বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শেরপুরের শ্রীবরদীতে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে দীর্ঘ ৪ মাস যাবত বিনা বিচারে হাজত খাটছেন একই পরিবারের দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ ২ নারী ও ১ বৃদ্ধ। উপজেলার সীমান্তবর্তী পাঁচ মেঘাদল (বৈষ্ণবপাড়া) গ্রামের ওই ঘটনায় পরস্পর শ্বশুর-পুত্রবধূ সম্পর্কের ৩ জনের হেফাজত থেকেই বেশি পরিমাণ মাদক উদ্ধারের অভিযোগ থাকায় মিলছে না তাদের জামিন। অন্যদিকে ওই মামলায় হাজতে ঢুকানোর সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন দখল করে নিয়েছে তাদের বসতভিটাসহ বিরোধপূর্ণ জায়গা-জমি। ফলে পরিবারের অন্য সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র।
জানা যায়, শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাঁচ মেঘাদল (বৈষ্ণবপাড়া) গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের পুত্র বৃদ্ধ ইসমাইল হোসেন (৭৫) এর বসতভিটাসহ একখন্ড জায়গা-জমি ছাড়া অন্য কোন সহায়-সম্পতি নেই। কিন্তু সেটুকু জায়গা-জমি নিয়েই তার সাথে নিজের সহোদর ছোট ভাই ইসরাফিল হোসেনের দীর্ঘদিন যাবত বিরোধসহ মামলা-মোকদ্দমা চলে আসছিল। অভিযোগ রয়েছে, ওই বিরোধের এক পর্যায়ে বিরোধপূর্ণ জমির প্রতি লোভ পড়ে আমানুল্লাহ হাজী নামে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর। ফলে ওই ব্যক্তি যোগ দেয় ইসরাফিলের সাথে। এর পর থেকেই তারা বৃদ্ধ ইসমাইল হোসেনকে বিরোধপূর্ণ জায়গা-জমি ছেড়ে দিতে নানা ধরণের চাপসহ হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। ফলে বৃদ্ধ ইসমাইলের ২ পুত্র মামুন মিয়া (৩০) ও সাদ্দাম হোসেন (২৮) জীবিকা নির্বাহের তাগিদে রাজধানী ঢাকায় চাকুরীরত থাকলেও মামুনের ২ স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২৪) ও রূপসী বেগম (২৩) এবং সাদ্দামের স্ত্রী খাদিজা খাতুন (২২) কে বাড়িতে পাঠিয়ে রাখা হয় তার সংসারে। কিন্তু তাতেও রক্ষা হয়নি ওই বৃদ্ধের। ইসরাফিলের পক্ষ নেওয়া প্রভাবশালী আমানুল্লাহ হাজী স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতাসহ তার লোকজন বৃদ্ধ ইসমাইলকে পরিবারের লোকজন নিয়ে বসতভিটা ও জায়গা-জমি ছেড়ে দিতে চাপ দিয়েও ব্যর্থ হয়ে বেছে নেয় ভিন্ন কূট কৌশল ।
এরই এক পর্যায়ে গত ২২ জানুয়ারী রাতে নিজ বসতবাড়ী থেকে ওই বৃদ্ধ এবং তার ৩ পুত্রবধূকে আটক করে নিয়ে যায় থানা পুলিশ। এর পর দিন তাদের মাদক আইনের নিয়মিত মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই মামলার নকল ওঠিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ ইসমাইল হোসেনের বসতবাড়ীর উঠানে দেখানো হয়েছে ঘটনাস্থল এবং খাদিজা খাতুন (২৮) নামে তার অন্তসত্ত্বা এক পুত্রবধূর হেফাজত থেকে কোন মাদক উদ্ধার দেখানো না হলেও বৃদ্ধ ইসমাইলের হেফাজত থেকে ২৯০ পিচ এবং অপর ২ পুত্রবধূর মধ্যে মাহমুদার হেফাজত থেকে ২৮০ পিচ ও রূপসীর হেফাজত থেকে ১৬০ পিচসহ মোট ৭৩০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়েছে। কেবল তাই নয়, ওই মামলাতেই চাকুরীর কারণে ঢাকায় অবস্থানরত বৃদ্ধের পুত্র মামুন এবং স্থানীয় ওই নেতার রোষানলে থাকা আব্দুল হালিম (৩০) নামে এক নিরীহ যুবককেও সহযোগী আসামী করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই মামলায় পিতা-পুত্র-পুত্রবধূসহ একই পরিবারের ৫ জনসহ ৬ জনকে করা হয়েছে আসামী।
এদিকে মামলার তিন দিন পর গ্রেফতারকৃত অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ খাদিজা খাতুন এবং পরবর্তীতে মামুন মিয়া ও আব্দুল হালিম জামিনে গেলেও গ্রেফতারের পর থেকেই দীর্ঘ ৪ মাসের অধিক সময় যাবত হাজতবাসে রয়েছেন ইসমাইল হোসেন ও তার ২ পুত্রবধূ। ইসমাইলের ছেলে মামুনের দাবি, তার পিতার বয়স মামলায় ৬২ বছর উল্লেখ করা হলেও তার ন্যাশনাল আইডি কার্ড অনুযায়ী বয়স ৭০ বছরের উর্ধে। তার পরিবারের দাবি প্রকৃতপক্ষে তার বয়স হবে প্রায় ৭৫ বছর। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবত শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওযায় স্বাভাবিকভাবে খুব একটা চলাফেরায় সক্ষম না। যে কারণে তাকে নিয়ে বাড়তি ঝামেলার পাশাপাশি কারাগারের লোকজনকে থাকতে হয় উৎকন্ঠায়। আর মাহমুদার কোলে মিথিলা নামে ২ বছরের এবং রূপসীর কোলে মুশফিকা নামে ৩ বছরের এক দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকায় ওই ২ নারী আসামীকেও অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মামুনের অভিযোগ, তার চাচা ইসরাফিল নিজের জায়গা-জমি শেষ করে বড় ভাইয়ের সাথে অযথা বিরোধে জড়ায়। এক পর্যায়ে তিনি প্রভাবশালীদের সাথে হাত মেলান। ফলে একদিকে মিথ্যা মামলায় হাজত খাটছেন তার অসুস্থ্য বৃদ্ধ পিতাসহ পরিবারের ৩ জন। আর তাদের হুমকির কারণে তারা ২ ভাই আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। অন্যদিকে কেউ না থাকার সুবাদে প্রভাবশালী মহলটি দখল করে নিয়েছে তাদের বসতভিটাসহ প্রায় ১ একর জমি। ইতোমধ্যে ওই জমির চারপাশ করা হয়েছে কাটা তারের ঘেরাও। এ জন্য তিনি প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের পাশাপাশি মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্তসহ তাদের হয়রানীমূলক কর্মকান্ডে জড়ানোর সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই বৃদ্ধ ও দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ হাজতে থাকা ২ নারীর আইনজীবী রফিকুল ইসলাম আধার জানান, তাদের ঘটনাটি খুবই অমানবিক। তবে অসুস্থ্য, বৃদ্ধ ও মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অপরাধের অভিযোগ থাকার পরও তাদের জামিন বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কেবল মাদকের পরিমান বেশি থাকায় ওই আসামীদের জামিন মিলছে না নি¤œ আদালতে। এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও যাওয়া যাচ্ছে না ভার্চুয়াল শুনানীতে। ফলে তাদের ক্ষেত্রে যেন ‘বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।