Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনায় জীবন বদল

শহর-গ্রাম সর্বত্রই অভিন্ন দৃশ্য চাল-ডালের মতোই এখন স্যানিটাইজার মাস্ক-গ্লাভস-ক্যাপ নিত্যপণ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনা বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষের জীবনধারা। দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম ৩ ব্যক্তি শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর গত তিন মাসে সব শ্রেণির মানুষজনকে প্রত্যাহিক জীবনে নানা ধরনের অভ্যাস করতে হয়েছে। নিত্যদিনের বাজারে নতুন অনুসঙ্গ করোনা নিরাপত্তাসামগ্রী যোগ হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় যেমন পথচারীদের মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ, পিপিই ব্যবহার করতে দেখা যায়; তেমনি চিত্র গ্রামেও। করোনা থেকে সুরক্ষাসামগ্রীর ব্যবহার সব শ্রেণি ও বয়সের মানুষের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে।

ঢাকা বারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান সবজি কিনতে বাজারে গিয়ে স্ত্রীর দেয়া ফর্দ দেখে অবাক হন! আদা-রসুন-পেঁয়াজ-সবজির তালিকায় স্যানিটাইজার, মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ লেখা কেন? বিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে ফোন করেন। ‘তোমার মাথা খারাপ হয়েছে, বাজারের তালিকায় এসব কি লিখছ?’ ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী জবাব দেন, ‘আমি ঠিকই লিখেছি। করোনার হাত থেকে বাঁচতে এসব পণ্য এখন সব সময় ব্যবহার করতে হবে’। বুঝতে পারেন অ্যাডভোকেট মিজান। শুধু মিজান নয়, সবার সংসার খরচে এই নতুন পণ্যগুলো যোগ হয়েছে। প্রতিদিনের বাজার তথা চাল-ডাল-তেল-তরিতরকারির সঙ্গে করোনায় নতুন পণ্য যোগ হয়েছে। বাড়ির গৃহিনী বাজারের ফর্দে মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল ক্যাপ, স্যানিটাইজারের নাম লিখে দিচ্ছেন। যারা বাজার করছেন তরিতরকারির পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর এসব পণ্য ক্রয় করছেন।

জানতে চাইলে প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. মুসতাক হোসেন বলেন, মনে হচ্ছে করোনা একেবারেই চলে যাবে না। দীর্ঘদিন এই ভাইরাস থাকবে। ফলে মানুষকে নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। মানুষের মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু যত্রতত্র ব্যবহৃত জিনিস ফেলে দেয়ার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশ হেলথ সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডমলজির শিক্ষক মোসাম্মাত নাদিরা পারভীন। বলেন, মাস্ক ও গ্লাভস পরে মানুষকে রাস্তায় থাকতে দেখছি। প্রথম দিকে এমন দৃশ্য বেশি দেখা যায়নি। বাসে-ট্রেনেও একই দৃশ্য। মানুষ মুখে মাস্ক পরে চলাফেরা করছে। তবে মানুষকে এসব সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের পর নির্দিষ্ট ডাজবিনে ফেলা উচিত। না হলে ওই ব্যবহৃত মাস্ক বর্জ্যরে জীবাণুতে অন্যজন আক্রান্ত হবেন।

করোনার সামাজিক ট্রান্সমিশন ঠেকাতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করেছে। অফিস-আদালত, বাস-ট্রেন, লঞ্চ সর্বত্রই স্বাস্থবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। রাস্তায় বের হলে মুখে মাস্ক, হাতে পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, মাথায় সার্জিক্যাল ক্যাপ পরে মানুষের চলাফেরার দৃশ্য এখন স্বাভাবিক। অনেককে আবার পিপিই পরে চলাফেরা করছেন। বাসায় আধা ঘণ্টা পর পর স্যানিটাইজার দেয়া বা হাত ধোঁয়া এখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। মার্কেটে প্রবেশ মুখে হয় হাত ধোয়া নয়তো স্যানিটাইজার হাতে মেখে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়। বেশিরভাগ মার্কেটে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। ট্রেন ও বাসে মাস্ক ছাড়া যাত্রী উঠানো হয় না।

যাত্রীদের যাদের হাতে গ্লাভস নেই তাদের হাতে স্যানিটাইজার মেশানো পানি ছিঁটিয়ে দেয়া হয়। যাত্রী বসার আগে বা কোনো যাত্রী নেমে গেলে ওষুধের পানি স্প্রে করা হয়। ব্যাংকে গ্রাহকদের মুখে মাস্ক বাধ্যতামূলক। কেউ মাস্ক পরে না গেলে তাকে মাস্ক দেয়া হয়, না থাকলে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় চারিদিকে প্রায় সবাই সার্জিক্যাল মাস্ক, পলিথিনের হ্যান্ড গ্লাভস, সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভস, ফেস-শিল্ড, সার্জিক্যাল ক্যাপ, পিপিই এগুলো পরে আছেন। শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া সর্বত্রই একই দৃশ্য। কেউ মুখে মাস্ক ছাড়া বের হলে অন্যেরা তাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন।

মাস্ক, গ্লাভস জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এসব পণ্যের ব্যবহার মানুষের জীবনে কি পরিমাণ বেড়ে গেছে তা স¤প্রতি এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন নামের একটি সংস্থা এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপিল পর্যন্ত করা তাদের এক গবেষণায় বলা হয় এই সময়ে রাজধানীতে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ প্লাস্টিক বর্জ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ টন। যার বেশিরভাগই করোনাভাইরাস সুরক্ষাসামগ্রী।

জানতে চাইলে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পণ্যের বর্জ্য বেড়ে গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. বদরুল আমিন বলন, নতুন যে জোনভিত্তিক লকডাউন ব্যবস্থা শুরু হবে তখন বর্জ্য বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা থাকবে। জীবনের সঙ্গে মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার বেড়ে গেছে। বাসাবাড়ি থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহৃত সামগ্রী আলাদা করে প্যাকেট করে দেবেন। প্রতিটা ওয়ার্ডে আলাদা কন্টেইনার ডেজিগনেট করে দেয়া হবে। যারা বাড়ি থেকে ওয়েস্ট কালেক্ট (বর্জ্য সংগ্রহ) করবেন তারা প্যাকেটগুলো সেখানে রাখবেন। সেগুলো নিয়ে ল্যান্ডফিলে পুড়িয়ে ফেলা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ