Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোবাইল ব্যবহারে খরচ বাড়বে

গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ : এমটব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২০, ৪:৫৮ পিএম | আপডেট : ১০:৪০ পিএম, ১১ জুন, ২০২০

মোবাইল ফোনের সেবার ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে নতুন অর্থবছরে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে খরচ বাড়তে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন তাতে সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছেন। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা, এসএমএস পাঠানো এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও বেড়ে যাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল। প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয় ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে। তখন ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব হলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল।

মোবাইল ফোন অপারেটররা বলছে, এর ফলে বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ সারচার্জ, ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং অন্যান্য মিলে মোট কর ২৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশে। সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়লে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেউ যদি ১০০ টাকার সেবা নিতে চান, তাহলে ৭৫ দশমিক শূন্য ৩ টাকার সেবা নিতে পারবেন। ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে সরকারের পকেটে।

শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটর রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, উচ্চ করভারে জর্জরিত মোবাইল সেবার ওপর তাই নতুন করে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রাহকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে। সব ধরনের মোবাইল সেবা ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুঃখজনক। এনবিআরের জারি করা এসআরও অনুযায়ী, আজ মধ্যরাত ১২টা থেকে সব ধরনের মোবাইল সেবার ওপর নতুন এসডি হার কার্যকর করা হবে, এ বিষয়ে সকল প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব)- এর মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবঃ) বলেন, সরকার নিয়মিতভাবে প্রতিবছর এই খাতের উপর আরও বেশি করে করের বোঝা চাপিয়ে একে আরও দুর্বল করে তুলছে; গ্রাহকদের উপর ফেলছে বাড়তি চাপ। ফলে দেশের জিডিপিতে মোবাইলের বর্তমান অবদান ৭ শতাংশ থেকে যে দুই অংকের ঘরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল তা আর অর্জিত না-ও হতে পারে।

তিনি বলেণ, সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এমনিতেই মানুষদের মধ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে, মোবাইল মাধ্যম হয়ে উঠেছে সব যোগাযোগের মূল চালিকা ও দেশ ডিজিটাল ইকনোমির দিকে এগিয়ে চলছে; ঠিক সে সময় এ ধরনের করের বোঝা কোনভাবেই দেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ বোঝা দরিদ্র মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে পড়বে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে অন্তরায় হয়ে উঠবে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে এটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়।

মোবাইলের সর্বনি¤œ মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব
রাজস্ব আদায়ের জন্য আমদানি পর্যায়ে মোবাইল ফোনের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় স্থানীয় মোবাইল সংযোজন খাতে ৫ শতাংশ রেয়াতি হারের মূসক একবছর বাড়ানোরও প্রস্তাব করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল টেলিফোন সেট উৎপাদনের উপর মূসক অব্যাহতি এবং সংযোজন খাতে ৫ শতাংশ হারে মূসক বিদ্যমান রয়েছে। এ অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। দ্রæত বর্ধনশীল এ খাতের স¤প্রসারণে এ সুবিধা আরো এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, আইসিটি খাতের গুরুত্বপূর্ন অনুসঙ্গ সেলুলার ফোন উৎপাদন ও সংযোজন শিল্পে রেয়াতি সুবিধা প্রদানে স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি সেলুলার ফোন উৎপাদন ও সংযোজনকারী শিল্প গড়ে উঠেছে। সেলুলার ফোন উৎপাদন উৎসাহিত করা ও সংযোজন শিল্প প্রসারে আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা আরো বিনিয়োগ বান্ধব ও যৌক্তিকীকরণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, এ শিল্পের প্রতিরক্ষণ এবং আমদানি পর্যায়ে সঠিক মূল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে যথাযথ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যে সেলুলার ফোনের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণেল প্রস্তাব করছি।

ফোনের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বিএমপিআইএ যুগ্ম সম্পাদক মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মানসম্মত হ্যান্ডসেট বিক্রিতে এটি দরকার ছিল। আমাদের জানামতে, হ্যান্ডসেটের ন্যূনতম মূল্য সাড়ে ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত ৩০ ডলার এবং এর উপরে ৪০ ডলারের মতো প্রস্তাব রয়েছে। তবে বিশ্ববাজারের দাম বৃদ্ধি বা হ্রাসের সাথে সাথে সমন্বয় করা হলে ব্যবসায়ীদের সমস্যা থাকবে না বলে তিনি মনে করেন। মেজবাহ বলেন, স্মার্টফোন ও ফিচার ফোনে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি না হওয়াতে করোনাকালীন সময়ে সুবিধা হবে। হ্যান্ডসেট আমদানিতে প্রায় ৬০ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হয়।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ