বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ইতিহাসে সর্বাধীক ব্যায়বহুল সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ৫৫ কিলোমিটার ভাংগা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে সহ প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ পদ্মা সেতুর সুফল পেতে দক্ষিন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষকে অনির্দিষ্টকাল অপেক্ষা করতে হতে পারে। রাজধানী থেকে দুটি সার্ভিস লেন সহ ৬ লেনের ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত পৌছার পড়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মহাসড়কগুলোর অবস্থা এখনো মানসম্মত নয়। ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল বিভাগের ৬টি, খুলনা বিভাগের ১০টি এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন এখনো নানা পরিকল্পনায় আবদ্ধ।
ভাঙ্গা থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল, ৯৩ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর এবং ১৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনাপোল স্থল বন্দর ছাড়াও ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌছার সড়ক-মহাসড়কের বেশীরভাগের অবস্থাই ক্রমে খারাপ হচ্ছে। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ফুট থেকে ২৪ফুট প্রস্থ। ভাঙ্গা থেকে ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিনÑপশ্চিমে খুলনা ও ৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিনে গোপালগঞ্জ মহাসড়কটিও ৩০ফুট প্রস্থ। এমনকি ভাঙ্গাÑফরিদপুর মহাসড়কটিও মাত্র ১৮Ñ২৪ ফুট প্রস্থ।
ঢাকাÑভাঙ্গাÑখুলনা জাতীয় মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া থেকে নড়াইল হয়ে যশোরের মহাসড়কটি এখনো মাত্র ১৮ ফুট প্রস্থ। বরিশালের লেবুখালী থেকে পটুয়াখালী জেলা সদর হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিরও একই অবস্থা।
এখনো এসব মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করার একাধীক প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে। এরমধ্যে ফরিদপুরÑবরিশালÑকুয়াকাটা/পায়রা বন্দর মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নয়নের লক্ষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ইতোমধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ প্রকল্পটিতে দাতা মেলেনি। তবে মহাসড়কটি উন্নয়নের লক্ষে দেশীয় অর্থে ভ’মি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত পর্যায়ে। অর্থের সংস্থান না হওয়ায় মহাসড়কটি প্রাথমিক পর্যায়ে ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার ৬ লেনে উন্নীত করনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কিন্তু বরিশাল মহানগরীর অভ্যন্তরে ভূমি অধিগ্রহন করে ৬লেন মহাসড়ক নির্মান নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পূর্বের এলাইনমেন্ট সংশোধন করে বাইপাস নির্মান সহ মহানগরীর অভ্যন্তর ভাগে মহাসড়কটি ‘মানসম্মতভাবে উন্নয়ন’র প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এজন্য নতুন করে বাইপাস-এর সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন এবং ভ’মি অধিগ্রহন করতে হবে। কবে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ডিপিপি প্রনয়ন ও তা একনেক-এর অনুমোদন লাভ সহ দাতার সাথে চুক্তি হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। তবে এসব কিছুর আগে দাতা সংগ্রহই মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মহল। এ মহাসড়কটি পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত উন্নয়ন না হলে পদ্মা সেতুসহ এক্সপ্রেসওয়ের পরিপূর্ণ সুফল দক্ষিণাঞ্চলবাশীর মিলবে না। তবে কুয়েত তহবিলে বরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে ৪ লেনের একটি সেতুর নির্মান কাজ চলতি বছরেই শেষ হচ্ছে।
অপরদিকে ভাঙ্গা থেকে ভাটিয়াপাড়া হয়ে যশোরÑবেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত না করলেও পদ্মা সেতু সহ সদ্য নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের সুফল ঐ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে জুটবে না বলে মত ওয়াকিবাহাল মহলের। তবে ঐ মহাসড়কের গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তি কালনা’য় মধুমতি নদীর ওপর জাপানী অর্থে প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি ৬ লেন সেতু বর্তমানে নির্মানাধীন।
সড়ক অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট’এর আওতায় বেনাপোল-যশোরÑভাটিয়াপাড়াÑভাংগা অংশের মহাসড়কটি উন্নয়নের লক্ষে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা প্রায় শেষ। সমিক্ষা ও বিস্তারিত নকশার পরে বৈদেশিক অনুদান বা ঋন পাওয়া গেলেই ঐ মহাসড়কটিও ৬ লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ মহাসড়ক উন্নয়নে ভারতীয় ঋন পাবার যথেষ্ঠ সম্ভবনার কথাও জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল মহলটি।
অপরদিকে ঢাকাÑখুলনা মহাসড়কের অবশিষ্ট ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-খুলনা অংশের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষেও সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ নকশা প্রনয়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ চুড়ান্ত পর্যায়ে বলে জানা গেছে। তবে এ প্রকল্পেও কোন দাতা মেলেনি।
সড়ক অধিদপ্তরের একাধীক সূত্র নাম প্রকাশনা করার শর্তে জানিয়েছে, ফরিদপুরÑবরিশালÑপায়রা বন্দরÑকুয়াকাটা, ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়াÑনড়াইলÑযশোরÑবেনাপোল, ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জÑখুলনা/ মোংলা মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করতে না পারলে পদ্মা সেতু সহ ঢাকাÑমাওয়াÑভাংঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের তেমন কোন সুফল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। এমনকি এলক্ষে জরুরী পদক্ষেপর গ্রহন করলেও পুরো বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ এসব জাতীয় মহাসড়কসমুহ উন্নয়নে কমপক্ষে ৭-৮ বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ঢাকাÑমাওয়াÑভাংঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মত এসব জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়নের কাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্নের উদ্যোগ নেয়া হলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অপেক্ষকৃত দ্রুততর হবে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী সহ পদ্মার পূর্বতীরে সড়ক পথের দুরত্ব হৃাসের লক্ষে বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে চরজানাজাতÑমাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নতুন একটি মহাসড়ক নির্মান কাজের উদ্বোধন করেন। ১৯৮৩ সালে ঐ মহাসড়ক চালুও হয়।
কিন্তু ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বণ্যায় ব্যাপক ক্ষতির পরে ওপেক তহবিলে তার পূণর্বাশন সম্পন্ন হয়। পরবর্তিতে ওপেক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং এনডিএফ-এর সহায়তায় খুলনাÑমোংলা মহাসড়কের টাউন নওয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মান ও পূণঃনির্মান ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মিত হয়। নির্মানকাজ শেষে ঐ মহাসড়কটি সহ মাওয়াÑভাংঙ্গা অংশের নবম কিলোমিটারে আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর ‘হজরত হাজী শরিত উল্লাহ (রঃ)সেত’ুটি যানবাহন চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে উš§ুক্ত করা হয় ২০০৫ সালের ১৫ মে। এক হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকাÑমাওয়াÑভাংঙ্গাÑভাটিয়াপাড়াÑগোপালগঞ্জÑখুলনা মহাসড়ক নির্মানের ফলে রাজধানীর সাথে বরিশালের দুরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার, খুলনার দুরত্ব প্রায় সোয়াশ কিলোমিটার ও মোংলার দুরত্ব ১০৯ কিলোমিটার হৃাস পায় । এছাড়া যশোর ও বেনাপোলের দুরত্বও যথেষ্ঠ হৃাস পায়। এমনকি এ মহাসড়কটি নির্মানের ফলে ঢাকাÑঅরিচা মহাসড়কের ওপরও যানবাহনের চাপও প্রায় অর্ধেক হৃাস পেয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।