Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাঝারী বর্ষণেও বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাট পানির তলায়

পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০২০, ১২:৩৮ পিএম

মাঝারী থেকে ভারি বর্ষনেও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি বরিশাল মহানগরীতে। ফলে ঘন্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে অনেক বাড়িঘর সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পানির তলায় চলে যাচ্ছে। চরম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হচ্ছে এ নগরীতে। বার বার একই বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তা থেকে উত্তরনে কোন কর্ম পরিকল্পনা নেই নগর ভবনের দায়িত্বশীলদের। এমনকি অত্যন্ত স্পর্ষকাতর এ সেবামুলক কাজে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা ও দক্ষতা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নগরবাশীর মনে।
গত ১০ নভেম্বর ‘বুলবুল’এ ভর করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে দেশের সর্বাধীক প্রায় ২৬১ মিলিমিটার ও গত ২৭মে সাগর থেকে উঠে আসা মেঘমালার নিয়ে আসা বর্ষনে প্রায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ এলাকাই পানির তলায় চলে যায়। অথচ বুলবুল-এর ভর করে সর্বাধীক বৃষ্টিপাতে নগরী প্লাবিত হবার বিষয়টি মেনে নেয়া গেলেও গত ২৭মে সকালে প্রায় ৩ ঘন্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে নগরী সয়লাব হবার বিষয়টি অনেকের কাছেই গ্রহনযোগ্য বিবেচিত হয়নি। এর পছেনে নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বে অবহেলার পাশাপাশি অদক্ষতা ও উদাশিনতার অভিযোগও আছে নগরবাশীর।
নগরীর প্রানকেন্দ্র সদর রোডে পর্যন্ত মাঝারী বর্ষনে পানি আটকে যাচ্ছে। ফকিরবাড়ী রোড, বগুড়া রোড, গোরাচাঁদ দাশ রোড, নবগ্রাম রোডে পানি থৈ থৈ করে মাঝারি বর্ষনে। এসব সড়কের পাশেই পাকা ড্রেন রয়েছে। প্রতিটি ড্রেনের সাথেই নগরীর পাশে বহমান কির্তনখোলা নদীর সংযোগ থাকলেও তার বেশীরভাগ পথই অবরুদ্ধ। অথচ বাড়তি জনবলের ভারে নগরভবন এখনো নুহ্যমান। নগরীর নবগ্রাম রোডের পাশে ৮ফুট প্রশস্ত পাকা ছাউনি যুক্ত ড্রেন থাকলেও সামানা বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট সয়লাব হচ্ছে । ভারি বর্ষনে রাস্তা পেরিয়ে সাধারন মানুষের ভাড়ি ঘরে ড্রেনের পানি প্রবেস করছে। এসময় রাস্তায় জাল ফেলে মাছও শিকার করেন অনেকে। এপরেও বোধদয় হয়না নগর ভবনের কনজার্ভেন্সি শাখার।
এ নগরীর সোয়া ৩শ কিলোমিটারের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ২শ কিলোমিটার পাকা ড্রেন নির্মিত হয়েছে। যা পরিস্কার রাখার মাধ্যমে পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা নির্বিঘœ রাখা আগের চেয়ে যথেষ্ঠ সহজতর হলেও এনগরী বৃষ্টির পানিতে ক্রমশ অবরুদ্ধ হচ্ছে।
এমনকি নগরীর অনেক সরকারী পুকুর ও জলাশয়গুলো পর্যন্ত দিন দিন অবরুদ্ধ হয়ে তার পানি পঁচে দূর্গন্ধে এনগরীর পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করছে। মাস কয়েক আগে খোদ জেলা জজ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের বাড়ীর সামনের লেকটির পানি পঁচে গোটা এলাকার পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ফকিরবাড়ী রোডের রাখাল বাবুর পুকরটি প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধন করা হলেও তার পানি ভাল থাকছেনা।
নগরীর সরকারী হাতেম আলী কলেজ লেকটির পানিও প্রায়সই দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নগরীর অত্যন্ত জনবহুল ও ব্যস্ততম ঐ এলাকার সাধারন মানুষ সহ পাশ^বর্তি মার্কাজ মসজিদের মুসুল্লীদের ওজুÑগোসলের একমাত্র অবলম্বন ঐ লেকটি। কিন্তু সেখানে বিপুল পরিমান প্লাস্টিক দ্রব্য সহ পলিথিন ভাসতে দেখা যায়। লেকটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে রাজকুমার ঘোষ রোডে বিপুল সংখ্যক পথ খাবারের দোকানের বেশীরভাগ বর্জ্যই রাতের আঁধারে লেকটিতে ফেলা হয় । এমনকি লেকটির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে যে ড্রেনটি রয়েছে, সেটির মধ্যেও পথ খাবারের দোকানের বর্জ্য ফেলে ভড়াট করে ফেলা হচ্ছে।
ফলে পাশ^বর্তি খালের সাথে লেকটির পানি চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে এখানের পানি দুষন আরো তড়ান্বিত হচ্ছে। সম্প্রতি লেকটির পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিমপাড়ে সিটি করপোরেশনের রাস্তা সহ বাড়িঘরগুলো যথেষ্ঠ ঝুকিতে পড়েছে। গত বুধবারের বর্ষনের পানি আটকে পশ্চিম পাড়ের বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুকিতে রয়েছে।
অথচ প্রায় দ্ ুকোটি টাকা ব্যায়ে লেকটির তিন ধারে ওয়াকওয়ে এবং দক্ষিণ পাড়ে মিনি পার্ক নির্মান করা হয়েছে বিগত দুটি নগর পরিষদের সময়ে। বর্তমান নগর পরিষদও লেকটির উত্তরÑপশ্চিম কোন নতুন করে আরেকটি মিনি পার্ক নির্মানের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু যথাযথ রক্ষণাবেক্ষন ও পরিচ্ছন্নতার অভাবে জনস্বার্থে করা এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড নগরবাশীর কোন কাজে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাশীর পক্ষ থেকে নগর ভবনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কনজভের্’ন্সি শাখার প্রধান-এর সাথে একাধীকবার যোগাযোগ করা হলেও তেমন কোন ফল হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ