Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

করোনা পরীক্ষা বাড়ানো উচিত

বিশেষজ্ঞদের অভিমত তিন মাসে মাত্র চার লাখ মানুষের নমুনা পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশে এখন পর্যন্ত যে করোনা পরীক্ষা হয়েছে তাতে প্রতি ৫ জনের মধ্যে একজন করোনা আক্রান্ত পাওয়া যাচ্ছে। দেশে জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। অথচ গত তিন মাসে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে মাত্র তিন লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৭ জনের। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে প্রতিদিন ৫২টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করলে আক্রান্ত শনাক্ত হন দুই হাজার ৭৪৩ জন। যে গতিতে করোনা পরীক্ষা চলছে; তাতে দেশের সব মানুষের করোনা পরীক্ষা করতে গেলে আগামী কয়েক বছর লেগে যাবে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান মনে করেন সামাজিক সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর লকডাউনের পাশাপাশি পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কাজে লাগানো উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুসারে, দেশে বর্তমানে মাত্র ৫২টি পরীক্ষাগারে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮টি এবং বাকিগুলো ঢাকার বাইরে। অন্যদিকে নমুনা সংগ্রহের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ পর্যন্ত ঢাকায় ৫০টির বেশি বুথ স্থাপন করা হলেও এরই মধ্যে অনেকগুলো নানা কারণে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। করোনা পরীক্ষা করতে গিয়ে মানুষকে পড়তে হচ্ছে নিদারুণ কষ্টে। অথচ তিন মাস আগে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, করোনা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন ‘পরীক্ষা পরীক্ষা পরীক্ষা’।

জানতে চাইলে রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবেই করোনা পরীক্ষার আগ্রহ ও চাহিদা রয়েছে। যেহেতু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়েছে, ফলে কোনো একটি কমিউনিটিতে কেউ সংক্রমিত হলেই অন্য সবাই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরীক্ষার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু সে তুলনায় পরীক্ষা হচ্ছে খুবই কম। পরীক্ষা আরো কয়েকগুণ বাড়ানো উচিত।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, প্রতিদিনই করোনা পরীক্ষার চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি। জনবল সঙ্কট আর ল্যাবে পরীক্ষার সক্ষমতারও ঘাটতি রয়েছে। করোনা পরীক্ষার জন্য চালুর পর কয়েকটি ল্যাব আবার বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আর পরীক্ষা করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, উপসর্গহীন রোগী বাড়তে থাকায় দেশে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ জন্য বেশি বেশি পরীক্ষা করে সংক্রমিত এবং অসংক্রমিতদের আলাদা করতে হবে।

করোনা কবলিত বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে কী হারে পরীক্ষা হচ্ছে তার ওপর দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ শুরু থেকেই খুব খারাপ অবস্থায়। করোনা পরীক্ষায় পদে পদে হয়রানি ও যাতনা বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। পরীক্ষা কেন্দ্র কম হওয়ায় দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা, পরীক্ষার জন্য টাকা জমা দেয়া, রসিদ সংগ্রহ এবং নমুনা দেয়াসহ প্রতিটি জায়গায় দীর্ঘ লাইন ধরতে হয়। সকাল ৬টায় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেক সময় নমুনা দেয়া যায় না। এমনকি কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে নমুনা দিতে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আরো রয়েছে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে দীর্ঘসূত্রতা। অধিক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে এতো ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে আরো মনোযোগী হওয়া দরকার। পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নমুনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা দরকার। সন্দেহভাজন হলেই পরীক্ষার ফল না পাওয়া পর্যন্ত তাকে অন্যের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন করেনার সামাজিক ট্রান্সমিশন ঠেকাতে পরীক্ষার প্রতি জোর দিয়েছে; তেমনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরীক্ষা বাড়ানো উচিত। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৫২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা কম নয়। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি। আর বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৫০৫৫টি। এসব হাসপাতালের সবগুলোতে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা না গেলেও অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করা যেতে পারে।

বিশেজ্ঞরা বলছেন, পরীক্ষা বাড়াতে না পারলে অল্পদিনের মধ্যেই করোনা নিয়ে দেশকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। কারণ পরীক্ষা করে মানুষকে আলাদা করতে হবে। একই সঙ্গে আইসিইউ এর সংখ্যা বাড়াতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার এক পর্যায়ে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসার প্রয়োজন দেখা যায়। দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ হাসপাতালেই নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) প্রয়োজনের তুলনায় কম। সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে মাত্র এক হাজার ১৬৯টি। এর মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৪৩২টি (ঢাকায় ৩২২, ঢাকার বাইরে ১১০) আর বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে ৭৩৭টি (ঢাকা মহানগরীতে ৪৯৪, ঢাকা জেলায় ২৬৭, বাইরের জেলায় ২৪৩)। আইসিইউ-এর সংখ্যা বৃদ্ধি ও পরীক্ষা বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

করোনা পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক উপসর্গহীন করোনা রোগী রয়েছে। এই নীরব করোনার বাহক শনাক্ত করা এবং তাদের আইসোলেশনে পাঠানোই এখন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দুইভাবে সংক্রমণ কমানো যায়। এক. কঠোরভাবে শাটডাউন কার্যকর করা। দুই. করোনা পরীক্ষার হার বাড়িয়ে সংক্রমিত ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করা এবং তাদের আইসোলেশনে পাঠানো। করোনা পরীক্ষার ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ