Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবহেলায় পড়ে আছে ১০টি আইসিইউ শয্যা

ঢাকা শিশু হাসপাতাল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২০, ১২:৩৩ এএম

করোনার প্রাদুর্ভাবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার চলছে। কোথাও বেড খালি নেই। একটা আইসিইউ শয্যা যেন সোনার হরিণ। একেকটি আইসিইউ শয্যার জন্য কমপক্ষে ১৫জন রোগীর সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আইসিইউ’র অভাবে রোগীরা রাস্তায় মারা যাচ্ছে। পিতার কোলে সন্তান, ভাইয়ের সামনে বোনের করুণ মৃত্যু হচ্ছে। আইসিইউ নিয়ে এমন হাহাকারের মধ্যে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তুত দশটি আইসিইউ শয্যা পড়ে আছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে শিশু হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান ডা. জহিরুল ইসলাম লিটন বলেন, আমাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। দেয়াও হচ্ছে না। আমার কাছে কোনো কাগজপত্রও নেই। করোনার সময় যদি আমরা এটা শুরু করতে পারতাম তাহলে কাজে লাগতো।

শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুর দিকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও শিশু হাসপাতালের যৌথ অর্থায়নে তৈরি হয় একটি বর্ধিত অংশ। যেখানে রয়েছে একটি অপারেশন থিয়েটার, আট শয্যার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড, চার শয্যার সার্জিকাল আইসিইউ ও ছয় শয্যার এইচডিইউ ইউনিট। এর মধ্যে ওটি ও পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডের কাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে থেমে আছে সার্জিকাল আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিটের কাজ। অথচ আইসিউই শয্যার অভাবে একের পর এক নিভছে করোনা রোগীদের প্রাণের প্রদীপ।

করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর সব কটি হাসপাতালেই এখন আইসিইউ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাঁচার জন্য মানুষ আইসিইউ পেতে ছুটছে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। ছুটতে ছুটতে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। খোদ চিকিৎসকরাও পাচ্ছেন না আইসিইউ বেড। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন নিজের কর্মস্থলে আইসিইউ পাননি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হলে গত ১৫ এপ্রিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন করোনা রোগীর আইসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন বলে চিকিৎসকরা লিখে দিচ্ছেন। কিন্তু কোনো বেড খালি নেই। আইসিইউ সাপোর্ট না পেয়ে প্রতিদিনই রোগী মারা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যার আইসিইউ প্রয়োজন তাকে আইসিইউতেই চিকিৎসা দিতে হবে। তা না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না।

এহেন পরিস্থিতিতে শিশু হাসপাতালের আইসিইউ বেডগুলো কাজে লাগানো গেলে অনেক রোগীই বাঁচানো যেতো বলে অনেকেরই ধারনা। ৭০ কোটি টাকায় কেনা ১০টি আইসিইউ কেন অবহেলায় পড়ে আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, এটা যার করার কথা তার মা করোনায় মারা গেছেন। সে নিজেও অসুস্থ। তাই কাজটি শেষ করতে পারেনি।

দেশে বর্তমানে করোনা রোগীর চিকিৎসায় পূর্ণ আইসিইউ বেড রয়েছে ৩৯৯টি। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রæটি, অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৫০টিরও বেশি বন্ধ রয়েছে। আবার ভিআইপি কোটা এবং বিত্তশালীদের বুকিংয়ে রয়েছে আরো অন্তত ৫০টি। করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে তাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, আক্রান্তের ৫ শতাংশও যদি গুরুতর পরিস্থিতির শিকার হয় বাংলাদেশের পক্ষে সেটি মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ