেলেকে আপনার নেক বান্দা হিসাবে কবুল কর! আর মায়ের দোয়ার বরকতে হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে হিজরি তৃতীয় শতাব্দীর বিশ্ব বরেণ্য আউলিয়াদের তালিকায় স্থান করে নিলেন। এ ঘটনার স্মতিচারনে রচিত কবি কালিদাস রায়ের মাতৃভক্তি কবিতাটি বেশ বিখ্যাত।
শিক্ষা জীবন: হযরত বায়েজিদ বোস্তামি (র.) যেমনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধার অধিকারী, তেমনি পড়ালেখায় বিশেষ মনোযোগী। ফলে শিক্ষা জীবনের প্রথম পর্যায়েই শিক্ষকদের শুভ দৃষ্টি তাঁর ওপর পড়ে। তাঁর চলাফেরা,কথাবার্তা, আদব-ভক্তি এবং নিয়মিত যাতায়াত ও পড়াশোনা শিক্ষকগণকে মুগ্ধ করে। কুরআন-হাদিস, ফিক্হ, তাসাউফ এবং শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান লাভের মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে মায়ের অনুমতি এবং দোয়া নিয়ে শামসহ বিভিন্ন দেশের দিকে যাত্রা করেন। দীর্ঘ তিন বছরে প্রায় একশত সত্তর জন যুগ বিখ্যাত মুহাদ্দেস, ফক্বীহ এবং বিজ্ঞ আলেমগণের সান্নিধ্যে গিয়ে পবিত্র কুরআন-হাদিসসহ শরীয়তের বিভিন্ন শাখা উপশাখায় গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এ তিন বছর জ্ঞানার্জনে এমন সাধনা করেছিলেন যে, পানাহার, আরাম-আয়েশ এবং নিদ্রা পরিত্যাগ করতঃ বিরামহীনভাবে এক দেশ হতে অন্য দেশে, এক জ্ঞানির জ্ঞান আহরণ করে অন্য জ্ঞানির সন্ধানে ছুটে ছিলেন। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।