পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশে সাত লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করছে ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। আইসিডিডিআরবির বরাত দিয়ে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে এই সাময়িকী বলেছে, শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই আক্রান্ত সাত লাখ ছাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তানেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত সপ্তাহ জুড়ে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান অনেকাংশেই লকডাউন তুলে নিয়েছে। কিন্তু দেশব্যাপী লকডাউন তারা দিয়েছিল করোনার বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যেই। ১৭০ কোটি মানুষ, যারা বিশ্বের জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশের বেশি, তারা বিভিন্ন বিধিনিষেধের আওতায় ছিল, এখন লকডাউন প্রত্যাহার অঞ্চলটির ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে একটি মুক্তি দেবে।
দক্ষিণ এশিয়া কেবলমাত্র রোগের সংক্রমণকে একটা মাঝারি অবস্থায় রাখতে পেরেছে, থামাতে পারেনি। লকডাউন তুলে নেয়ার ফলে আবার ভাইরাসের দ্রæত বিস্তার ঘটাতে পারে।
এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ রোগী পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৯ হাজারের চেয়ে সামান্য কম। অবশ্য মৃতের সংখ্যা বিচারে অঞ্চলটিকে মডারেট বা মাঝারিই বলা চলে। তবে তুলনামূলকভাবে এই পরিমিত চিত্রটা যথাযথ নয়। এটা ছদ্মবেশী। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের সংক্রমণ বৃদ্ধির হার কোনোটিরই প্রকৃত ছাপ ওই পরিসংখ্যানে নেই। লকডাউন তুলে নেওয়ার আগেই আক্রান্তের সংখ্যা ভীতিজনক পর্যায়ে পৌঁছেছিল। বর্তমানে যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, তাতে প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, জুলাইয়ের শেষের দিকটি, যখন কিছু মডেলের প্রাদুর্ভাব পূর্বাভাস অনুযায়ী, পিকে বা উঁচুতে থাকার কথা, তখন আক্রান্তের সরকারি পরিসংখ্যান ৫০ লাখ এবং মৃতের সংখ্যা দেড় লাখে পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশের ডায়রিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, (আইসিডিডিআরবি) এর প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে সাড়ে ৭ লাখে উন্নীত হয়েছে। যদিও সরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ হাজারের নিচে।
দক্ষিণ এশিয়ার বেশি অনগ্রসর অঞ্চলগুলাতে স্বাস্থ্যসেবা গুরুতর চাপে রয়েছে। মুম্বাইয়ের শহরতলির থানায় ৪৬ বছর বয়সী নার্স মাধুরী (প্রকৃত নাম নয়)। এপ্রিল থেকে কোনও দিনই তিনি ডে-অফ নিতে পারেননি। ১২ ঘণ্টার শিফটে প্রতিদিন কাজ করছিলেন। অবশ্য তিনি রেহাই পান যখন গত মে মাসে তিনি একজন রোগীর কাছ থেকে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হন। তিনি যে সরকারী হাসপাতালে কাজ করেন সেখানে করোনা রোগের চিকিৎসা হয় না। কোভিডের জন্য মনোনীত হাসপাতালগুলোতে তারা রোগীদের পাঠিয়ে দেন। তবে মাধুরী (তার আসল নাম নয়) বলেছেন যে, তার সহকর্মীদের অবশ্যই উচিত হবে এভাবে না পাঠিয়ে দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া।
‘এখন আমরা দিনে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীর চিকিৎসা দেই। সাধারণ সময়ে এটা ছিল ৪০ থেকে ৫০ জন। এর বাইরে রয়েছে ছুরিকাঘাতের আঘাত, দুর্ঘটনা ইত্যাদির শিকার হয়ে যারা আসেন তাদের সেবা দেয়া। তার হাসপাতালে ২০ শয্যাবিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট আছে। কিন্তু মাত্র দু’জন নার্স এবং তাদের ১৬ শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন ওয়ার্ডে নার্স আছেন মাত্র একজন।
সাধারণ সময়ে দক্ষিণ এশিয় ধনী ব্যক্তিরা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি উদাসীন থাকতে পারেন। দশকের পর দশক ধরে স্বাস্থ্যখাতের সরকারি ব্যয় অতি অল্প থাকার কারণে এই ব্যবস্থার ভঙ্গুরত্ব তাদের স্পর্শ করে না। ঢাকায় একটি বেসরকারী হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেছেন, ‘তাদের যদি এতটুকু হাঁচি আসে, তবে তারা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর বা ভারতে চলে যান। এখন, তিনি (একজন নারী চিকিৎসক) বলেছেন, কোভিড-১৯ বা অন্যান্য অসুস্থতা যাই হোক, বাংলাদেশের অভিজাত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ‘প্রায় অসম্ভব’। এমনকি মর্গ, কবরস্থান বা শ্মশানঘাটেও কোনো জায়গার সন্ধান পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
মুম্বাইয়ের বাইরে থানের সবচেয়ে বড় শ্মশানঘাট জওহর বাগ। দাহ করার সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে দেখা গেছে। এখানে লোকবল বাড়ানো হয়েছে। আগে ছিলেন ৩০ জন। এটা ৫০ জনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিদিন চার থেকে ছয় জন, আবার কখনও ২০ জনের শেষকৃত্য চলে। প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ চলে। দিল্লি কাঠের তৈরি চিতায় দেহভস্মের বিধানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে। দূষণ কমাতে এটা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন দাহ করার চাহিদা বেড়েছে। আবার গ্যাসচালিত ওভেনেরও বড় অভাব রয়েছে।
সম্ভবত সবচেয়ে গুরুতর গলদপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। এই অঞ্চলে সর্বাধিক কঠোর এবং কঠোরভাবে পালিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ভারত সরকার ঠিকই চাপিয়ে দিতে পেরেছিল। কিন্তু তা সত্তে¡ও, সরকার এটা অনুমান করতে ব্যর্থ হয়েছিল যে, তাদের এই পদক্ষেপগুলো লাখ লাখ আন্তঃরাজ্য অভিবাসী শ্রমিকদের ফাঁদে ফেলে দেবে। তারা তাদের নিজ রাজ্যের বাইরের শহরগুলিতে হঠাৎ করেই নিঃস্ব হয়ে যাওয়া এক বিশাল জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম তাদের ঘরে ফেরার আন্দোলনটি বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। এরফলে শহুরে বস্তিগুলিতে সর্বাধিক সংক্রমণের হারের শঙ্কা নিয়ে অভিবাসী শ্রমিকরা ঠাঁই নিয়েছিল। এরপর তারা সম্ভবত এরকম ২০ লাখ শ্রমিককে নিজ নিজ রাজ্যে ফেরার অনুমতি দেয়। এভাবেই তারা রোগটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়। বিহার, এমন একটি রাজ্য, যার ১ কোটি ১০ লাখ দরিদ্র মানুষ আছে। রাজ্যটি সবথেকে দরিদ্রদের অন্যতম। সেখানে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত হওয়া কোভিড রোগীর দুই তৃতীয়াংশেরও বেশির সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে প্রত্যাগত শ্রমিকদের মধ্য থেকেই।
কারণ যাই হোক না কেন, ক্ষতি যা হবার হয়েছে। বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একজন কবর খননকারী ফরিদ উদ্দিন। কথা বলতে গিয়ে তিনি প্রায় চোখের পানি ফেলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, তিনি এবং তার দল গত চারদিনের মধ্যে খুব কম সময়ই ঘুমিয়েছেন।
‘অনেক মৃত্যু। আমরা ভারাক্রান্ত। আমাদের জন্য দোয়া করুন, আল্লাহ যাতে আমাদের ক্ষমা করেন এবং এই রোগটি ফিরিয়ে নেন’।
এদিকে ঢাকায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন সঠিক নয় বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।