Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫২ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই মারাত্মক রূপ নিচ্ছে। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় দিশেহারা উত্তর জনপদের লাখ লাখ মানুষ পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিস্তা, ধরলা, যমুনাসহ উত্তরাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৭টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২২ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, খাবার এবং জ্বালানি সঙ্কট। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশু-পাখি নিয়ে লোকজন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু-পাখিরও তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় ছিটেফোঁটা সরকারি ত্রাণ পৌঁছলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম।
ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা
হালিম আনছারী, রংপুর থেকে : তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজের সবক’টি গেট খুলে দেয়ায় হু হু করে ধেয়ে আসছে বানের পানি। ফলে তিস্তা ও ধরলাসহ উত্তরাঞ্চলের সবক’টি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। তিস্তা ও ধরলার সবক’টি পয়েন্টেই পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। এসব মানুষের দুর্ভোগ ইতিমধ্যে চরমে পৌঁছেছে। খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির অভাবে তারা দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে। তিস্তাসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ পানিবন্দি লোকজন। গতকাল তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভয়াবহ পানির চাপ ও স্রোতের কারণে ইতিমধ্যেই ডালিয়া ব্যারেজের সবক’টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে গতকাল (সোমবার) সকাল ৭টা থেকে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলার শত শত একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঘর-বাড়ি, গাছপালাসহ ক্ষেতের ফসল গ্রাস করে নিয়েছে। বানের পানি ঢুকে পড়ায় হাজার হাজার একর জমির পটল, বেগুন, করলা, মরিচ, ঝিঙ্গাসহ বিভিন্ন রবিশস্য মরে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এসব এলাকায় মানুষের খাদ্যাভাব দেয়ার পাশাপাশি গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। গত এক সপ্তাহেরও বেশিদিন ধরে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জ্বালানি সংকটও দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে।
এদিকে, তিস্তা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপলোর বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে।
ইতোমধ্যে তাম্বুলপুর ও ছাওলা ইউনিয়নের কমপক্ষে দেড় শতাধিক বসতবাড়ি, একটি মসজিদ এবং প্রায় ৭০/৭৫ একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো ভিটেমাটি হারিয়ে বেড়ি বাঁধে আশ্রয় নিলেও তাদের মাঝে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী প্রদান করা হয়নি। ফলে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে।
মারাত্মক খরস্রোতা তিস্তা গতিপথ পরিবর্তন করে পশ্চিম-উত্তরদিকে প্রবাহিত হওয়ায় তাম্বুলপুর ইউনিয়নের রহমতচর, কড়াইপাড়া, মইন্নার চর, মন্ডলপাড়া, ছাওলা ইউনিয়নের চর ছাওলা কামারের হাট, আম্বারের চর, জুয়ানের চরসহ ২২টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
ইতোমধ্যে কড়াইপাড়া জামে মসজিদসহ ওই গ্রামগুলোর ১৫০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৭০/৭৫ একর আবাদী জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। কাউনিয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষাধিক পরিবার বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এসব এলাকার ফসলি জমিসহ বসতভিটে স্থানভেদে কোমর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে বানিবন্দি এসব পরিবারের মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে।
পানিবন্দি সাড়ে তিন লাখ মানুষ
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা
গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলা করছে কুড়িগ্রামের সাড়ে তিন লাখ মানুষ। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ¯্রােতের টানে ভেসে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, স্কুল, প্রতিষ্ঠান। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাকা ও কাঁচা সড়ক ডুবে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সোমবার সকাল থেকে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৯ সে.মি ও ধরলার নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরকারি হিসেবে ৯টি উপজেলার ৫৩টি ইউনিয়নের ৬৩ হাজার পরিবারের ৫শ’ গ্রামের তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কিন্তু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের দেয়া তথ্য মতে সাড়ে তিন লাখের উপর মানুষ বন্যার পানিতে ভাসছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৮, ধরলায় ২৫, তিস্তায় ৫ ও দুধকুমারে ১৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ফলে সোমবার ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৯ সে.মি. ও ধরলার নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যাত্রাপুর বাজারের নিকট বাঁধের ১৫০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় পানির তোড়ে ১৫টি বাড়ি ভেসে গেছে। চর যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের মুখে। তিনি আরো জানান, ২০০৭ সালের পর কোনো বন্যায় পানি এমন উচ্চতায় উঠেনি। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই বন্যায় ২০০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ কিঃ মিটার বাঁধ। তবে দ্রুত তা মেরামতের চেষ্টা চলছে।
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কে দু’দিন ধরে গরু ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রবল ¯্রােতের টানে ভেসে গেছে অন্তত অর্ধশত ঘর-বাড়ি। রাস্তা, গুচ্ছগ্রাম ও বাঁধে আশ্রিতদের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পয় নিষ্কাশন সংকটের পাশাপাশি বেড়েছে পশু খাদ্যের সংকট। কৃষি বিভাগের মতে প্রায় ১৮ হাজার কৃষকের এক হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
ফুলবাড়ীতে পরিস্থিতির চরম অবনতি
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : গত ৭ দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধরলা, নীলকমল, বারোমাসিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি, বীজ তলাসহ ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার গোরকম-প, চর গোরকম-প, পেছাই, পশ্চিম ফুলমতি, শিমুলবাড়ী, রোশন শিমুলবাড়ী, সোনাইকাজী, যতীন্দ্র নারায়ণ, কবিরমামুদ, রামপ্রসাদ, প্রাণকৃঞ্চ, চন্দ্রখানা, পশ্চিম ধনিরাম, পূর্ব ধনিরাম, চর মেকলি, বড়লই, বড়ভিটা, চর বড়লই, খোচাবাড়ী ও রাঙ্গামাটিসহ প্রায় শতাধিক গ্রাম। এসব এলাকার প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ধরলার তীরবর্তী সোনাইকাজী রামপ্রসাদ গ্রামের ওয়াপদা বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় ধরলার পানি হু-হু করে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে বানভাসি মানুষ ও গবাদিপশুর।
গাইবান্ধায় পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ঘাঘট নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২ সে. মি. বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৫ সে. মি. এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৪০ সে. মি. বেড়ে ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৪ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।
এতে করে দু’সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি থাকা জেলার ২ লক্ষাধিক বন্যাকবলিত পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগে চরম আকার ধারণ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য সংকট, গবাদিপশু সংরক্ষণ ও পশু খাদ্য সংকট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ।
এদিকে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে চিনিরপটল, পবনতাইড়সহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়েছে। ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের গোদারহাট, কুঠিপাড়া পয়েন্টে কিছু অংশ ধসে যাওয়ায় বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। তা রক্ষার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সুন্দরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজারে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দির সংখ্যা বর্তমানে ৫০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ হাজার। পানিবন্দিরা খাদ্য, ওষুধপত্র, বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে।
লালমনিরহাটে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা : ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ী ঢল ও বর্ষণের ফলে লালমনিরহাট জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন নিম্নাঞ্চল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চরাঞ্চলসহ প্লাবিত এলাকার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বানভাষি মানুষগুলোর দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বানভাষি পানিবন্দি মানুষগুলোর খাদ্যাভ্যাব চরম আকার ধারণ করেছে। প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় পানিবন্দি মানুষগুলোর অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।
লালমনিরহাট জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন নতুন এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
বন্যার কারণে প্লাবিত এলাকা প্রায় ৩০ হাজার ঘর-বাড়ী আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলোর ঘরে খাবার থাকলেও শুকনা জায়গার অভাবে রান্না করে পারছে না। ফলে অধিকাংশ পানিবন্দি পরিবার অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় খাওয়ার অভাবে গৃহপালিত পশু নিয়ে দিশেহারা এখন পানিবন্দি মানুষগুলো।
মোগলহাট বিজিবি ক্যাম্পের সদস্য ভারতের জারীধরলা এলাকার কতিপয় বানভাষি মানুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেয়। বাধার মুখে ভারতীয় বানভাষি মানুষগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারেনি। ভারতীয়রা যেন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে।
বগুড়ার ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি
বগুড়া অফিস : উজান থেকে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টিপতে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বগুড়ার যমুনা তীরবর্তী ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। সোমবার বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকা গুলোর ৭৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অনেক লোকজন বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছে। ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন।
গত কয়েকদিন ধরে যুমনার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমা অতিক্রম করে। বগুড়ার জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতালা ও ধুনট উপজেলার মোট ১৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জে পরিস্থিতির অবনতি
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদীর পানি সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত জেলা সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাবাসিকে খাদ্য সংকট থেকে বাঁচাতে সোমবার থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে প্রশাসন।
আত্রাই-সিংড়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা : নওগাঁর আত্রাইয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল (সোমবার) ভোরে আত্রাই-সিংড়া পাকা সড়কের জগদাস নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে। ফলে ওই এলাকার শতশত হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। গত বেশ কয়েকদিন থেকে অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে আত্রাই নদীর পানি হুহু করে বেড়েই চলেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে একদিকে নদী এলাকার শত শত জনবসতি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির সম্মুখিন।
এদিকে নদীতে পানির চাপ বৃদ্ধির ফলে গতকাল ভোরে আত্রাই-সিংড়া পাকা সড়কের জগদাস নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙ্গে আত্রাই-সিংড়া সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এলাকার হাজার হাজার জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
ইসলামপুরে পরিস্থিতির আরও অবনতি
ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : ইসলামপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইসলামপুরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ ও গুখাদ্যের ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলো তাদের আত্মীয়-স্বজন বাড়ী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনায় বন্যার পনি বিপদসীমার ১৯.৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জে হাওরে পানি বৃদ্ধি
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও হাওরে পানি বদ্ধি পাচ্ছে। ফলে কৃষকের বীজ তলা, আউশ ধান, রোপা আমন, সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাচ্ছে। গতকাল সুরমার পানি ৮ সেন্টিমিটার কমলেও বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে ১ হাজার ৫ শত ৪১ হেক্টর বীজতলা, আউশধান, রোপা আমন ধান ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাছাড়া হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১১টি উপজেলার নুতন নুতন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ