পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
# করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ হবে জুন
# পরীক্ষা দিনে ২০ হাজার করার তাগিদ
# বাস্তব চিত্র আসছে না
# দায়সারা সেবা দিচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল
# কৌশলপত্র তৈরি শেষ না হলেও সবকিছুই খুলে দেওয়া হচ্ছে
# সরকার উল্টো পথে হাঁটছে, মানা হচ্ছে না বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি-প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম
# স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
দেশে ভয়াবহতা ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুতে আগের দিনের রেকর্ড ভাঙ্গছে। ঈদের সময় লাখো মানুষের ঢাকা থেকে গ্রামে যাওয়ার ভীড় এবং এখন ফেরার ভীড় তাতে সংক্রমণ প্রবল আকার নিতে চলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর’র প্রাথমিক প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, জুনের প্রথম সপ্তাহে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার কমে আসার কথা ছিল। কিন্তু একের পর এক ভুলে সংক্রমণ তো কমেইনি বরং ঊর্ধ্বমুখী। এর মধ্যেই আজ শনিবারের পর দেশে সাধারণ ছুটি আর বাড়ছে না। এ ঘোষণায় স্বাভাবিকভাবেই আগামীকাল রোববার ৩১ মে থেকে দেশের চিত্র আগের মতোই হযে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে থাকা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কৌশলপত্র বা এক্সিট প্ল্যান তৈরি শেষ না হলেও প্রায় সবকিছুই খুলে দেওয়া হচ্ছে মত সংশ্লিষ্টদের। যা দেশে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাস সংক্রমিতদের সংখ্যা এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। যদিও চিকিৎসা সেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার বিকল্প দেখছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিকিৎসা সেবায় বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযোজ্য বিধি-বিধান সঠিকভাবে প্রয়োগ না করে শিথিল করা হলে রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে এমনিতেই প্রতিদিন করোনা রোগী যেভাবে বাড়ছে তাতে নমুনা পরীক্ষা বাড়িয়ে ২০ হাজার করার পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলো যাতে দায়সারাভাবে কাজ না করে সেদিকে সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন। তাদের মতে, দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আরও কাজে লাগাতে হবে। শুধু ব্যবসার চিন্তা করেই নয়; দুর্যোগের সময় মানুষকে সেবার মানষিকতা নিয়ে তাদেরকে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের করা ভবিষ্যৎ প্রক্ষেপণের (প্রজেকশন বা পূর্বাভাস) তথ্য বলছে, ৩১ মে পর্যন্ত ৪৮ থেকে ৫০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। মারা যেতে পারেন ৮০০ থেকে এক হাজার মানুষ। এ পর্যন্ত এই পূর্বাভাসের কাছাকাছি দেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি। ইতমেধ্যে শনাক্তের সংখ্যা ৪৩ হাজার ছুঁই ছুঁই। গতকালও সর্বোচ্চ শনাক্ত ২৫২৯ জন। মৃত্যু আরও ২৩ জনসহ ৫৮২ জনে পৌঁছেছে। তাই শারীরিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
বর্তমানে যেভাবে করোনার ভয়াবহতা বাড়ছে তাতে টেস্ট বাড়ানোর বিকল্প দেখছেন না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. মো. নজরুল ইসলাম। জাতীয় পরামর্শক কমিটির এই সদস্য ইনকিলাবকে বলেন, সরকারকে ইতোমধ্যে পরামর্শক কমিটি করোনার পরীক্ষা বাড়িয়ে ২০ হাজার করার কথা সুপারিশ করেছে। না হয় দেশের প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে না। এক্ষেত্রে আরও ল্যাব, জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি পরীক্ষার ক্ষেত্রটি একটি সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এতোদিন তাড়াহুড়ো করে পরীক্ষা করানো হতো বলে তিনি উল্লেখ করেন। যা পরিবর্তনের জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সাধারণ ছুটি না বাড়ানোর বিষয়ে এই ভাইরোলজিস্ট বলেন, সরকার উল্টো দিকে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশে রোগী কমার পর লকডাউন উঠিয়েছে। আর আমাদের দেশে যখন রোগী বাড়ছে তখনই সবকিছু স্বাভাবিক করার কথা ভাবা হলো। বৈজ্ঞানিক কোন পদ্ধতি মানা হচ্ছে না। এর আগেও গার্মেন্টস, হাট-বাজার ও মসজিদ খুলে দেওয়া এবং মানুষকে স্থানান্তরের সুযোগ দেওয়ার খেসারত এখন আমাদের দিতে হচ্ছে। আর এখন অফিস- আদালত স্বাভাবিক করার চিন্তার ভয়াবহতা আগামী ১০ জনু থেকে দেখবো। বর্তমান ভয়াবহতায় চিকিৎসা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে কাজে লাগানোর কথা বলেন। তবে সেটা যেন এ রকম না হয় যে, লোক দেখানো জাতীয় দায়িত্ব নিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করা। উদাহরণ হিসেবে ইউনাইটেড হাসপাতালের মতো দায়সারাভাবে কাজ করা না হয় সেদিকে নজড় দেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ভালো রোগীও ছিল। যারা বের হতে পারতো। কিন্তু ফায়ার এক্সিট বা বের হওয়ার দরজা ছিল না বলে আগুনে পুড়ে মরতে হয়েছে। পরিদর্শন যারা করেছে তারা কেউই বিষয়টি বলেনি। ওরা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।
এদিকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ-অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা, মালিকদের প্রতিশ্রুতির পরেও এখনো চিকিৎসার বেহাল চিত্র বদলায়নি। অনেক রোগী অভিযোগ করেছেন, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ থাকলেই বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও অন্য রোগের চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি জাতীয় দায়িত্ব নিয়ে মানবতার ডাকে এগিয়ে আসা আনোয়ার খান মডার্ন, রিজেন্ট, ইউনাইটেডসহ একাধিক বেসরকারি মেডিকেলের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা দায়সারাভাবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি এক রোগী জানিয়েছেন, ওখানে আইসিইউ বেডেও অক্সিজেন ব্যবস্থা কাজ করে না। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে ভুল তথ্য দেয়ায় অক্সিজেন খুলে ফেলায় ইতোমধ্যে সেখানে তিনজন রোগী মারা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সব হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশকে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে নির্দেশ না মানলে আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান ইনকিলাবকে বলেন, প্রথমে দেখবো সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কারা এটিতে রাজি নয়। সেই তালিকা করে সরকার অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোন ধরণের অবহেলার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে শিগগিরই রাজধানীর আরও একাধিক বেসরকারি মেডিকেলকে করোনার জন্য বিশেষায়িত করা হবে। এছাড়া সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতালে সব ধরণের রোগীর সেবা চালু হলে রোগী বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করেন হাবিবুর রহমান খান।
এদিকে গত বৃহষ্পতিবার জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভায় করোনার পরীক্ষা বাড়ানোর বিষয়ে সবাই একমত পোষন করেছেন। এই সুপারিশ আজ শনিবার সরকারকে পাঠানো হবে।
পরামর্শক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত সুপারিশে বলা হয়, কোভিড-১৯ একটি সংক্রামক রোগ, যা হাঁচি-কাশি ও সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। জনসমাগম এ রোগের বিস্তারের জন্য সহায়ক। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা এই রোগ সংক্রমণের হার সুনির্দিষ্টভাবে না কমার আগে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চালু করলে রোগের হার বাড়ার আশঙ্কা থাকে। সুপারিশে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড-১৯ রোগে হাইড্রোক্সি-ক্লোরোকুইন নামক ওষুধ ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি কোভিড-১৯ রোগের চিকিৎসার গাইডলাইনে এ ওষুধ না রাখার পরামর্শ দিচ্ছে। আইভারমেকটিন, কনাভালোসেন্ট, প্লাজমা ও অন্যান্য অননুমোদিত ওষুধ কেবলমাত্র সুনির্দিষ্টভাবে অনুমোদিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাইরে ব্যবহার না করার সুপারিশ করছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জুন মাস রীতিমতো চিন্তার কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ইতোমধ্যে সতর্কতা দিয়েছে, যে সব দেশ লকডাউন তুলবে তাদের সামনে করোনা ভয়াবহ আকার নিয়েই হাজির হবে। আর তাই দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলতে থাকবে বলে ধারণা করছে আইইডিসিআর। তারপর ধীরে ধীরে সংক্রমণের হার কমার সম্ভাবনা রয়েছে। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ নামতে পারে সহনীয় পর্যায়ে। তবে জাতীয় পরামর্শক কমিটি বলছে, সংক্রমণের শীর্ষবিন্দুতে এখনও পৌঁছেনি দেশ। তাই জুনের প্রথম দুই-তিন সপ্তাহ কড়াকড়িভাবে বিধি-নিষেধ নিশ্চিত করা জরুরি।
আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, প্রথমত সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখীর এই সময়ে সবকিছু খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি আরও বাড়বে। আরও সংক্রমণের আশঙ্কা আছে। জরুরি প্রয়োজনের পরিসর আরও বাড়ানো যেত। এখন সরকার আর্থসামাজিক ও প্রশাসনিক কারণে খুলছে কি না, সেটি বলা যাচ্ছে না। তবে এখন যেটা করতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, সেটি কঠোরভাবে দেখতে হবে।
আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, হঠাৎ করে বলা হলো অফিস, গার্মেন্টস খুলে দেয়া হবে সবাই ঢাকা চলে আসো। তখন একদল লোক ঢাকায় চলে আসলো এবং পরদিন বেতন দিয়ে বলা হলো তোমরা বাড়ি চলে যাও। এভাবেই সারাদেশে ছড়িয়েছে করোনা। এরপর মার্কেট খুলে দিয়ে আরও ঝুঁকি বাড়ানো হলো। আর বর্তমান ঈদ কেন্দ্রিক যা হলো তাতো বলার অপেক্ষা রাখেনা আমরা কোন ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছি।
জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, একটি ফেরির মধ্যে গাদাগাদি করে লোকজন বাড়ি গেল। এদের মধ্যে অনেকে উপসর্গ ছাড়াই কোভিড পজিটিভ ছিল, যারা গ্রামে গিয়ে সবার সাথে মিশেছে। এর ফলে এটি খুব দ্রুতই গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরোলজিস্ট প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, আক্রান্তের সংখ্যা কেবল এই ধারণাই দিচ্ছে যে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
উল্লেখ্য, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে টানা ছেষট্টি দিনের সাধারণ ছুটি শেষ হচ্ছে আজ ৩০ মে। পরদিন রোববার খুলছে অফিস-আদালত। স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা। বর্তমান করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে যা চিন্তায় ফেলেছে বিশেষজ্ঞদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।