Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেরপুরে হাফিজুল-শহিদুল চক্রের হাতে জিম্মি এক পল্লী

খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার গুরুতর অভিযোগ

শেরপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০২০, ৪:২৩ পিএম

শেরপুরে হাফিজুল-শহিদুল নামে এক দাগী অপরাধী চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এক প্রত্যন্ত পল্লী। খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় ওই চক্র এলাকায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য কায়েম করলেও কোনভাবেই নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না তাদের। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস না পাওয়ায় কোন কোন ঘটনা গোপনই রয়ে যায়। আর কোন কোন ঘটনা আইন-আদালত বা মামলা-মোকদ্দমায় গড়ালেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তারা। শাস্তি হচ্ছে না নানা কারণে। ফলে এলাকায় দিনদিন বাড়ছে তাদের অপরাধ ও প্রভাব। ফলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার পাশাপাশি প্রায় প্রতিনিয়তই আতঙ্কে সময় কাঁটে ওই পল্লীর নিরীহ লোকজনের। আশঙ্কা করা হচ্ছে, খুব দ্রুত ওই চক্রের বিরুদ্ধে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ না নিলে এলাকাটি সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হবে। অন্যদিকে, ওই অপরাধী চক্রের হাত থেকে বাঁচতে এলাকাবাসীর তরফ থেকে সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও র‌্যাবের কমান্ডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট মহলে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
১৮ মে সোমবার ওই অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় সূত্রসহ একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের এক প্রত্যন্ত পল্লী দিঘলদী মোল্লাপাড়া। ওই পল্লীতে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস। ওই পল্লীতেই কয়েক বছর যাবত স্থানীয় জনৈক হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজুল (৩১) ও শহিদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল (৪১) এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠেছে এক অপরাধী চক্র। আর ওই চক্রে যুক্ত রয়েছে স্থানীয় রাকিব (২৩), জলিল (৪০), মিসকিন (৪৫), রিপন (২৩), আশরাফ (৪৫), মিনহাজ (৪০), বাহেছ (৪৫), ছায়দুল (২৮), মিঠুন (২২), রবিজল (৩৫), কমল (২৪), রাজন (২২), রনি (২৮), সুমন (২২) ও ইব্রাহিম (৩৫), কাজীরচর কুসুমহাটির করিম (৩৫), কুসুমহাটি দড়িপাড়ার আকবর (৩৭) ও ফটু (৩৫), পার্শ্ববর্তী চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামের মোবারক (২৮), সাতপাকিয়া গ্রামের নিজাম (৩০), আমতলী গ্রামের রুবেল (২৫), জঙ্গলদী নতুনপাড়ার মনোয়ার (৩৫), কামারচরের বাচ্চু (৪৮), সুমন (৩২), শফিক (৪০) ও বায়েজীদ (২৭), জামালপুরের গেইটপাড় এলাকার মানিক (৩০), আমান (৪০), আফাজ (৩৮) এবং বিভিন্ন এলাকার আরও ১৫-২০ জনসহ প্রায় অর্ধশতাধিক যুবক। চক্রের ওই সদস্যদের নিয়ে হাফিজুল ও শহিদুল নিজ এলাকাসহ আশেপাশের এলাকায় একের পর এক নানা অপরাধ ঘটিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। ওই চক্রের হাতে গত বছরের ২ জুলাই রাতে খুন হয় দিঘলদী মোল্লাপাড়া গ্রামের অহেজ আলীর ছেলে লিটন (১৮)। ওই ঘটনায় লিটনের বাবা বাদী হয়ে শহিদুল ও হাফিজুলকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনকে স্বনামে ও আরও অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে সদর থনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্তাধীন থাকলেও ঘটনার দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১০ মাসেও আসামীদের বিরুদ্ধে দাখিল হয়নি অভিযোগপত্র। বরং আসামীরা আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে অল্প কয়েক দিনেই জামিনে বেরিয়ে গেছে। এছাড়া তাদের মধ্যে হাফিজুল ও শহিদুলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার সাঞ্জারপাড় এলাকার তাপস কুমার দাসের দায়ের করা ডাকাতি মামলা, হাফিজুলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সদর থানার এসআই মোহাম্মদ আলীর দায়ের করা মাদক মামলা, হাফিজুলসহ ২ জনের বিরুদ্ধে সদর থানার এসআই রবিউল ইসলামের দায়ের করা আরেকটি মাদক মামলা, হাফিজুলসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সদর থানার এসআই সুরুজ্জামানের দায়ের করা ডাকাতির প্রস্তুুতির মামলা, শহিদুল ও হাফিজুলসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে স্থানীয় ছামিদুল হকের দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলা এবং শহিদুল ও হাফিজুলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মারপিট, হামলা ও লুটপাটের অভিযোগে স্থানীয় আজমত আলীর দায়ের করা মামলাসহ অন্তত ১০টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হলেও দ্রুত হচ্ছে না সেগুলোর বিচার নিষ্পত্তি। এছাড়া শহিদুল ও হাফিজুলসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মারপিট, হামলা ও লুটপাটের অভিযোগে স্থানীয় আজমত আলীর দায়ের করা আরও একটি মামলা ও হাফিজুলের বিরুদ্ধে সদর থানার এসআই রবিউল ইসলামের দায়ের করা আরও একটি মাদক মামলাসহ কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে- যার সবগুলো থেকেই জামিনে রয়েছে আসামীরা। ফলে একের পর এক খুন, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করেও ওই চক্রের হোতা শহিদুল-হাফিজুলসহ প্রায় সকলেই এখন এলাকায় প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। এতে ভুক্তভোগীরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার পাশাপাশি এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। সেই সাথে তারা নিজেদের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ছামিদুল হক সম্প্রতি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এদিকে চাঞ্চল্যকর লিটন হত্যা মামলার বাদী অহেজ আলীসহ পৃথক ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আজমত আলী ও আব্দুর রহিমসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমান ও সাবেক একাধিক জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ অনেকেই নিরীহ এলাকাবাসীকে বাঁচাতে ওই চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
অন্যদিকে নানাভাবে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি শহিদুল ও হাফিজুলের বক্তব্য। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া জানান, তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগই হরহামেশাই শুনা যায়। কিন্তু সব অভিযোগের সাথেই তারা জড়িত- এমনটা মনে করি না। তিনি চাঁদাবাজির অভিযোগটি সঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন। তার মতে, তাদের সাথে স্থানীয় কিছু শত্রুতা রয়েছে, সেইসাথে রয়েছে কিছু মামলাও। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের কাছে জিম্মি থাকার বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হাফিজুল-শহিদুলদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তারা জামিনেও রয়েছে। সম্প্রতি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট দেওয়া অভিযোগের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে ওই এলাকার হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলার বাদী পক্ষের তরফ থেকে হুমকির অভিযোগে সদর থানায় একটি জিডি রেকর্ড হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ