পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাণিজ্যিক রাজধানী। বন্দরনগরী। এই সমুদ্রবন্দর, কাস্টমস-শিপিং, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সামুদ্রিক চিংড়িসহ মাছ, প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে শত কোটিপতি এমনকি হাজার কোটিপতির খাতায় আজ অনেকেই নাম। কিন্তু তাতে আপামর চট্টগ্রামবাসীর প্রাপ্তি কী? তাদের কাছে চাওয়ারও বা কী! ভিনগ্রহের মানুষ বনে গেছেন অনেকেই।
হ্যাঁ। মাটির মানুষ হাজার-শত কোটিপতি চট্টগ্রামে ছিলেন নিকট ও দূর অতীতকালেও। মরহুম এ কে খান (আবুল কাসেম খান), এম এম ইস্পাহানী, এম আর সিদ্দিকী, শফিউল আজম, জাতীয় অধ্যাপক ডা. নুরুল ইসলামদের অবদান গর্ব-শ্রদ্ধাভরেই আজও স্মরণ করে দেশ-জাতি বিশেষত চট্টগ্রামবাসী। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, ইউএসটিসি, জেনারেল হাসপাতাল ও চমেক হাসপাতাল সম্প্রসারণ আধুনিকায়ন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-ক্রীড়া-বিনোদন, পর্যটনের পথিকৃৎ মরহুম সফদর আলী, অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতির অর্থের বিনিময়ে সড়ক রাস্তাঘাট, দীঘি, মুসাফিরখানা, পাঠাগার, প্রায় সোয়া একশ’ বছর অতীতে পটিয়ার (পরে ভারতে চলে যান) প্রখ্যাত চিকিৎসক গৌতম খাস্তগীর পরিবারের বদান্যতায় ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কলেজ-মাদরাসা নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে চট্টগ্রাম উন্নতির চরম সোপানে এগিয়েছে। চট্টগ্রামকে বলা হতো- ‘চিটাগাং টু দি ফোর’। মানুষ আজও এসব জনহিতকর কর্মের উপকারভোগী।
এমনকি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে অবকাঠামো নির্মাণে প্রথমদিকে এবং তাও বেসরকারি উদ্যোগে যেসব জেটি-বার্থ-ঘাট সুবিধা স্থাপিত হয়েছিল, এ কে খান ইস্পাহানি শিল্পগোষ্ঠির অবদান সোনালি হরফে লিখিত থাকবে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, বার্মার রেঙ্গুন ও আকিয়াবে সমুদ্রপথে যাত্রী পরিবহনেও তারা অগ্রণী। পাটকল, বস্ত্র ও সুতাকল, কার্পেট কল, ওষুধশিল্প, হিমায়িত খাদ্যশিল্প, ১৯৭৬ সালে কালুরঘাটে দেশ গার্মেন্টস থেকে এদেশের প্রথম পোশাক চালান বিদেশে রফতানি, প্রথম ইপিজেড স্থাপন ইত্যাদি সাফল্যগাঁথার ফর্দ শেষ করা যাবে কী? কিন্তু সেই চট্টগ্রামের অবস্থান আজ কোথায়? কেন দিন দিন ম্লান? অনেক পূর্বেই চট্টগ্রামে এক সেমিনারে তীব্র ক্ষোভ-হতাশার সুরে একে খান তনয় সাবেক শিল্পমন্ত্রী এ এম জহিরুদ্দিন খান বলেছিলেন- ‘চট্টগ্রাম আজ চট্টগ্রাম তো নেই। ছোট্ট+গ্রামে পরিণত হয়ে গেছে। আমরা নিজেরাই তাকে ছোট করে ফেলেছি’।
আজকের চট্টগ্রাম এলোপাতাড়ি ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে ভারসাম্যহারা এক জনপদ। ‘অসুস্থ-পীড়িত’ বাণিজ্যিক নগরী। তবুও বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প আর কসমেটিক্স সার্জারির মধ্যদিয়ে ‘তিলোত্তমা’ তকমা পরার খোয়াব দেখা হচ্ছে! তবে গত দুই মাসে করোনাভাইরাস মহামারী সংক্রমণকালে চট্টগ্রামে চিকিৎসায় চরম বেহালদশা ফুটে উঠেছে।
চট্টগ্রামের হাজার কোটিপতি, শতকোটি পতিরা চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগ দেননি কখনোই। বরং নিত্যপণ্য সিন্ডিকেট, রাজস্ব ফাঁকি, ব্যাংক-বীমা কব্জা, মার্কেট শপিং মল তৈরি, উন্নত দেশে সেকেন্ড হোম, ভ‚মি-নদী দখলেই মত্ত অনেক ব্যবসায়ী। সেই দরিদ্রপল্লী হাটহাজারীর জোবরা গ্রাম এমনকি নিজ গ্রাম নজুমিয়া হাটে উষ্ণ সংবর্ধনায় এলাকাবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রæতির কথাগুলোও আর কখনও মনে রাখেননি চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (এই প্রতিবেদক উভয় অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন)।
অনেকেরই জানা কথা, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আগ্রাবাদে শূন্য-পকেটে এসেই ব্যবসা-বাণিজ্যের একেবারে চূড়ায় উঠে গেছেন, অথচ বাণিজ্যিক রাজধানীতে উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মাণ, হেলথ ট্যুরিজম খাতে বিনিয়োগে গরজবোধও করেননি। চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আসা এ ধরনের ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম নয়। তারাই আবার চিকিৎসাসেবা-বিহীন অভিনব ‘স্মার্ট সিটি’র স্বপ্ন দেখান! করোনাকালে এমন অনেকেই আজ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির শিকার।
‘চট্টগ্রামকে নিয়ে চিন্তা করার কি কেউ নেই?’ এ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদন লিখেন ভোরের কাগজ সম্পাদক চট্টগ্রামের কৃতিসন্তান শ্যামল দত্ত। তিনি খেদ-হতাশা-ক্ষোভ-অসন্তোষের মিশ্রণে যুক্তিাগ্রাহ্য কথাগুলোই এতে তুলে ধরেন। “চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার চরমতম বেহাল অবস্থা দেখে এক বন্ধু ফোন করে বললেন, এই শহরটিতে অন্তত ৫ হাজার ব্যবসায়ী আছেন, যারা কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার মালিক। ১ হাজার ব্যবসায়ী আছেন, যারা ৫০০ কোটি টাকার মালিক এবং ৫শ’র বেশি ব্যবসায়ী আছেন যারা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মালিক। এদের মধ্যে অনেকের সম্পদের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এই সমস্ত ব্যবসায়ী কখনো চট্টগ্রামে একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলায় আগ্রহী হননি।
করোনার এই চলমান দুর্যোগে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের এই বিশাল ধনাঢ্য জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্ব এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইসিইউর অভাবে অসময়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে নিয়ে বাঁচার চিন্তাটা তৈরি করতে হবে। নিজের চারপাশটাকে বাদ দিয়ে কানাডায় কিংবা সিঙ্গাপুরে বাড়ি তৈরি করে নিজেকে বাঁচানো যে কঠিন, তার প্রমাণ তো আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।