পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাবিশ্বের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের অবস্থাও তাই। কিন্তু প্রতিবছর নিয়মানুযায়ী বাজেট ঘোষণা এবং সংসদে পাস করতে হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রতিকূল পরিবেশেও সংসদে ভিন্ন পদ্ধতিতে বাজেট অধিবেশন বসবে। কিন্তু বাজেট মানেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি।
জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধিতে গৃহিণীসহ সাধারণ মানুষের দুর্ভাবনা। তবে এবার কিছুটা হলেও ভিন্ন। প্রস্তাবিত বাজেটে থাকছে ব্যতিক্রমী কিছু। করোনার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ইতোমধ্যেই সরকারি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক বছরের জন্য এমপি, মন্ত্রীদের বেতনের শতকরা কিছু অংশ কর্তন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তেলেঙ্গানা রাজ্যসহ কয়েকটি রাজ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সবকিছু করা হয়েছে অর্থনীতি চাঙ্গা এবং সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে।
জানতে চাইলে ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. সাজ্জাদ জহির ইনকিলাবকে বলেন, অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি বেতন বৈষম্য এই দুর্যোগে সমন্বয় করা উচিত।
করোনাভাইরাস দেশকে বর্তমান ও সামনের দিনে এক ধরণের সঙ্কটের মুখে ফেলেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা থেকে শুরু করে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। আর এ জন্য গণমানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই প্রণয়ন করা হচ্ছে এবারের প্রস্তাবিত বাজেট। আসন্ন প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি ও কর্মসংস্থানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। থাকছে বিভিন্ন খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তাব ও জনকল্যাণমুখী নানা উদ্যোগ। প্রতিবছরই দেশের বাজেটের সিংহভাগ অর্থই ব্যয় হয় বেতন, ভাতা, পেনশন, সুদসহ বিভিন্ন অনুন্নয়ন খাতে। করোনার কারণে এ বছর দেশের বেসরকারি চাকরিজীবীদের মাথায় হাত। আছে চাকরি হারানো, বেতন কমা বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ নানা শঙ্কা। কিন্তু আগের মতো ভালোই আছে দেশের সরকারি চাকরিজীবীরা।
গত দুই মাস অফিস না করেও তারা স্বাভাবিকভাবে বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা পেয়েছেন। সামনেও এ ধরণের কোন সিদ্ধান্ত হলে তারা সকল সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। এতে সমাজে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বৈষম্য। আর এই বৈষম্য কমানোর তাগিদ দিয়েছেন দেশের অর্থনীতিবীদ ও বাজেট বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বর্তমান দুর্যোগের বছরে অন্তত সবার কথা চিন্তা করে বাজেট তৈরি করা হোক। এক্ষেত্রে সমাজে বিদ্যমান সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের আয় বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর করা হোক। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের অন্যান্য চাকরিজীবীদের সাথে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিছুটা হলেও কমানো উচিত বলে মনে করেন। অনেকের মতে, বর্তমান দুর্যোগের সময়ে সরকারি চাকরিজীবীদেরই স্বপ্রণোদিত হয়ে সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা দরকার ছিল।
অর্থনীতিবীদরা পরামর্শ দিয়েছেন- চলমান করোনা সঙ্কটে ঘোষিত বাজেটে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ, আপ্যায়ন, দাপ্তরিক সভার সম্মানী, কিংবা স্থায়ী সম্পদ কেনার ক্ষেত্রে খরচ কমানোর। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আসছে বাজেটে অর্থের অপচয় রোধে গুরুত্ব দেয়া হবে। বাড়তি বরাদ্দ থাকবে স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থানে।
সূত্র মতে, চলতি বছরের ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটের ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় ধরা হয় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন, ভাতা, ভর্তুকি, ঋণের সুদ, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনে। অর্থাৎ বাজেটের আকার যত বড় দেখা গেছে তার মাত্র ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ বা ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা গেছে সরাসরি জনগণের উন্নয়ন প্রকল্প এবং সেবায়। যার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবহন ও যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উল্লেখযোগ্য।
করোনা মহামারিতে প্রতিকূল পরিস্থিতির বাস্তবতায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে আসছে অর্থবছরের বাজেট। তাই অর্থনীতিবিদরা গতাণুগতিক বাজেটের ধারণা থেকে বেরিয়ে অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার ও জরুরি প্রয়োজনীয় খাতকে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ড. সাজ্জাদ জহির ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য সমাজে বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিদিনই এই বৈষম্য বাড়ছে। তাই এই দুর্যোগের সময় সমন্বয় করা উচিত। তিনি বলেন, দুর্যোগে বেসরকারিখাত একবারে বিপর্যস্ত। তারপরও এই সময়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখে সমাজের সাধারণ মানুষের পাশে সাধ্যমতো দাড়াচ্ছে। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীদের পক্ষ থেকে তেমন কোন উদ্যোগ দেখছি না। ড. সাজ্জাদ জহির বলেন, আসন্ন বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের হয়তো বেতন কমিয়ে অন্যক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ানো সম্ভব হবে না। এটা আমি বলছিও না। তারপরও সরকারি চাকরীজীবীদেরই উচিত ছিল এই দুর্যোগের সময় বৈষম্য নিরসনে স্বপ্রণোদিত হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়াতে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করা।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২০২০-২১ অর্থবছরের মোট উন্নয়ন ব্যয় অনুমোদিত হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা। বিভিন্ন সূত্রমতে, এবার মূল বাজেট হতে পারে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থাৎ অনুন্নয়ন ব্যয় প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার করোনা মহামারিকে আমলে নিয়েই বাজেট প্রণয়ন করবে বলে জানান পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাজেটের মূল বিষয় হল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পুনর্জ্জীবিত করা। কুটির শিল্প, কৃষি, মধ্যমও ছোট সব শিল্প হাত যেন চালু হয়।
অভ্যন্তরীণ বেশিরভাগ পণ্যের বেচাকেনা কমে যাওয়ার পাশাপাশি করোনার প্রকোপ না কমা পর্যন্ত আমদানি রপ্তানী বাণিজ্যেও চরম মন্দা থাকবে, যা সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুঞ্জীভূত মুনাফা এখন কাজে লাগানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ড. শামসুল আলম।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিপাকে দেশের সাধারণ মানুষ। তাই আসন্ন বাজেট দেশের গণমানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই প্রণয়ন করা উচিত। এক্ষেত্রে তিনি এই দুর্যোগের বছরে হলেও সরকারি-বেসরকারি আয় বৈষম্য কমানোর তাগিদ দেন। বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ট্যুর, আপ্যায়ন, দাফতরিক সভার সম্মানীসহ বিভিন্ন ভাতা সমন্বয় করতে পারে সরকার বলে উল্লেখ করেন এস এম রাশিদুল ইসলাম।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।