দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আল্লাহ তায়ালা মহা গ্রন্থ আলকুরআনে অনেক জায়গায় নিকটাত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃস্থদের দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। দান করা ইসলামের অনবদ্য ও শাশ্বত এক বিধান। ছাদাকাহ তথা দান বান্দার প্রতি পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার অন্যতম নির্দেশনা। এর মাধ্যমে মানব জীবনের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধিত হয়। স্বচ্ছল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তি কর্তৃক অসচ্ছল ও অসামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কিছু দান করাকে ছাদাকাহ বলে। ছাদাকাহ প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে। বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিএ ছাড়াও ব্যাপক অর্থে মানুষের সাথে হেসে কথা বলা, ভালো পরামর্শ দেওয়া, সৎকাজের আদেশ করা ও অন্যায় কাজের নিষেধ করা অর্থ্যাৎ যা দ্বারা মানুষের উপকার হয়, সবকিছুই সাদাকার অন্তর্ভূক্ত। তবে যাকাত ও ফেতরা হলো বাধ্যতামূলক ছাদাকাহ। এছাড়াও অন্যান্য দান ঐচ্ছিক ছাদাকার পর্যায়ভুক্ত। করোনা মহামারীতে গরীব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীকে সাধারণ সাদাকাহ বা দান নিয়ে আজকের আলোচনা ।
আজকের করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর গতি শ্লথ হয়ে মানুষ কোয়ারাইন্টাইনে নিজ নিজ বাড়ী-ঘরে জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। সমাজের নিম্ম আয়ের মানুষ চরম অর্থ সঙ্কটে, তীব্র দারিদ্রতার কষাঘাতে চরম দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। নিম্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা অন্যের কাছে অভাবে হাত পাততে পারে না, তাদের অবস্থা আরো করুণ। দিন মুজুর ও ‘কাজ আছে, খাবার আছে; কাজ নেই খাবার নেই’- এ শ্রেণির মানুষের কোয়ারাইন্টানে বন্দি জীবনে আয়- রোজগারের চাকা একবারেই বন্ধ। কি এক ভয়াবহ দূর্বিষহ জীবন-যাপন তারা করে যাচ্ছে। এর চেয়ে ভয়াবহ খবর হলো, ব্রাকের গবেষণা মতে, দেশে এখন ১৪% মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। সরকার কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে আলোকিত কিছু মানুষ প্রতিবেশী গরীবদের সহযোগিতা করছে। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা ও আয়োজন যথেষ্ট অপ্রতুল; তাই প্রয়োজন স্বাবলম্বি ও ধনীদের এ কঠিন সময়ে অসহায় আত্মীয়-স্বজন ও অভাবী প্রতিবেশীদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ানো ও অসহায়দের সাহার্য্যার্থে সামাজিকভাবে গঠনমুলক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
দুর্দিনে মানুষের প্রতি আন্তরিকতার সাথে প্রদত্ত এই দান-সাদাকাহ কিয়ামতের কঠিন সময়ে নাজাতের উসিলাহ হবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিজিকের কিয়াদাংশ দান করে দাও এমন এক মহা সংকটপুর্ণ দিন আসার পূর্বে যে দিন না কোন বেচা কিনা চলবে, না কোন বন্ধুত্ব কাজে আসবে এবং আল্লাহর অনুমতি ভিন্ন না কোন সুপারিশের সুযোগ হবে।’ (২:২৫৪) দানের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘এবং তোমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করবে, উহার প্রতিদান তোমাদিগকে পুরাপুরি দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি কোন প্রকার জুলুম করা হবে না।’ (৮:৬০) দান করলে ব্যক্তির সম্পদ অনেকগুন আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে দেন। যেমন তিনি বলেন- ‘আল্লাহ তাআলা সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সাদাকা কে বর্দ্ধিত করে দেন।’ (২: ২৭৬) এ উক্তি আখেরাতের দিক দিয়ে তো সম্পূর্ণ পরিষ্কার; সত্য উপলব্ধির সামান্য চেষ্টা করলে দুনিয়ার দিক দিয়েও সুস্পষ্ট। কারণ সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়। মানুষকে দান করা অসাধারণ এক অনবদ্য পবিত্র কাজ। এ জন্য দানের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে দয়াময় আল্লাহ অসাধারণ উপমা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেনঃ ‘যারা আপন ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো ঐ দানার মত, যেখান হতে এরূপ সাতটি ছড়া বের হলো যার প্রত্যেকটিতে একশত করে দানা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (২: ২৬১) এ আয়াতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অভাবগ্রস্থ, দীন-দুঃখীদের জন্য ব্যয় করার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এতে করে সম্পদের প্রবৃদ্ধি বাড়াবেন তিনি সীমাহীনভাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।