পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষও অনেকটা ঘরবন্দি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গত ১৮ মার্চ থেকে সারাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও রক্ষা নেই শিক্ষার্থী অভিভাবকদের। করোনার এই সঙ্কটকালে বেতন-ফি আদায়ে চাপ প্রয়োগ না করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও তা মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।
টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি প্রদানের জন্য প্রতিনিয়তই অভিভাবকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান ফোন করে তা পরিশোধের জন্য চাপও দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বকেয়া রাখলে পরবর্তীতে জরিমানাও গুণতে হবে বলে করা হচ্ছে সতকর্তা। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে টিউশন ফি আদায় করতে না পারায় তারা অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন প্রদান করতে পারছেন না। তবে রাজধানীর কয়েকটি নামিদামি ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানও এই অজুহাতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছে বেতন পরিশোধের নোটিশ দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীসহ সারাদেশেই বিভিন্ন স্কুল থেকে মাসিক বেতন, সেশন ও উন্নয়ন ফি দ্রæত পরিশোধ করার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে। অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোনে ফি পরিশোধ করার জন্য পাঠানো হচ্ছে এসএমএস। এতে আয়-রোজগার থেমে যাওয়া, কমে যাওয়া কিংবা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন। বেতন ও অন্য ফি পরিশোধ না করলে ভর্তি বাতিল বা জরিমানা আদায়ের হুমকি দেয়া হচ্ছে। বেতন-ভাতা মওকুফের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন অভিভাবকরা।
এর মধ্যে রাজধানীর সাউথপয়েন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সবচেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করছে অবিভাবকদের ওপর। প্রতি এক দিন পর পর তারা এসএমএস পাঠিয়ে টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি পরিশোধের তাগাদা দিচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, আমার সন্তান সাউথ-পয়েন্ট স্কুলের মালিবাগ শাখার শিক্ষার্থী। গত কয়েকদিন ধরেই স্কুল থেকে টিউশন ফি দেওয়ার জন্য তার মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। এমনকি ফোন করেও টাকা চাওয়া হচ্ছে।
কেবল সাউথ-পয়েন্ট নয়, রাজধানীর প্রায় সবগুলো বেসরকারি বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নিয়ে একই অভিযোগ করছেন অভিভাবকরা। কখনো কখনো ‘হুমকি’ও দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তারা। একজন অভিভাবক অভিযোগ করে জানান, তার সন্তানকে ছুটি শেষে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি দুইমাস ধরে বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না।
বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন অভিভাবক বলেন, মার্চের টাকা আগেই আদায় হয়েছে। এপ্রিল মে দুই মাসই তো বন্ধ। তাহলে কেন স্কুলের বেতন দিতে হবে? কয়দিন পরপরই বিকাশ রকেটসহ যত মাধ্যম আছে সব মাধ্যমের নাম্বার মোবাইলের মেসেজ বক্সে পাঠিয়ে বলছে বেতন দেয়ার জন্য। কিন্তু বাচ্চার বাবাদেরই তো গত দুই মাস ধরে কাজ নেই। এখন আমরা এই টাকাটা কিভাবে দেবো।
শুধু এসবই নয়, রাজধানীর অন্যতম নামিদামী প্রতিষ্ঠানের একটি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই প্রতিষ্ঠানটি এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন মোবাইল ফোনে রকেট, ন্যাকসাস পে ইত্যাদিও মাধ্যমে আদায় শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, নানা কৌশলে ফি আদায়ে চাপ দেওয়া হচ্ছে। যেমন কলেজ শাখার পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের এসএমএস পাঠিয়ে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখনো দ্বাদশ শ্রেণি ‘প্রমোশন’ দেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘অটো প্রমোশন’ ছাড়া বিকল্প নেই। তাই বর্তমান মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করলে ‘অটো প্রমোশনের’ জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে।
একই অভিযোগ আরেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধেও। আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ এবং ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের বিরুদ্ধে প্রতিবছর ভর্তি বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ আসে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনেও চলে কানাঘুষা। প্রতিষ্ঠান দুটিই এমপিওভ‚ক্ত। কিন্তু মাত্র দুই মাসেও তারা নিজস্ব অর্থায়নে চলতে পারছে না। আইডিয়ালের মতো ভিকারুননিসা স্কুলও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি চেয়ে এসএমএস দিচ্ছে।
শিক্ষকদের বেতনসঙ্কটের কথা উল্লেখ করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড প্রিন্সিপাল ফওজিয়া বলেন, এত দিন তারা বেতন নেননি। কিন্তু এখন যেকোনো সময় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) চাইবেন। এ ছাড়া রাজধানীর মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান ফি আদায় করছে।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের কাছে টিউশন ফি চাওয়া অমানবিক। কারণ অনেকেই লকডাউনের কারণে বেকার হয়ে ঘরে বসে আছেন। দোকান-পাট বন্ধ হয়ে গেছে। অফিস বন্ধ, আয় বন্ধ। এই অবস্থায় স্কুলের বেতন দেবে কিভাবে?
ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বলেন, টিউশন ফি আদায়ে কোনো প্রকারের জোর, জবর-দস্তি করা যাবে না। চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ব্যবসার জায়গা নয়, এটা মনে রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিকে উভয়সংকট বলে উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সময়ে বেশি মানবিক হতে বলছেন। শিক্ষার্থী ফি আদায়ে চাপ দেওয়া যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।