পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘদিনের মন্দা কাটিয়ে আবাসন খাতে সুদিন ফিরছিলো। গত বছর ১৬-১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি রয়েছে এ খাতে। যে কারণে ২০১২ সালের পর আবারও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তবে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। মানুষের মৌলিক অধিকার বাসস্থান নিশ্চিত করা এ শিল্পে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে এই মহামারী। অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপক সঙ্কটে পড়েছে খাতটি। আবাসন ব্যবসার সঙ্গে ২৬৯টি শিল্প উপখাতে (লিংকেজ প্রতিষ্ঠান) ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রায় সাড়ে ১২ হাজার প্রতিষ্ঠানও পড়েছে তাই মারাত্মক হুমকিতে। দক্ষ/অদক্ষ মিলিয়ে এ খাতে জীবিকা নির্বাহ করা ২৫-৩০ লাখ মানুষেরও বেকার হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে আবাসন খাতের। এ অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা পেতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন করেছে আবাসন খাতের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। বিশেষ করে আসন্ন বাজেটে কয়েক বছর ধরে আশ্বাসে আটকে থাকা ফ্ল্যাট নিবন্ধন ফি-কমানো, বিনা শর্তে ৫ বছরের জন্য অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ ও স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধার ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের পুরানো দাবিই নতুন করে তুলে ধরছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের মতে, ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে সরকারের কড়া নজরদারির কারণে দেশের অর্থ বাইরে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া ফ্ল্যাট ও প্লট কেনার সময় অর্থের উৎসসহ নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। এমনকি একটি ভবন নির্মাণ করতে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, ডিএমপি, পরিবেশ অধিদফতর, তিতাস, ডেসকো, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, সিভিল এভিয়েশনসহ মোট ১১টি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের দরকার হয়। এতগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আবাসন খাতের জন্য যা একটি অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা। এটা দূর করতে হবে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে জমি ও ফ্ল্যাট কিনতে মাত্র ১ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা পায় গ্রাহকরা। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকঋণের অপ্রতুলতার পাশাপাশি রয়েছে হয়রানির আশঙ্কা। তবে আসন্ন বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিদ্যমান সমস্যাগুলো অনুধাবন করে একটা সমাধানের পথ বের করার উদ্যোগ নেবেন। যার মাধ্যমে আবাসন খাতের চলমান সঙ্কট কাটবে বলে প্রত্যাশা খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের। মুখ থুবড়ে পড়া ইস্পাত ও সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ীরা চান, অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ও ভ্যাট কমানোসহ নানা ধাপে করের হাত থেকে মুক্তি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি নাগরিকদের বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পূরণে আবাসন খাত সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আসা জরুরি। দিতে হবে নীতিগত সহায়তাও। বর্তমান বাস্তবতায় কোনো ব্যক্তি ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাট বা প্লট কিনতে অতি নজরদারির কারণে অর্থপাচারের আশঙ্কা বাড়বে। মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতেও দ্বিতীয় বাড়ি (সেকেন্ড হোম) ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার করে অনেকে। দেশে প্রায় সাত লাখ কোটি কালো টাকা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। বিপুল এই টাকা বিনা শর্তে দেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া না হলে সেগুলো বাইরে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, আবাসন খাতের বিকাশে আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো জমি ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমির মূল্য গত এক দশকে দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া বালু, সিমেন্ট, রডসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ। কিন্তু জমি বা ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্য আড়াল করায় সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই এসব বিষয়ে সরকারকে বিশেষ নজড় দিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় বছরে ৬ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছে। মানুষ অনুপাতে আবাসনের চাহিদার হিসাব মেলালে বছরে ১ লাখ ২০ হাজার অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা রয়েছে। ঢাকার বাইরে অন্য শহরগুলোতেও ফ্ল্যাটের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কয়েক বছর ধরে নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সঙ্কটময় অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে এই খাত বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৫ শতাংশ সরল সুদে গৃহঋণ চালু। ১০ শতাংশেরও কম সুদে হোম লোন দিচ্ছে কয়েকটি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানও। এতে আবাসন খাত স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে এসে গত বছর প্রবৃদ্ধি করে ১৬-১৭ শতাংশ। যা এ খাতে উদ্যোক্তাদের কিছুটা হলেও স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলো। কিন্তু মহামারী করোনা সব সম্ভাবনাকে শেষ করে দিয়েছে। এছাড়াও এখনো উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, সব নাগরিকের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা না থাকা এবং ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার এই খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখা আবাসনশিল্পে নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে এক অঙ্কে নামিয়ে আনা এই খাতের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি। নতুন বাজেটে এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, বর্তমানে রিহ্যাবের সদস্য রয়েছে ১ হাজার ১টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরেও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসায় জড়িত। তবে সব মিলিয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই কাজ করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ রয়েছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সংশ্লিষ্ট কারিগরি জনবল ও শ্রমিক কাজে আসছে না।
এদিকে, করোনার কারণে এরই মধ্যে ৮০ ভাগ ব্যবসা হারিয়েছে বলে দাবি ইস্পাত ব্যবসায়ীদের। এর সঙ্গে রয়েছে গেল বাজেটে আরোপিত ৫ শতাংশ আগাম আয়কর ও বর্ধিত ভ্যাটের চাপ। এবার বাজেটে করজালের হাত থেকে মুক্তি না পেলে সুদিন হারানোর শঙ্কা-অবকাঠামো, আবাসন ও মেগা প্রকল্পে দরকারি প্রায় শতভাগ ইস্পাতের যোগান দেয়া দেশিয় উদ্যোক্তাদের।
বাংলাদেশ স্টিল ব্যবসায়ী মালিক সমিতি বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, ভ্যাট বিক্রি পর্যায়ে ছিল ৯শ’ টাকা টনপ্রতি, এটা গত অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার টাকা করা হয়। আগে ৯শ’ টাকা ছিল সেটাই করতে বলছি।
স্টিল ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় যেখানে ব্যাংকগুলোকে সাহায্যের হাত স¤প্রসারণ করা উচিত, সেখাতে তারা হাত গুটিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি ঋণের ১৪ শতাংশ হারে সুদ দিতে চিঠি দিয়েছে। তাই সঙ্কট উত্তরণে সরকারি অনুদান নয়, স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কথা বলেছেন তিনি। একইসঙ্গে আগামী বাজেটে স্ক্যাপ আমদানিতে আগাম কর (এটি) প্রত্যাহার, আমদানি শুল্ক ছাড়, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার, খুচরা বিক্রি পর্যায়ে ভ্যাট হ্রাস ও উৎসে আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএসএমএ সভাপতি মনোয়ার হোসেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আবাসন খাতে বিনিয়োগকে নিরুৎসাহ করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকান্ড। সরকার এই খাতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে এলেও দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা পরে গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের মুখে ফেলছে। ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করতে গেলে তাদের ব্যাংক হিসাব, টাকার উৎস জানতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। যা এক ধরনের বৈরী পরিবেশ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, যা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য আয়কর অধ্যাদেশের ১৯-এর বি পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। এটি করা না হলে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাবে।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামীন (কাজল) ইনকিলাবকে বলেন, অর্থনীতিতে আবাসন খাতের অবদান বিবেচনা করলে এই খাতে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া জরুরি। আগামী বাজেটে সরকার এই খাতের জন্য ভালো কোনো খবর দেবে-এমন প্রত্যাশা করি আমরা। বিশেষ করে স্বল্প সুদে গ্রাহকরা যাতে ঋণ পায়, এটি খুবই জরুরি। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই এটি রয়েছে। এছাড়া জমি কিংবা ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয় কমাতে হবে। কমালে গ্রাহকরা প্রকৃত মূল্য ঘোষণা দিয়ে সরকারকে আরো বেশি রাজস্ব জোগান দেবে। রিহ্যাব সভাপতি বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বর্তমানেও আছে। তবে একটি বিশেষ সংস্থার প্রশ্নের সুযোগ থাকছে বলে যেভাবে আসার কথা সেভাবে আসছে না। দেশের এই ক্রান্তিকালে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আাগামী বাজেটে পাঁচ বছরের জন্য বিনা শর্তে বা বিনা প্রশ্নে এই অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হলে ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ আসবে। তিনি বলেন, আবাসনের সঙ্গে ২৬৯টি সাব-সেক্টর আছে। বিনা শর্তে এই সুযোগ পেলে এতে প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর বেকারত্ব দূর হবে। নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে গতি ফিরবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।