পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রতিদিনই ভয়াবহতা ছড়াচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতি। শনাক্ত ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে। গতকালও দেশে করোনায় সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যু ও সর্বোচ্চ ২৫৪৫ জন শনাক্ত হয়েছে। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা সেবা নিয়ে মানুষ বিপদ বাড়ছে। বিশেষায়িত করোনা হাসপাতালগুলো করোনার রোগীর সঙ্কুলান হচ্ছে না।
যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৮৫ ভাগই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, বাকি ১৫ শতাংশ রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। হাসপাতাল-ভীতির কারণে বাসাতেই থাকছেন অনেক রোগী। টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন বাসায় চিকিৎসাধীন কোভিড রোগীরা। অবশ্য মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ থাকা রোগীদের বাসা-বাড়িতে বিচ্ছিন্ন থেকে চিকিৎসা নেয়ার ওপর জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বাসায় থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করোনা জয় করছেন অনেকে। তবে এরকম কতজন সুস্থ হয়েছেন, সেই তথ্য নেই অধিদপ্তরের কাছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার দুই দিন পর তিনি মুঠোফোনে বার্তা পান যে তিনি করোনায় আক্রান্ত। তিনি ভর্তির জন্য সরকার নির্ধারিত একটি হাসপাতালে যান। কর্তৃপক্ষ বলেছে, শয্যা খালি নেই। এরপর তিনি আইইডিসিআরে যোগাযোগ করেন। আইইডিসিআর তাকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেয়। তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন। পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তায় আছেন। কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না।
সূত্র মতে, প্রতিদিনই করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে। তবে শনাক্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে না চিকিৎসার সুবিধা। গতকাল রোববার পর্যন্ত দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১০ হাজারেরও কম। মৃত্যু হয়েছে ৬৫০ জনের। এখনো প্রায় ৩৭ হাজার মানুষ এখনও সংক্রমণ বয়ে চলেছে। অথচ সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাদেশে করোনা রোগীদের জন্য মাত্র ১৩ হাজার ২৮৪ টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। তারও অনেকগুলোর এখনও পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর তাই বাড়িতে করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। সব রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশে এখন করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে। দীর্ঘ ৬৬ দিন ছুটির পর গতকাল রোববার থেকে খুলছে অফিস-আদালত। তাই আক্রান্তের সংখ্যা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। এ অবস্থায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপরও চাপ অনেক বেড়ে যাবে। সেই চাপ স্বাস্থ্য বিভাগ কতটুকু সামাল দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, সবকিছু খুলে দেওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়বে। কিন্তু সে তুলনায় চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে তীব্র সঙ্কটে পড়বে চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা। সংক্রমণের এই পর্যায়ে রোগী বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাদের মতে, কারা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেবেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কীভাবে করাবেন, রোগ নিরাময় হচ্ছে কি না কীভাবে বুঝবেন, রোগ নিরাময়ের সনদ কীভাবে, কার কাছ থেকে জোগাড় করবেন, প্রয়োজনে কখন ও কীভাবে হাসপাতালে যাবেন-এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন না। হাসপাতালের প্রস্তুতি, রোগী ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনেক আলোচনা ও পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। কিন্তু বাড়িতে থাকা রোগীর বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য কেউ দিচ্ছেন না। অথচ হাসপাতালের চেয়ে বাড়িতে করোনা রোগী চার গুণেরও বেশি। মূলত টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সরকার বাড়িতে রোগীর সেবা দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫ ভাগ রোগীই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর ১৫ ভাগ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, হটলাইনে ফোন করলেই বাসায় থাকা রোগী ও সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দৈনিক গড়ে এক লাখ ফোনকল পাচ্ছে তারা। পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন হাসপাতালের টেলিমেডিসিন সেবাও।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে মোবাইল নম্বর ভুল না দিলে সবার খোঁজ-খবর ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র টেলিফোনে দেওয়া হয়। তারপরও বাড়িতে থাকা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা টেলিমেডিসিনের সেবার আওতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তারপরও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ করোনায় আক্রান্ত মানুষ সরকারি চিকিৎসাসেবার বাইরে রয়ে গেছেন। এই হার প্রতিদিন বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
করোনার জন্য বিশেষায়িত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জামিল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রোগীর চাপ অনেক। ২৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও ৩শ’র বেশি রোগী ভর্তি আছে। গত ২ সপ্তাহ থেকেই আইসিইউ বেড খালি হচ্ছে না। ছাড় না পাওয়ায় নতুন করে আইসিইউতে রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ওয়ার্ডেও কিছু খুবই খারাপ রোগী ভর্তি আছে। তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা, বয়সসহ বিভিন্ন বিষয় দেখে আইসিইউতে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি শুধু করোনা বিশেষায়িত এই হাসপাতালেই নয়; সব বিশেষায়িত হাসপাতালেই একই চিত্র। ব্রিগেডিয়ার জামিল আহমেদ বলেন, দেশে যেভাবে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে সেভাবে ভর্তি রোগী ছাড় পাচ্ছে না।
করোনা বিশেষায়িত রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. এহেতেশামুল হক ইনকিলাবকে বলেন, করোনা ইউনিটে রোগীদের প্রচন্ড চাপ। একজন ছাড় পেলে অপেক্ষারত থেকে অন্য একজনকে ভর্তি করা হচ্ছে। এমনকি ১ হাজার বেড করা হলেও ৫ মিনিটেই ভরে যাবে এ রকম অবস্থা। তবে করোনার লক্ষণ থাকা রোগীর ভিড় অনেক বেশি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারলে ম্যানেজার (প্রশাসন) জামিল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ অনেক বেশি। বেড ফাঁকা নেই। এমনকি ভর্তি রোগী বেরও হচ্ছে না। তাই ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষমান রোগীও ভর্তি করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে। এমনকি আগে থেকে নির্ধারিত অপারেশনের রোগীদেরও নতুনভাবে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদেরকেও পরবর্তীতে আসার জন্য বলা হচ্ছে। রাজধানীর আরেক বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ার হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, তাদের করোনা ইউনিটে বেড ফাঁকা নেই। এই চিত্র রাজধানীর অধিকাংশ বেসরকারি নামী-দামী হাসপাতালের।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. মো. নজরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত নয়। এ অবস্থায় আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়বে। তিনি বলেন, সরকার উল্টো পথে হাটছে। এমনিতেই আক্রান্তও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী। তারপর আবার জীবযাত্রা স্বাভাবিক করায় মানুষ কর্মক্ষেত্রে পরস্পরের সংস্পর্শে যাবে; সড়কে-গণপরিবহনে পরস্পরের কাছাকাছি আসবে। এতে সংক্রমণ বাড়বে এবং এই বৃদ্ধির ধারা দীর্ঘ হবে। এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে। সেই চাপ স্বাস্থ্য বিভাগ কতটুকু সামাল দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সার্বিকভাবে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, আমরা কয়েকদিন পর আরও বড় বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, বাড়িতে থাকা রোগীদের চিকিৎসার জন্য টেলিমেডিসিনের আওতা বাড়ানো, বেশি মানুষকে সেবার আওতায় আনতে সম্প্রতি সভা হয়েছে। আশাকরছি রোগী বাড়লেও টেলিমিডিসিন সেবার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা সেবার সমাধান করা যাবে।
অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন ধরণের অবহেলার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে শিগগিরই রাজধানীর আরও একাধিক বেসরকারি মেডিকেলকে করোনার জন্য বিশেষায়িত করা হবে। এছাড়া সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালে সব ধরণের রোগীর সেবা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই রোগী বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।