Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নতুন বাজেটে গার্মেন্টসে প্রণোদনা

বিজিএমইএ’র প্রত্যাশা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২০, ১২:১৩ এএম

দেশে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি সরাসরি আঘাত হেনেছে দেশের গার্মেন্টস তথা তৈরি পোশাক খাতে। গত কয়েক মাসে একের পর এক বাতিল হয়েছে ক্রয়াদেশ। কাজ না থাকায় বন্ধ হচ্ছে অনেক পোশাক কারখানা। যেসব প্রতিষ্ঠান চালু আছে সেখানে কাজ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এসব কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে রফতানি।

এমন সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতে দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প খাতকে সচল রাখতে আসন্ন বাজেটে রফতানিতে নগদ প্রণোদনা বাড়ানোসহ বিশেষ নীতি সহায়তা চান গার্মেন্টস মালিকরা। তাদের দাবি চলমান বিশ্ববাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন বাজার তৈরি ও পণ্য উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো এবং রফতানি প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্যই প্রণোদনা দেয়া হবে। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা ৩১৮ কোটি ডলারের (২৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা) পণ্যের রফতানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে। এক হাজার ১৫০টি কারখানায় এসব রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে।

এই কঠিন সঙ্কটময় অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের কাছে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে এ খাতের সংগঠন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। তারা বলছে, করোনায় তৈরি পোশাক খাত হুমকির সম্মুখীন। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মার্কেট শেয়ার ৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ৪০ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়ে আসবে তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজার। তাই মানব সভ্যতার শত বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সঙ্কট মোকাবিলায় প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক সাহসী সিদ্ধান্ত। পোশাক খাতকে কঠিন সঙ্কট থেকে বের করে আনতে আগামী বাজেটে বেশকিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক জানান, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে আসন্ন বাজেটে দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহারে উৎপাদিত পণ্য রফতানিতে ১০ শতাংশ এবং আমদানি কাঁচামাল ব্যবহারে উৎপাদিত পণ্য রফতানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা। চলতি অর্থবছরে এই দুই ধরনের পণ্য রফতানিতে যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ নগদ সহায়তা রয়েছে। মোট পোশাক রফতানিতে দেশি কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্যের অবদান প্রায় ৫৫ শতাংশ। বিশ্ব মন্দার বাজারে টিকে থাকার জন্য এ নগদ সহায়তা বাড়ানোর দাবি পোশাক মালিকদের।

বিজিএমইএ বাজেট প্রস্তাবে রফতানি সংশ্লিষ্ট স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত সব পণ্য ও সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট মওকুফসহ রিটার্ন দাখিল করা হতে অব্যাহতি চেয়েছে। এছাড়া আগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সেবাসমূহের ক্ষেত্রে বকেয়া ভ্যাট দাবি না করা এবং পোশাকশিল্পের আয়কর ও শুল্ক সংক্রান্ত চলমান সুবিধা বহাল রাখার দাবি করেছে বিজিএমইএ।
ভার্চুয়াল মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে ক্রেতাদের বাতিল করা রফতানি আদেশ, যা কারখানায় তৈরি পণ্য বা কাঁচামাল অবস্থায় পড়ে আছে সেগুলোকে অনলাইনের মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়ের সুযোগ দেয়া। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সংক্রান্ত রফতানি ব্যবসাবান্ধব বিশেষ নীতিমালা করা। ভার্চুয়াল মার্কেট তৈরির ওপর জোর দিতে হবে জানিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, এখন পুরো বিশ্ব অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করছে। অনলাইনে ব্যবসায়ী টু ভোক্তা (বিটুসি) মার্কেটে এগোতে হবে। এতে করে ক্রেতাজোটের দিকে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে না। পাশাপাশি পণ্য উৎপাদনের ধরন পরিবর্তন করতে হবে। এজন্য সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা জরুরি।

এছাড়া প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে বিশেষ সহায়তা, পণ্য বহুমুখীকরণে বিশেষ সহায়তা এক্সিট পলিসি তৈরি করা, ভ্যাট সংক্রান্ত নীতিমালা, পোশাক শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন ইত্যাদির জন্য পলিসি চায় সংগঠনটি।
এর আগে করোনাভাইরাস সঙ্কট পোশাক খাতে যে প্রভাব ফেলেছে সে চিত্র তুলে ধরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বিজিএমইএর নিবন্ধিত কারখানা ছিল দুই হাজার ২৭৪টি, তার মধ্যে এখন এক হাজার ৯২৬টি চলছে। অর্থাৎ বেশকিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। করোনার বিশ্বের ভোক্তার চাহিদা কমে যাচ্ছে।

বিভিন্ন সংস্থা বলছে, আগামীতে ৬৫ শতাংশ ভোগ চাহিদা কমে যাবে। তাই পোশাকের চাহিদা বাড়ার তেমন সম্ভাবনা কম। দেশের কারখানায়ও ৫৫ শতাংশ (চাহিদা) কমে যাবে। ৪২ হাজার কোটি টাকা মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ক্ষতি হবে। করোনায় দেশের ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানা ৫৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি দিয়ে চালাতে হবে। জুনে কারখানাগুলোতে ৩০ শতাংশ কাজ হবে। জুলাইয়ে কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। আমাদের বড় ধাক্কা খেতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ সহায়তা ছাড়া এ খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ