পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বয়স্ক ও শিশুদের জন্য বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করার ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অক্ষম ও নানান ব্যাধিতে ভোগা ব্যক্তিদের। তবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন বয়স্করা। নাগালের মধ্যে বুথ না থাকায় উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা করাতে পারছেন না প্রসূতি, প্রতিবন্ধী ও নানা রোগে আক্রান্তরা। এমনকি রাজধানীর যে বেসরকারি ১৪ টি হাসপাতালকে করোনার নমুনা পরীক্ষার অনুমিত দেওয়া হয়েছে। সেখানেও মিলছে না পরীক্ষা। নমুনা পরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে নির্ধারিত সাড়ে ৩ হাজার টাকা জমা দিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগের কথা বলা হলেও ৬ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আবার অনেক যায়গায় টাকা দিয়েও মিলছে না। এছাড়াও পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোকে সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত না করতে পারায় যারাই পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন, তারাই ঝুঁকিতে পড়ছেন বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে ঈদ তাই এই ঝুঁকি আরও বাড়বে।
বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৮-৯টি দল বাসা থেকে একদিনে সর্বোচ্চ আড়াইশ’ নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন। বর্তমানে ১৬২৬৩, ৩৩৩ এবং আইইডিসিআর এর হটলাইনের মাধ্যমে আসা কল যাচাই বাছাই করে বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমনের অন্যতম ঝুঁকিতে আছেন বয়স্করা। তাই বয়স্কদের কোয়ারেন্টাইনকালীন পরিবারকে বাড়তি সময় দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তাদেরকে এই সময়ে বই পড়তে দেওয়া ও বিশেষ মনযোগ দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। বয়স্কদের মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখার কথাও বলছেন মনোবিদরা। বিশেষ করে যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস বা দীর্ঘ মেয়াদি রোগে ভুগছেন তাদের থাকতে হবে সতর্ক।
এদিকে, জনবল সঙ্কটে বাড়ি বাড়ি যেয়ে বেশি নমুনা সংগ্রহ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ ধাপে শুধু চট্টগ্রামেই আক্রান্ত শতকরা ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আর রাজধানীতে ঘরে ঘরে দেখা দিতে শুরু করেছে কোভিড রোগী। এই বাস্তবতায় সবচেয়ে বিপাকে ষাটোর্ধ্ব ও অন্য রোগে আক্রান্তরা। নাগালের মধ্যে বুথ না থাকায় অনেকেই পরীক্ষা করাতে পারছেন না। আর পরীক্ষাকেন্দ্র সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত না হওয়ায় রয়েছে আতঙ্কও।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতলের মেডিসিন ও নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আহমেদ আবু সালেহ বলেন, কাউকে এই পরিস্থিতিতে এনে তাকে আরো ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়া। কারণ সেখানে আক্রান্ত যে কেউ থাকতে পারে।
সূত্র মতে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা প্রায় প্রতিটি দেশ ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। কারণ, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে বয়স্কদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
বয়ষ্কদের বাসায় নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন কেন?
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি শরীরে হার্টের অসুখ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারসহ নানা রোগ বাসা বাঁধে। এ কারণে শুধু করোনাভাইরাস নয়, যে কোনো ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন বয়স্করা।
তাদের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে তার সঙ্গে লড়াই করে উঠতে পারে না রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো। এ সময় শরীরে এক ধরনের আলোড়ন তৈরি হয়; যা সংক্রমণের সঙ্গে লড়াইয়ের সময় অতিরিক্ত পরিমাণে কেমিক্যাল উৎপাদন করে। এমন লড়াই চালাতে গিয়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যায়। যে কারণে তা বড় ধরনের ক্ষতির শঙ্কা তৈরি করে।
কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি প্রধান অংশ হল শ্বেতরক্তকণিকা। এগুলো মানব শরীরের অস্থিমজ্জায় অপরিণত কোষ হিসেবে উৎপাদিত হয়। পরে তা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ভ্রমণ করে রোগ প্রতিরোধকারী সেনায় পরিণত হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের অস্থিমজ্জায় এই শ্বেতকোষগুলোর উৎপাদন কমে আসে। ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
ইতালিতে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশটিতে করোনায় মৃত্যুহার বিশ্বে সর্বোচ্চ। দেশটিতে এই ভাইরাসে যারা মারা গেছেন, তাদের গড় বয়স ৭৮ বছর। করোনাভাইরারে মৃত্যুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন হৃদযন্ত্রের রোগে আক্রান্তরা। এখন পর্যন্ত করোনায় তাদের মৃত্যুর হার সাড়ে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে ডায়াবেটিসের মতো যারা অন্যান্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত তাদের মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে ডায়াবেটিস। যে কারণে কোনো ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে সেটির সঙ্গে লড়াই চালাতে পারেন না ডায়াবেটিস আক্রান্তরা। ফুসফুসের সমস্যা কিংবা অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা তৈরি করে করোনাভাইরাস। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ৬ এবং ক্যান্সার রোগীদের মৃত্যুর হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বলা হচ্ছে, ৮০ বছরের বেশি বয়সী যারা আগে থেকেই রোগে আক্রান্ত, তারা এই ভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। ৮০ বছরের ঊর্ধ্বের বয়সীরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় ১৫ শতাংশ। ৫০-এর নিচে যারা করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের মৃত্যুর হার মাত্র ০ দশমিক ২ থেকে ০ দশমিক ৪ শতাংশ।
৫০-৫৯ বছর বয়সীদের প্রাণহানির হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ। এ ছাড়া ৬০-৬৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর এই হার ৩ দশমিক ৬ এবং ৭০-৭৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর হার ৮ শতাংশ। এ ছাড়া যারা আগে থেকে গুরুতর রোগে ভুগছেন তাদের তুলনায় কিছুটা অসুস্থ মানুষের মৃত্যুর হারে বেশ পার্থক্য রয়েছে।
নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজে সমন্বয়ের জন্য অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা (সাবেক পরিচালক এমআইএস) সমীর কান্তি সরকারকে কাজে নিয়োজিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের ৮টি ইউনিট বয়স্ক, শিশুসহ অক্ষমদের জন্য বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে। প্রতিটি ইউনিট দৈনিক ২৫ থেকে ৩০ টি নমুনা সংগ্রহ করছে। সবমিলিয়ে দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ টি নমুনা সংগ্রহ করছে। জনবল সঙ্কট আছে কিনা জানতে চাইলে সমীর কান্তি সরকার বলেন, জনবল সঙ্কটের চেয়ে সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হবে যানজট। কারণ লকডাউন শিথীল হওয়ায় গণপরিবহন না চললেও এখনই রাজধানীর বিভিন্নস্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যা নুমনা সংগ্রহে বিঘœতা সৃষ্টি করছে। আর এ জন্য ঈদের পর লকডাউন খুললে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম খুবই কষ্টসাধ্য হবে।
ঈদ কেন্দ্রিক বয়স্কদের নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটাতো বাধাগ্রস্ত হবেই। ঈদের আগে আজ রোববার ৩টি ইউনিট রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নুমনা সংগ্রহ করেছে। কাল ঈদের দিনও ৩টি ইউনিট থাকবে। আর ঈদের পরের দিন মঙ্গলবার ২টি ইউনিট নমুনা সংগ্রহের কাজ করবে। ঈদ শেষে আবার ৮টি ইউনিটই স্বাভাবিকভাবে নুমনা সংগ্রহ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।