Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোপালগঞ্জের তরুন সুজনের স্বপ্নের সমাধি

লিবিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২০, ৪:০৩ পিএম

পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাতে ৪ মাস আগে দালালের হাত ধরে লিবিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের তরুণ সুজন মৃধা (২০)। লিবিয়া পৌঁছানোর পর দালাল চক্র একটি শহরে তাঁকে আটক রেখে নির্যাতন শুরু করে। দালাল চক্র পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপনের টাকা দিতে রাজি হয় । এরই মধ্যে খবর বৃহস্পতিবার রাতে খবর অসে দালাল চক্র সুজনকে গুলি করে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে। আর এরই মধ্য দিয়ে এক তরুণের স্বপ্নের সমাধি হয়েছে। সুজন মৃধা ওই গ্রামের কাবুল মৃধার ছেলে।
গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন করা হয়। তাঁদেরই একজন এই সুজন মৃধা। একই ইউনিয়নের সুন্দরদি গ্রামে কালাম শেখের ছেলে ওমর শেখ গুলিবৃদ্ধ আহত অবস্থায় রয়েছে লিবিয়িাতে ।
সুজনের ছোট ভাই সুমন মৃধা (১৬) বলেন, পরিবারের বড় ছেলে সুজন। মা-বাবা ও চার ভাইবোনের এ সংসারের হাল ধরতেই সে লিবিয়া গিয়েছিলো । বিদেশে গিয়ে অনেক টাকা আয় করতে পারবে। ভালো থাকবে , ভালো কাজ করতে পারবে এ আশায় সে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চার লাখ টাকার নিয়ে দালাল চক্র তাঁকে লিবিয়া পাঠায়।
চলতি বছরের গত ২৭ জানুয়ারি লিবিয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে সুজন মৃধা । সেখানে যাওয়ার পর থেকে দালাল চক্র তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে শুরু করে। পরে তাঁকে আটকে রেখে ১৬ মে ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। আব্বু টাকা দিতে রাজি হয়েছিলো , তারপরও ওরা আমার ভাইকে মেরে ফেললো ‘আমরা এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাইয়ের লাশ কবে দেশে আসবে, তাও জানি না ।
সুজনের বাবা কাবুল মৃধা বলেন, আমাদের পাশের গ্রামের রব মোড়লের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকায় লিবিয়িায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। পরে রব মোড়ল মাদারীপুরের রাজৈর থানার শ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাস এর মাধ্যমে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায়।
তিনি আরো বলেন, এ মাসের ১৬ তারিখে ছেলে একটা অডিও রেকডিং পাঠায় সেখানে ছেলের আকুতি “ আব্বু আমাকে বাচাঁও , আমাকে মেরে ফেলবে” । এরপর মুঠোফেনে দালাল চক্র ১০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে । আমার বাজানকে বাঁচাতে আমি টাকা দিতে রাজি হই। আমি তাদের বলেছিলাম আমার ৭.৫০ শতক জমি আছে সেটা বিক্রি করে টাকা দেব। তারা আমাকে ব্যাংক একাউন্ট দিয়েছে । আমি বলেছিলাম আমার বাজানের কোন ক্ষতি করোনা । জুন মাসের ১-২ তারিখে টাকা দিতে চেয়েছি । কিন্তু তার আগেই আমার বাজানকে তারা মেরে আমার বুকটা খালি করে দিলো । আমার বাজান আমাকে কামাই করে খাওয়াতে চাইছিলো। বাজানের কামাই আমরা খাতি পারলাম না। টিভি, ইন্টার নেটে জানতি পারলাম আমার বাজানরে গুলি করে মাইরে ফেলছে ।
পরিবার সূত্রে জানা যায় , সুজন মৃধা ছিলেন চার ভাইবোনের মধ্যে বড়। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন মুষড়ে পড়েছেন। তাঁদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।
অপরদিকে গোহালা ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাসিন্দা কালাম শেখ জানান, তাঁর ছেলে ওমর শেখ (২২) গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে লিয়িার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছ্নে। পরিবারে একটু স্বচ্ছলতার জন্য ছেলেকে তিনি ৪ লক্ষ টাকা দিয়ে একই গ্রামের দালাল লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে ছেলেকে লিবিয়া পাঠান ।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিমা আলি জানান, তিনি বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে শুনেছেন। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। আমরা দালাল চক্র ধরতে চেষ্টা করছি ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ