পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও বেতন-বোনাস নিয়ে বিপাকে আছেন। কোনো কোনো হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। আবার কেউ কেউ ঈদ বোনাস দেয়নি। কেউ বা বেতনের ৬০ শতাংশ দিচ্ছে। অথচ রোগীদের সেবা প্রদান করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এ পর্যন্ত তিনজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে নার্সরা আক্রান্ত হলেও তাদের মধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকেও হাজির হচ্ছেন অনেকে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) মধ্যেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। ঝুঁকি বাড়ছে প্রতিনিয়তই। তবে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে তারা সাধারণ ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যেতে চান। কারণ তারা মনে করছেন, বেঁচে থাকলে জীবনে ঈদ আসবে। কিন্তু এই সময়ে মানুষের যে দুর্ভোগ, নিজের পেশা ও কাজের প্রতি আনুগত্য ও আন্তরিকতা দেখানোর এটাই সুযোগ। আগে বাসায় থেকে কাজ করলেও এখন করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িত চিকিৎসক-নার্সরা বাসায় যেতে পারেন না। তারা টানা ১০ থেকে ১৪ দিন কাজ করে পরবর্তী ১৪ দিন নির্ধারিত হোটেল বা কোয়ারেন্টিন সেন্টারে আইসোলেশনে থাকেন। যাদের করোনা সংক্রমণ ধরা পরে তাদের আলদাভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। বাকিরা নির্ধারিত ওই সময়ের পর আবার কাজে যোগ দেন। এভাবেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) হিসাব অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত ৭৫৫ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫০৪ জন, ময়মনসিংহে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩৭ জন, খুলনায় ৩৭ জন, সিলেটে ২৪ জন, বরিশালে ১০ জন, রংপুরে ১০ জন, রাজশাহীতে ০১ জন। এবং অনান্য ৪৪ জন। দেড়শ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট আক্রান্ত হয়েছেন। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৬৪২ জন নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪৯৩ জন, ময়মনসিংহে ৫০ জন, সিলেটে ৩৩ জন, চট্টগ্রামে ১৬ জন, খুলনায় ১৩ জন, রংপুরে ১৩ জন, রাজশাহীতে ১০ জন, বরিশালে ৮ জন। বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী ৪৭ জন সিএইচসিপি করোনায় আক্রান্ত ও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।
সূত্র মতে, করোনার সময়েও ডাক্তার-নার্সদের চাকরিচ্যুত এবং যারা কাজ করছেন তাদের বেতন কম দিচ্ছে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতাল এবং আদদ্বীন হাসপাতাল ঢাকা ও যশোর। বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপিত মুবিন খানের প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারদের বোনাস দেয়া হয়নি। বরং এপ্রিলের বেতন ৬০ শতাংশ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে ডাক্তারদের মধ্য ক্ষোভ বিরাজ করছে। এছাড়াও রাজধানীসহ সারাদেশের বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যকর্মীদের চাকরিচ্যুতিসহ বেতন-বোনাস না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ল্যাবএইডের সিলেট শাখার বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা না দিয়ে চাকরিচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন-ভাতা না দিয়েই বিনা নোটিশে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
বিডিএফের চেয়ারম্যান ডা. মো. শাহেদ রাফি পাভেল বলেন, চিকিৎসকরাতো ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছে। তবে আশার কথা এখন আক্রান্তের হার কিছুটা কমে এসেছে। সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে নানা সমস্যার পাশাপাশি চিকিৎসকদের বেতন-বোনাস নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকরা বেতন ও বোনাস পেয়েছেন। তাদের সুযোগ সুবিধাও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের তুলনায় অনেক বেশি। করোনাকালীন বেসরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসক বেতন-বোনাস পাননি। অনেকে অর্ধেক বেতন পেয়েছেন। কিন্তু তারপরও চিকিৎসকরা কাজ করে যাচ্ছেন। এই ঈদেও কাজ করবেন। প্রতিটি চিকিৎসক চায় তার রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক হাসি মুখে। রোগীদের সুস্থ হবার মধ্য দিয়েই আমরা ঈদের খুশি উদযাপন করতে চাই।
একই কথা জানালেন সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ। জানালেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতো নার্সরাও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এরপরও তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আগামীতেও তারা তাদের সেবা অব্যাহত রাখবেন।
বাংলাদেশ সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে ও নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৪৭ জন সিএইচসিপি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন দুই জন। সারাদেশে লকডাউনের ফলে গণপরিবহন বন্ধ আছে। কয়েক কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে নারী সিএইচসিপিরা কর্মস্থলে এসে সেবা দিচ্ছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনাতে সিএইচসিপিরা আদৌ পড়বে কি না তা আমরা জানি না। কিন্তু বৈশ্বিক এই মহামারীতে কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা আমরা সিএইচসিপিরা অব্যাহত রাখতে চাই। আশা করি আমাদের নিরাপত্তা এবং দাবিগুলোও প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিবেচনা করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।