পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারীতেও থেমে নেই ভেজালকারীরা। লকডাউনের মধ্যেই তারা তৈরি করছে নকল ও ভেজাল সামগ্রী। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, খাদ্যদ্রব্য, ঘি, তেল, প্রসাধন সামগ্রী, এমনকি জীবনরক্ষাকারী ওষুধও নকল হচ্ছে। দেশি-বিদেশি নামিদামি ব্র্যান্ডের প্রায় সব পণ্য নকল হচ্ছে। করোনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন নকল স্যানিটাইজার, স্যাভলন, ডেটল, মাস্ক, স্প্রে মেশিন, ডিটারজেন্ট, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস দেদারছে তৈরি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে বড় শপিংমলে এসব নকল সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
দেশজুড়ে বিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জঘন্য এ অপরাধ ঘটছে। এমন কায়দায় নকল পণ্য তৈরি করা হচ্ছে যে অনেক ক্রেতার পক্ষে ধরা কঠিন। ঢাকা ও আশপাশ এলাকার চিহ্নিত অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নকল পণ্য তৈরি করে চলেছে। এদের কারণে সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন ক্রেতারা। পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের অভিযান অনেক দিন ধরেই বন্ধ। এতে করে পেশাদার নকলবাজরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিএসটিআই-এর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও এটা স্বীকার করে বলেছেন, অভিযান বন্ধ থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। তিনি বলেন, করোনা সঙ্কটে ঈদের পর থেকে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, দু’জন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরই ঈদের পর অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। তবে সীমিত আকারে র্যাব ও ভোক্তা অধিকারের মোবাইল কোর্টের অভিযান চলমান আছে।
নকল পণ্যের পাইকারি বাজার পরিচিত হিসেবে পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকা। সেখানকার গলি-ঘুপচিতে বহুতল আবাসিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছে প্রসাধনী, প্লাস্টিকের অবৈধ কারখানা ও গুদাম। এসব অবৈধ গুদাম বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও ঝুঁকির কারণ। নকল পণ্যের গুদাম থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় জীবনও দিয়ে দিতে হয়েছে ৭১ জনকে। গতকালও পুরান ঢাকায় কেমিকেলের আগুনে দুজন দগ্ধ হয়েছে।
পুরান ঢাকায় প্রসাধনী, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, প্লাস্টিক পণ্য, রাসায়নিক, ওষুধের পাইকারি ব্যবসা বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারের সংশ্নিষ্ট দফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব কারবার। পুরান ঢাকা ছাড়া কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুরে নকল পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন চক্র সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা মূল্যের নকল পণ্য জব্দ করে পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা সঙ্কটে ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই চীন থেকে পণ্যসামগ্রী আমদানি বন্ধ। এই সুযোগে চীনা পণ্যই এখন বেশি নকল হচ্ছে। বিশেষ করে করোনাকালে কিছু পণ্যের চাহিদা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় এখন সেগুলো দেদারছে নকল হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্যাভলন, ডেটল, মাস্ক, স্প্রে মেশিন, ডিটারজেন্ট, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস এবং পিপিই। রাজধানীর বড় বড় মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে এসব সামগ্রী। বিশেষ করে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ওধুধের মার্কেটগুলোতে এখন এসব নকল পণ্যের জমজমাট ব্যবসা। মিটফোর্ড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, সারাদেশের মানুষই মিটফোর্ডের ওধুধের মার্কেট থেকে পাইকারি হিসাবে এসব নকল পণ্য সামগ্রী কিনে নিয়ে বিক্রি করছে। আর নকলের বদনাম হচ্ছে মিটফোর্ড হাসপাতালের। এটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব পণ্যের বেশিরভাগই তৈরি হচ্ছে কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা এলাকায়। এছাড়া পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, মৌলভীবাজার, নয়াবাজার, চুড়িহাট্টা, পাটুয়াটুলি, চকবাজার, লালবাগ, ইসলামপুরের নকল কারখানাতেও এসব তৈরি হচ্ছে। এদিকে, ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তৈরি হচ্ছে নকল এন-৯৫ ও কেএন-৯৫ মাস্ক। অবিকল চীনের মডেলে তৈরি করা এসব মাস্কের প্যাকেট দেখলে বোঝারই উপায় নেই সেগুলো নকল।
এদিকে, পুরান ঢাকার চকবাজার, লালবাগ ও কেরানীগঞ্জের অলিগলিতে প্রস্তুতকৃত নকল ও নিম্নমানের সাবান, চন্দন, মেছ্তা-দাগ নাশক ক্রিম, নানা প্রসাধনী, তেল, পারফিউম সবকিছুই আগের মতোই তৈরি হচ্ছে। শিশুদের চকলেট ও গুঁড়া দুধ, ঘি, আটা, তেল, সাবান, মধু, মসলা, দই, মিষ্টি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী, নিত্যব্যহারের কসমেটিকস, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মোবাইল ফোন, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, গাড়ি ও কম্পিউটারের পার্টস এমনকি গানের সিডিও নকল হচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে অনেক আগে থেকেই আছে নকল ফ্যানসহ ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি তৈরির কারখানা। রায়েরবাগে আছে নকল খাঁটি গাওয়া ঘি, মধু, দই ও মিষ্টির কারখানা। যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকাতেই নকল ক্যাবল তৈরির কারখানা আছে কমপক্ষে ৫০টি। দনিয়া ও পাটেরবাগ এলাকায় নকল মশার কয়েল, ঘি, গুড়, হারপিক, খাবার স্যালাইন, ভিটামিন ওষুধ, সুইচ, ছকেট, হোল্ডার কারখানা আছে বেশ কয়েকটি। হারপিক কারখানাগুলো এখন ব্যস্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে। আছে শতাধিক নকল মিনারেল ওয়াটারের কারখানা। মুগদা এলাকায় নকল সোয়াবিন তেল থেকে শুরু করে নকল ডিটারজেন্ট পাউডার পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে অবাধে। পুরান ঢাকার নর্থ সাউথ রোডের অলিতে গলিতে তৈরি হচ্ছে নকল টিভি, ফ্রিজ, এনার্জি সেভিং বাল্ব, মোটর, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন মেশিনসহ বিভিন্ন দামি ইলেকট্রিক সামগ্রী।
ভুক্তভোগীদের মতে, বিএসটিআই-এর নির্লিপ্ততাই নকল সামগ্রীর দাপটের জন্য দায়ী। শিল্প মন্ত্রালয়ের অধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটি যুগ যুগ ধরে জনবল সঙ্কটের দোহাই দিয়ে দায় এড়িয়ে চলছে। ভুক্তভোগীরা মনে করেন, বিএসটিআই’র অভিযান অব্যাহত থাকলে নকল পণ্যের দাপট কমতে বাধ্য। জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের এক সহকারী পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, একথা ঠিক যে আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। তাই বলে বিএসটিআই যে বসে আছে তা কিন্তু নয়। করোনা সঙ্কটে ঈদের পর থেকে অভিযান বন্ধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কনজুমার কেয়ার সোসাইটির (সিসিএস) উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. আব্দুর রহমান (পিএইচডি) বলেন, নকলের প্রবণতা আমাদের দেশের তৈরি পণ্যের ভবিষ্যত নষ্ট করে দিচ্ছে। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। এগুলো বন্ধের জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ দরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।