বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঘূর্ণিঝড় আমফানের কারণে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে খুলনা ও সাতক্ষীরায় উপকূলীয় লাখো মানুষের। ঈদ আনন্দের ছিটেফোঁটাও ছিল না আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকায়। ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই অধিকাংশ উপকূলীয় মানুষের। শত শত পরিবারের মানুষ না খেয়ে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সূত্রমতে, ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাতে উপকূলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে চারিদিকে শুধু থৈ থৈ করছে। এর মধ্যে উপকুলবাসীর ঈদের দিনটি কেটেছে ভিন্ন রকম। দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই নামাজ শেষে সেমাই খেয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ তৈরি করতে নামেন উপকুলবাসী। ঈদের দিন বাঁধ মেরামতে সময় পালন করছেন আইলা ও আমফানে ক্ষতবিক্ষত হওয়া উপকুলবাসী।
কয়রার বাসিন্দা এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার অন্যরকম এক ঈদ উদযাপন করছি আমরা। স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ নির্মাণে এসে জোয়ারের পানি যখন হাঁটুপানি পর্যন্ত পৌঁছায় তখনই শুরু হয় ঈদের নামাজ। প্রায় ছয় হাজার মানুষ নামাজে অংশ নেন।
এদিকে করোনায় নেই উপার্জন, তার উপর আমফানের প্রভাবে আশ্রয়হীন খুলনার উপকূলের লাখো মানুষ। তাইতো ম্লান তাদের এবারের ঈদ আনন্দ। খুলনা জেলা প্রশাসক জানান, উপকূলের মানুষের পুর্নবাসনের চেষ্টা চলছে।
উপকূলবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই অধিকাংশ উপকূলীয় মানুষের। ঈদের দিনে সবাইকে থাকতে হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। ঈদকে ঘিরে উপকূলীয় পরিবারে ছিলনা কোনো আমেজ। ঈদের দিনটিতে আনন্দ তো দূরের কথা ভালো-মন্দ খাবারও জুটেনি অনেকের। ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়ায় উপকূলের অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ভালো থাকা বাঁধের ওপর। ঝড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে অসংখ্য বাড়িঘর, গাছপালা। তলিয়ে গেছে অনেক চিংড়ির ঘের। মৌসুমী সবজির ক্ষেত ভেসে গেছে। এছাড়াও উপকূলের অনেক স্থানেই লোকালয়ে পানি ঢুকে পরায় পানিবন্দি আছে গ্রামবাসী।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর বাসিন্দা আবু সাঈদ খান বলেন, দেশজুড়ে সবাই যখন ঈদের আনন্দে মত্ত, উপকূলের মানুষ তখন নিজের বাস্তুভিটা রক্ষায় ব্যস্ত। তাদের কারও ঈদের আনন্দ ছিল না, ছিল না মুখে হাসি।
সরকারি তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় আমফানেখুলনায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, মহেশ্বরীপুর, কয়রা সদর ও মহারাজপুর ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ দুর্গত হয়েছেন। কয়রার ২৪টি স্থানে ভেড়ীবাঁধ ভাঙনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে দুর্গত অবস্থায় দিনযাপন করছে। এছাড়া পাইকগাছার ১০ ও বটিয়াঘাটার ৭টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনার নয়টি উপজেলায় ৮০ সহ¯্রাধিক পরিবার আমফানে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানে আমার কয়রায় সবথেকে বেশী ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত অনেক স্থানেই বাঁধ সংস্কার করেছি। তবে প্রতিবার জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আমরা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করছি সকল ভেড়ীবাঁধ অতি দ্রুত সম্ভব সংস্কার করার। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫ মে সর্বনাশী আইলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় দক্ষিণের উপকূলীয় জনপদ। গত এক দশক ধরে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সুপার সাইক্লোন আমফানের আঘাতে ফের বাঁধ ভেঙে নোনা জলে তলিয়ে যায় সমগ্র দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকা। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ অঞ্চলের অসহায়, দুস্থ ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা মানুষেরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।