পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে লাভবান হয়েছে টেলিকম খাত। সাধারণ ছুটির কারণে ঘরবন্দি মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করেই দিনের বেশিরভাগ সময় পার করেছেন। ফলে ২৫-৩০ শতাংশ পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে এই করোনাকালে। মার্কেটিং থেকে শুরু অফিসের সকল কাজে মোবাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। বেড়েছে ভয়েস কলের হারও। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কিংবা সময় কাটানোর জন্য হলেও প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়েছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি কেনাকাটা, মানুষের দৈনন্দিন বাজার থেকে শুরু করে নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। চলমান মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তাই করোনায় লাভবান এই খাত থেকে এবার সরকার রাজস্ব বাড়াতে চায়। যা দেশের বিপর্যস্ত আর্থিকখাতকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য অনুযায়ী, করোনায় যে কয়টি খাতে তেমন প্রভাব পড়েনি তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টেলিকম খাত। তাই আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে এই খাতে বিশেষ নজর দিচ্ছে এনবিআর। এজন্য নতুন অর্থবছরে মুঠোফোনে কথা বলায় সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা। এতে বেড়ে যাবে মোবাইলে কথা বলার খরচ, ইন্টারনেট ব্যবহার, এসএমএস সহ মোবাইলের অন্যান্য সেবার খরচ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করলে মানুষের মধ্যে অযথা কথা বলার প্রবণতা অনেকাংশে কমবে। আর যদিও অযথা কথা বলেও সেক্ষেত্রে সরাসরি লাভবান হবে সরকার। বড় অঙ্কের রাজস্ব যোগ হবে সরকারি কোষাগারে। প্রযুক্তিবিদরা মনে করেন, সম্পূরক শুল্ক তথা মোবাইল সেবার খরচ বেড়ে গেলে মানুষও ব্যবহার কমিয়ে দেবে। পূর্বের খরচ ঠিক রেখেই তারা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কথা এবং কাজ ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ কথা ও কাজে মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দেবে। তবে সম্পূরক শুল্ক আরোপের ফলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করে মোবাইল টেলিকম অপারেটররা। তারা বলেন, শুল্ক বেড়ে গেলে কোম্পানিগুলোর ব্যবসার স্থায়িত্ব চ্যালেঞ্জর মুখে পড়বে এবং গ্রাহকরাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআর’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, এই খাতে শুল্ক বাড়লে সেবার খরচও বেড়ে যাবে এবং মানুষ অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে দেবে। এতে গ্রাহকরা উন্নত মানের সেবা পাবে। একই সঙ্গে সরকার এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে।
জানা যায়, মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা এবং কল রেট কমার পর থেকেই মানুষ মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে স্বল্পমূল্যের মোবাইল ফোনের কারণে একাধিক মোবাইল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে মানুষ। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনেও মানুষের হাতে থাকছে একাধিক স্মার্টফোন। শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক স্কুল শেষ করেই অভিভাবকদের কাছে বায়না করছে স্মার্টফোনের। দাম হওয়ার কারণে অপ্রয়োজনে কিছুদিন পর পর স্মার্টফোন পরিবর্তন করাও এক প্রকার ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া কল রেট কম হওয়ার কারণে রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়বে অসংখ্য মানুষের মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার দৃশ্য। অনেকে জরুরি প্রয়োজন বা কাজের হলেও অধিকাংশই অকারণে। আর বর্তমান লকডাউন মানুষের এই অযথা কথা বলার মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসেব অনুযায়ী, করোনা মহামারীর প্রভাব যে সব খাতে পড়েনি তারমধ্যে অন্যতম টেলিকম। আর দেশের রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাতের একটি মোবাইল অপারেটর। আর আগামী অর্থবছরে এই খাতে রাজস্ব বাড়ানোয় বিশেষ নজর দেওয়া হবে। সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হবে ১৫ শতাংশ। একইভাবে বাড়তে পারে মোবাইল ফোন আমদানি শুল্কও। যার প্রভাবে মুঠোফোনে কথা বলায় খরচ বাড়তে পারে এ মাস থেকেই।
জানা যায়, মুঠোফোন সেবাতেই বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যবসা হয়। এই খাতে বর্তমানে ২৬ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬ অর্থবছরে আরোপ করা হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ২০১৫ সালে ১ শতাংশ সারচার্জ, ২০১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে করা হয় ৫ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরে সেটি করা হয় ১০ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
সরকার ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলে একজন গ্রাহককে ১০০ টাকার কথা বলা বা মোবাইল সেবা নেয়ার জন্য খরচ করতে হবে ১৩৩ টাকা। অথবা ১০০ টাকায় একজন গ্রাহক ৭৫ টাকার মতো সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। বাকিটা সরকার ট্যাক্স গ্রহণ করবে।
এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, করোনায় দেশের বেশিরভাগ রাজস্ব আদায়ের খাতের বাজে অবস্থা। তখন টেলিকমসহ বেশ কিছু খাতে এর খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। এসব বিবেচনায় এবং দেশের স্বার্থে এই খাতে শুল্ক-কর কিছুটা বৃদ্ধির চিন্তা করা হচ্ছে।
একাধিক প্রযুক্তিবিদ বলেন, বর্তমানে অপারেটরা স্বল্প স্পেকট্রাম নিয়ে অধিক সংখ্যক গ্রাহক সেবা দিচ্ছে। কলরেট ও ইন্টারনেটের বিল কম হওয়ার কারণে মানুষ অপ্রয়োজনে কথা বলে ব্যবহার করে। অনেক শিক্ষার্থীও অপ্রয়োজনে রাত জেগে কথা বলে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মানুষ প্রয়োজনের বাইরে অকারণে কথা বলে। ট্যাক্স বেড়ে গেলে এটি কমে যাবে। যদিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে মোবাইল ফোন অপারেটররা তবে লাভবান হবে সরকার। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট বিভাগের সবচেয়ে বেশি শুল্ক-ভ্যাট আদায় করা তিনটি খাতের একটি মোবাইল অপারেটর।
তবে ট্যাক্স বৃদ্ধি করাকে ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে মনে করে মোবাইল ফোন অপারেটররা। বাংলালিংক-এর চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, করোনা সংকটের কারণে এমনিতেই টেলিকম খাত এখন কঠিন সময় পার করছে। মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় গত কয়েক মাসে অপারেটরদের আয় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে আগামী বাজেটে টেলিকম সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের ব্যবসার স্থায়িত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। তাছাড়া এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে টেলিকম সেবার মূল্য বেড়ে গেলে গ্রাহকরাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবেন। তীব্র সংকটের এই সময়ে টেলিকমের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবার মূল্য বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এনবিআর-এ ইতোমধ্যেই বাজেট নিয়ে অপেরাটরদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, বিষয়গুলি বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে অপারেটরদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।
রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, মোবাইল সেবা গ্রহণে গ্রাহকের প্রতি ১০০ টাকা ব্যয়ের ৫৩ টাকাই নানা কর হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হয়। ইতোমধ্যে উচ্চ করভারে জর্জরিত মোবাইল সেবার ওপর তাই নতুন করে এসডি বৃদ্ধি করা হলে তা গ্রাহকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে। করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের একটি বড় অংশ এখন ইন্টারনেটভিত্তিক ডিজিটাল যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন, এসডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এ ধারাতেও বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এসডি বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্তে গ্রাহকদের বড় একটি অংশ ব্যবহার কমিয়ে খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয় করেন, এতে অপারেটরদের আয় কম হয় এবং সার্বিকভাবে সরকারের রাজস্ব আদায়ও তেমন বাড়ে না।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ ইনকিলাবকে বলেন, আমরা ইদানিং অতিরিক্ত কথা বলছি। কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই কথা বলি। এতে শারীরিক ও মানষিক নানা সমস্যায় পড়ছে মানুষ। তাই মোবাইলে কথা বলায় সম্পূরক শুল্ক আরোপ অত্যন্ত ভালো একটি উদ্যোগ হবে। এতে অযথা কথাবলা কিছুটা হলেও কমবে। তিনি বলেন, মোবাইল আমাদের নানা সুবিধা দিচ্ছে। অফিসের সকল কাজ, সেকেন্ডের মধ্যে বিকাশে টাকা চলে আসাসহ মোবাইলবিহীন চলা কষ্টসাধ্য। এসব সেবা দিয়ে দেশ চালানোর জন্য সরকারতো এখান থেকে কিছু রাজস্ব নিবেই। ড. আব্দুল মজিদ বলেন, এভাবে কোন কোন ক্ষেত্রে রাজস্ব আয় করা যায় এনবিআরকে তা খোঁজা দরকার বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।